দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেট বিড়ম্বনায় ভুগছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট বিড়ম্বনা দূর ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে পুরো ক্যাম্পাসকে আন্ডারগ্রাউন্ড ও ওভারহেড অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাম্পাস নেটওয়ার্কের আওতায় এনেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ) মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
চলতি বছরের ২৭ আগস্ট প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। কাজ শেষ হয় গত ৩০ নভেম্বর। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ৫ কোটি ৩০ লাখ ৮৭ হাজার ৪২০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট বিড়ম্বনা কমবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল ঢাবি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা। প্রকল্পটির মাধ্যমে সেটিই বাস্তবায়ন হবে। আন্ডারগ্রাউন্ড ফাইবার ক্যাবল সংযোগের মাধ্যমে ৭০টি ভবনে ‘লাস্ট মাইল সলিউশন’ সেবা দেয়া হবে।
প্রকল্পটির আওতায় ক্যাম্পাসে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক স্থাপনসহ বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারনেট ব্যবস্থার ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং অপারেশন শাখা সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যবহার ও দাফতরিক কাজের জন্য সাত হাজার ডেস্কটপ কম্পিউটার ও দুই শতাধিক ওয়াই ফাই রাউটার রয়েছে।
জানা গেছে, বিটিসিএল নীলক্ষেত এক্সচেঞ্জ থেকে ৩১০ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথড একটি ওভারহেড ক্যাবলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সার্ভারে নেয়া হতো। এর পর সেখান থেকে দুটি ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্টের (তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট ও কার্জন হল) মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট সেবা দেয়া হতো। নীলক্ষেত এক্সচেঞ্জ থেকে মাত্র একটি ওভারহেড ক্যাবল থাকায় কোনো কারণে এটি কাটা গেলে বা অকেজো হলে পুরো ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ত।
কিন্তু এ প্রকল্পের অধীনে নীলক্ষেত একচেঞ্জ থেকে কেন্দ্রীয় সার্ভার পর্যন্ত আরেকটি আন্ডারগ্রাউন্ড অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে ওভারহেডের পাশাপাশি আন্ডারগ্রাউন্ড কভারেজ দেয়ায় একটি বিচ্ছিন্ন হলেও অন্যটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করবে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন ও শামসুন্নাহার হলে আরো দুটি ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্টেগুলোয় প্রতিটি ডিভাইসের বিকল্প রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ৪০টি গুরুত্বপূর্ণ ভবনে ওভারহেড ক্যাবলের পাশাপাশি অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আন্ডারগ্রাউন্ড কভারেজ বিস্তৃত করা হয়েছে। ওভারহেড ও আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল সংযোগ দুটি একে অন্যের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। প্রকল্পটির আওতায় ৪০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। ইন্টারনেট অ্যাকসেসরিজ পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে ৬৫টি লোকেশনে, যাতে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা দেয়া যায়।
শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণের অংশ হিসেবে এ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য ব্যান্ডউইথড বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং অপারেশন শাখার সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ইমাম হাসান রাজা। তিনি বলেন, ‘আমরা এ প্রকল্পের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ও বিশাল নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছি। তবে ক্যাম্পসের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর তুলনায় ব্যান্ডউইথড কম। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যান্ডউইথড বাড়ালে শিক্ষার্থীরা একটি উচ্চগতির নেটওয়ার্ক পাবে। বিশাল ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট সেবা প্রদানে পর্যাপ্ত লোকবলও নেই বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনেট-সংক্রান্ত বিষয়গুলো উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) দফতর থেকে পরিচালনা করা হয়। ব্যান্ডউইথড বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সহিদ আক্তার হুসাইন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ সেবা প্রদান। তাই উচ্চগতির ইন্টারনেটের জন্য শিগগিরই ব্যান্ডউইথড বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। আর ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে লোকবল বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর নতুন অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সংযোগের উদ্বোধন করবেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। প্রকল্পটি সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ইন্টারনেটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হলে বসেই তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ সেবা পাবেন। বণিকবার্তা।