Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা

মো. মহিবুল্লাহ: মানসম্মত সেবা দেয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ এনে স্থানীয় তেরোটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে এক বছরের জন্য বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কোরিয়ান সরকার। পাশাপাশি সরকারিভাবে নিয়োগকৃত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের আলোকে নীতিমালা ঢেলে সাজানোর জন্যও কলেজগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত রবিবার এ কথা জানায়।

নিষেধাজ্ঞা পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দেগু আর্টস ইউনিভার্সিটি (Daegu Arts University) ও হানমিন ইউনিভার্সিটি (Hanmin University), হান্সেই ইউনিভার্সিটি ( Hansei University), সিউল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি (Seoul Women’s University), ইউনিভার্সিটি অব সুওন (the University of Suwon) এবং হানশিন ইউনিভার্সিটি (Hanshin University)। মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, কলেজগুলো এ বছরের দ্বিতীয় সেমিস্টার থেকে পরবর্তী এক বছর বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা আবেদন করতে পারবে না।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংখ্যা ও আয় বাড়াতে গিয়ে অনেক অযোগ্য ছাত্রছাত্রী ভর্তি করছে যাদের অনেকেই স্টুডেন্ট ভিসায় কোরিয়ায় প্রবেশ করে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন কাজে যোগ দিচ্ছে এবং অবৈধ অভিবাসী হিসেবে অবস্থান করছে।

chardike-ad

দেশব্যাপী সাড়ে তিনশোর মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে চালানো অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের আবাসন ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার, বিদেশী ফ্যাকাল্টি সদস্যের সংখ্যা ও সামগ্রিক সেবার মান ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজ নেয়া হয়। অনুমোদন প্রাপ্ত অনেক কলেজই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বেশী দেখানোর উদ্দেশ্যে নীতিমালা ভঙ্গ করে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করছে বলে ফলাফল রিপোর্টে জানানো হয়। ইউনিভার্সিটি অব সুওনের বিরুদ্ধে বিদেশী প্রার্থীদের যোগ্যতা সঠিকভাবে পর্যালোচনা না করেই টিউশন ফী অর্ধেক করে দিয়ে ভর্তি করার অভিযোগ আনা হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানায়, এর ফলে সদ্য ভর্তি হওয়া অনেক ছাত্রছাত্রীই খুব বেশীদিন পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারছে না এবং খুব দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে।

স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তিতে এ ধরনের অনিয়ম শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের অন্যতম মাথাব্যাথার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশীরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় বাইরের দেশগুলোতে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা মূল্যায়নের কাজটি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি হানইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেধাবী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন দেশে শাখা খুলতে শুরু করলেও এ ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণে কোরিয়ান কলেজগুলোতে এখনও পর্যন্ত খুব একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের জন্য “আদর্শ” বলেও চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে হানইয়াং, ইওনসে ইউনিভার্সিটি, কোরিয়া ইউনিভার্সিটি, সগাং ইউনিভার্সিটি এবং ইহোয়া ইউনিভার্সিটি অন্যতম। কলেজগুলোকে মানসম্মত ও মেধাবী বিদেশী ছাত্রছাত্রী ভর্তির ব্যাপারে উৎসাহিত করতে মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সনদ দেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কেবলমাত্র ইংরেজী ভাষায় পাঠদান আর বিদেশী ছাত্রছাত্রী ভর্তির পিছনে না ছুটে আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করতে মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে কলেজগুলোর প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে।

কোরিয়ান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে বহিরাগতদের ধারণা দিতে বছরখানেক পূর্বে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের তত্ত্বাবধানে একটি ইংরেজি ভাষার ওয়েবসাইটও (http://heik.academyinfo.go.kr/main.tw) খোলা হয়েছে।

কোরিয়ায় অধ্যয়নরত বিদেশী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এ বছর ১ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ২০১১ সালের শেষদিকে এ সংখ্যা ছিল ৮৭ হাজারের মতো। প্রায় ১৬০টি দেশের ছাত্রছাত্রীরা বর্তমানে কোরিয়ায় পড়াশুনা করছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এশিয়া ও ইউরোপের অনেক দেশে কোরিয়ান টিভি নাটক, গান ও চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরিয়ায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের আগমন বাড়ছে বলে ধারণা করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে ২০২০ সাল নাগাদ ২ লক্ষ আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীকে কোরিয়ায় পড়াশুনার সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে।

(কোরিয়ান পত্রিকা এবং ইন্টারনেটের তথ্য অবলম্বনে)