শনিবার । ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১২ অপরাহ্ন
শেয়ার

প্রবাসীর স্ত্রীর কষ্ট ও বাস্তবতা: স্বপ্নের আড়ালে লুকানো এক নীরব সংগ্রাম


probasi

প্রবাসীর স্ত্রীর কষ্ট

পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে স্বামী বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। দূর দেশের সূর্যোদয়ের সঙ্গে শুরু হয় তার শ্রমের গল্প, আর দেশে রয়ে যাওয়া স্ত্রীর জীবনে নেমে আসে অপেক্ষা, একাকিত্ব আর নিঃশব্দ সংগ্রাম। প্রবাসীর পাঠানো টাকায় যেমন সংসারে আলো জ্বলে, তেমনি তার অনুপস্থিতিতে স্ত্রীর জীবনে জেগে থাকে অদৃশ্য অন্ধকার।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স বড় অবদান রাখে। প্রবাসীরা বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান। কিন্তু এই অর্থের পেছনে আছে হাজারো পরিবারের ত্যাগের গল্প, বিশেষ করে সেই নারীদের, যারা স্বামীহীন সংসার সামলান একা হাতে।

স্বামী প্রবাসে গেলে প্রথমে হয়তো আর্থিক স্বস্তি আসে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানসিক চাপ। একা হাতে সন্তান লালন, বয়স্ক শ্বশুর-শাশুড়ির দেখাশোনা, সংসারের সিদ্ধান্ত—সব দায়িত্ব তার কাঁধে। অনেকে বলেন, “টাকায় সব কেনা যায়, কিন্তু সঙ্গ পাওয়া যায় না।” রাতে শিশুরা বাবাকে খোঁজে, মা তখন চোখের পানি লুকিয়ে বলে—“বাবা কাজ করছে, তাই আসতে পারছে না।”

একা থাকার কারণে অনেক নারী সামাজিক চাপের মুখেও পড়েন। অযথা সন্দেহ, গুজব বা কটূ মন্তব্য তাদের জীবনে বিষ ঢালে। সমাজ অনেক সময় তাদের বোঝার চেষ্টা করে না; বরং একাকিত্বকে করে তোলে আরও ভারী। তবুও এই নারীরা নীরবে সংগ্রাম করে যান—কারণ তাদের শক্তি পরিবার, তাদের প্রেরণা ভালোবাসা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবাসীর স্ত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। তাদের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে কাউন্সেলিং, সামাজিক সহায়তা ও নারীর ক্ষমতায়নমূলক উদ্যোগ নেওয়া উচিত। কারণ, প্রবাসীর আয় যেমন দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখে, তেমনি তাদের স্ত্রীর ধৈর্য ও ত্যাগ সেই আয়কে অর্থবহ করে তোলে।

সবশেষে বলা যায়, প্রবাস জীবনের সাফল্যের পেছনে যে মুখগুলো অদৃশ্য থাকে, তাদের একটি হলো প্রবাসীর স্ত্রী। তিনি একাধারে মা, বাবা, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী এবং অপেক্ষার প্রতীক। তার জীবনের গল্প কেবল কষ্টের নয়—এটি ধৈর্য, ত্যাগ আর ভালোবাসার এক নীরব উদাহরণ।