Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বেকারত্বের ভয়ে ছাত্রত্ব ত্যাগে কোরিয়ান শিক্ষার্থীদের অনীহা!

পাস করে চাকুরি না পাওয়ার ভয়ে পড়াশুনা শেষ করছেন না কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। চাকুরি নিশ্চিত করে স্নাতক সম্পন্ন করার প্রবণতা দেশটিতে আশংকাজনক হারে বাড়ছে। কোরিয়ার প্রধান বিরোধী জোটের সাংসুদ আন মিন সকের দপ্তর থেকে দেয়া এক বার্তায় এমনটাই দাবী করা হয়েছে।

unemployment-grads-cartoonএ ধরনের শিক্ষার্থীরা কোরিয়ায় ‘এনজি (নো গ্রাজুয়েশন) গ্রুপ’ নামে পরিচিত। সাংসদের দেওয়া তথ্যমতে, ১০ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে এমন ২৬টি কোরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের এনজি স্টুডেন্টের সংখ্যা প্রায় পনেরো হাজার। চলতি বছরের মার্চের এই অংক ২০১১ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

chardike-ad

ঠিক কি কারনে এতো বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর পাস করতে অনীহা? সেটা জানতেই কোরিয়ান অনলাইন পোর্টাল ‘ক্যারিয়ার’ মুখোমুখি হয়েছিল চাকুরিপ্রার্থী ৪৬৩ জন কলেজপড়ুয়ার। এদের ৮০ শতাংশই জানিয়েছে, চাকুরি পেতে ব্যর্থ হয়েই তাঁরা পড়াশুনা স্থগিত রেখেছে।

দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে চাকুরিদাতাদের ‘ফ্রেশ’ গ্র্যাজুয়েট খোঁজার প্রবণতা। গু নামের ২৪ বছর বয়সী একজন চাকুরিপ্রার্থী যেমন বলছিলেন, “পড়াশুনা শেষ করে দীর্ঘদিন বসে থাকা প্রার্থীদের প্রতিষ্ঠানগুলো নিতে চায় না। চাকুরিদাতারা এদের অযোগ্য বলে মনে করে।”

গু পাস করে ফেলতে পারতো গত বছরের জুনেই। কিন্তু আরও কিছু প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জিত না হওয়ায় সে অদ্যবধি ছাত্রীই রয়ে গেছে, “আমার টোয়েক (টেস্ট অফ ইংলিশ ফর ইন্টারন্যাশনাল কম্যুনিকেশন) স্কোর সাড়ে নয়শ’র বেশী। গ্র্যাজুয়েট হতে ৭০০ নম্বরই যথেষ্ট।…কিন্তু চাকুরি না পাওয়া পর্যন্ত আমি স্টুডেন্টই থাকবো।”

কিম নামের ২৪ বছর বয়সী আরও একজন শিক্ষার্থী ইচ্ছে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সেমিস্টার বেশী নিচ্ছেন। এই তরুণীর যুক্তি, “বর্তমান বাজারে বলার মতো একটা চাকুরি পাওয়া তো আর সহজ কথা নয়। আমি চাইছি কোন একটা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবীশ হিসেবে ঢুকে স্থায়ী হয়ে যেতে।” কিম বলছেন, অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষানবীশ হিসেবে কেবল শিক্ষার্থীদেরকেই নিয়ে থাকে।

২৫ বছর বয়সী লী পাস করে যেন ‘পাপ’ করে বসেছেন! “তাড়াতাড়ি ছাত্রজীবন শেষ করে ফেলার জন্য এখন দুঃখই হয়। আজকাল শিক্ষার্থীরা চাকুরির মৌখিক পরীক্ষা, পেশাদারিত্ব প্রভৃতির উপর বিভিন্ন কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে যেটা আমি চাইলেও পাবো না।”

শিক্ষার্থীদের এহেন আচরণে চিন্তার ভাজ পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেতৃস্থানীয়দের কপালেও। একজন শিক্ষার্থী পাস করা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরী, ক্যান্টিন প্রভৃতি ব্যবহারসহ সব রকমের সুযোগসুবিধাই ভোগ করে থাকেন। একদিকে নতুন শিক্ষার্থীদের চাপ, অন্যদিকে নির্ধারিত সময় পেরিয়েও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী বের না হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে সংকট।

এমন প্রেক্ষাপটে কোরিয়ার শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় পাস করতে বিলম্ব করা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি সময়টুকুর জন্য অতিরিক্ত ফী আদায়ের চিন্তা করছে। “বিষয়টা অমানবিক মনে হতে পারে। কিন্তু আমাদেরকে তো অন্য শিক্ষার্থীদের দিকটাও দেখতে হবে।”, বলছিলেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।