Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অনুজ্জ্বল ভবিষ্যতে হতাশ দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণরা

korean students depressionপ্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেও বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ নিজেদের ভবিষ্যত্ নিয়ে উদ্বেগ ও হতাশায় রয়েছেন। বিপজ্জনক এ সামাজিক সমস্যাকে সংকুচিত প্রবৃদ্ধি ও কমে আসা ভোক্তা ব্যয়ের চেয়েও ভয়াবহ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

দেশের শ্রমবাজারে কঠিন প্রতিযোগিতার কারণে এখন দেশের বাইরে থেকেই শিক্ষাগ্রহণে মরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকরা। এ ‘শিক্ষাজ্বর’ বেশ ভালো ব্যবসা হয়ে উঠেছে এখানে। দক্ষিণ কোরিয়ায় অনেক মা আছেন, যারা ইংরেজি শেখার জন্য নিজেদের প্রাথমিক স্কুলগামী সন্তানদের নিয়ে দেশের বাইরে থাকছেন।

chardike-ad

আবার অনেক শিক্ষার্থীই মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রাম স্কুলগুলোয় পড়াশোনা করছে। মূলত হাইস্কুল বা ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন পরীক্ষায় পাস করানোর জন্য এ স্কুলে পড়ানো হয়, অনেকটা কোচিং সেন্টারের মতো। দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্রাম স্কুলে না যাওয়ার অর্থ এনট্রান্স পরীক্ষাগুলোয় প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়া।

পরীক্ষায় পাস করার জন্য এখানে ক্রাম স্কুল এতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, এ ধরনের স্কুলের আধিক্যের কারণে জায়গার দামও বেড়ে যাচ্ছে। সিউলের খাংনাম জেলার দেছি দোং অঞ্চলে আবাসনের দাম উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে, যার অন্যতম কারণ এসব স্কুল।

শিক্ষার জন্য এ দৌড়ের প্রধান লক্ষ্য ভালো চাকরি। কিন্তু দেখা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার্থীদের সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মতো প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করলেও চাকরির বাজারে কঠিনতর প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সাধারণত তাদের অভিভাবকদের এতটা তিক্ত অভিজ্ঞতার সামনে পড়তে হয়নি। এ কারণেই তরুণ কোরিয়ানরা এখন শিক্ষা ও কাজ দুটির জন্যই যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক জানান, তরুণরা কোন দেশে পড়তে যাবে এ বিষয়টি সামনে এলে আয় বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর্থিকভাবে অতি সচ্ছল পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ব্রিটেনের স্কুলগুলোয় পাঠাতে পারে। আরেকটু কম ধনীরা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দেশ বেছে নেয়। আর যারা এর বাইরে রয়েছেন, সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইনের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশই ভরসা।

আর যারা দেশের বাইরে পড়তে যেতে পারেন না, তারা ইংরেজি ভাষা শেখাসহ চাকরি পেতে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রস্তুতিমূলক প্রতিষ্ঠানই তাদের ভরসা। কিন্তু পড়াশোনার বিপুল খরচ জোগাতে ছাত্র থাকা অবস্থায়ই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তারা।

অন্যদিকে সামরিক বাহিনীতে কাজ করার পর ২০ বছরের দিকে কাজে যোগ দিতে পারেন দক্ষিণ কোরিয়ার পুরুষরা। সেনাবাহিনী থেকে ফিরে এসে অনেকেই কাজ পান না এবং অভিভাবকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। অনেকেই কাজ খুঁজে পেলেও ৩৮ বছর হয়ে যাওয়ার পরই তাদের অবসরে যেতে বাধ্য করা হয়। অবসর থেকে পাওয়া অর্থের মাধ্যমে কেউ কেউ ব্যবসা শুরু করলেও অতিরিক্ত প্রতিযোগিতার কারণে টিকে থাকাটা কষ্টকর হয়ে ওঠে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদপত্রের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যক্তিগত ব্যবসায় মালিকদের সংখ্যা ৫ লাখ থেকে বেড়ে ৫৩ লাখ ৭০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। এর বেশির ভাগই ফাস্টফুড রেস্টুরেন্ট। কিন্তু এ ধরনের ব্যবসা টেকসই না হওয়ায় হতাশ মালিকদের অনেকেই আত্মহননের পথ বেছে নেয়।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায়ই আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ২০১২ সালে এখানে ১ লাখ লোকের মধ্যে ২৯ দশমিক ১ শতাংশ আত্মহত্যা করেছেন।

পরিস্থিতি পরিবর্তনে প্রেসিডেন্ট পার্ক প্রশাসন অর্থনৈতিক প্রণোদনা কর্মসূচির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যত্ নিয়ে তরুণদের উদ্বেগ দূর করতে তা এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান আনতে পারেনি।