Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ৭৮ জন, গ্রেপ্তার ১৮ হাজার

killingআইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গত এক মাসে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গুম-খুনের একটি তালিকা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ বিদেশী দূতাবাসে পাঠিয়েছে বিএনপি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষন করে এ বিষয়ে তাদের সরজমিনে তদন্ত করার জন্য অনুরোধও জানিয়েছে দলটি।

আগামী সাপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখতে ঢাকায় আসছে। এরকম প্রেক্ষাপটে বিএনপির পক্ষ থেকে এই তালিকা দেয়া হলো বলে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

chardike-ad

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ ৫ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে যৌথ অভিযানের নামে বিএনপিসহ ২০দলীয় জোটের অসংখ্য নেতা-কর্মীর গ্রেপ্তারের পাশাপাশি কথিত বন্দুক যুদ্ধে সাজানো নাটকের মাধ্যমে হত্যাকান্ডে ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সরকারের কঠোর সেন্সরশীপের মধ্যেও এ বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকেও খবর প্রকাশিত হয়েছে।’’

গত ৫ জানুয়ারি প্রতিদ্বন্দ্বীতাহীন নির্বাচনে বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, র‌্যাব, পুলিশসহ সাদা পোষাকে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হাতে ৭৮ জন প্রাণ হারিয়েছে, যার মধ্যে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীর সংখ্যা ৪৩ জন বলে দাবি করা হয়েছে। এসব হত্যাকান্ডের মধ্যে রংপুর, কুড়িগ্রাম, রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী, বরিশালে উজিরপুর, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনসাধরণ রয়েছে।

গত এক মাসে ১৮ হাজার নেতা-কর্মী, সাধারণ মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে। মামলায় আসামী করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখের অধিক নেতা-কর্মী। এর বাইরে মামলায় অজ্ঞাত সংখ্যাক লোককে আসামী তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। অজ্ঞাত এই তালিকায় পরবর্তিতে গ্রেপ্তারকৃত বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের আসামী হিসেবে অন্তভুর্ক্ত করা হচ্ছে।

৫ জানুয়ারির পর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বিশেষ করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের কথিত ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও ট্রাকের নিচে ফেলে হত্যাকান্ডের পাশাপাশি পুলিশি হেফাজতে নেতা-কর্মীদের পায়ে গুলি করে পঙ্গু করার কথাও উল্লেখ করেন শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।

এ পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতা-কর্মী-সমর্থক যারা হত্যার শিকার হয়েছেন তারা হলেন, নাটেরের তেবাড়িয়ার রাকিব মুন্সি( বিবিএ সন্মান), রায়হান আলী (ছাত্র দল), রাজশাহীর মহানগরের আইনুর রহমান মুক্ত (বিএনপি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহাবুদ্দিন (ইসলামী ছাত্র শিবির), বানেশ্বরের মজিরউদ্দীন(বিএনপি), গোদাগাড়ীর মো. এসলাম (যুবদল), বিনোদপুরের নুরুল ইসলাম শাহিন( কলেজ শিক্ষক), চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের জমসেদ আলী( বিএনপি), নবাবগঞ্জের আসাদুল্লাহ তুহিন ( ইসলামী ছাত্র শিবির), শিবগঞ্জের মতিউর রহমান(ছাত্র দল), নোয়াখালীর চৌহমুহনির মিজানুর রহমান(যুব দল), মহসিন উদ্দিন (ছাত্রদল), বেগমগঞ্জের মো. সোহেল(যুব দল), সোনাইমুড়ির মোরশেদ আলম পারভেজ(ছাত্র দল),চুয়াডাঙ্গার শংকরচন্দ্রপুরের সিরাজুল ইসলাম (বিএনপি), নড়াইলের স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ইমরুল কায়েস( জামায়াতে ইসলাম), ঢাকার খিলগাওয়ের নুরুজ্জামান জনি (ছাত্র দল), ঢাকা কলেজের এমদাদ উল্লাহ (ইসলামী ছাত্র শিবির), আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা ক্যাম্পাসের ছাত্র আরিফুল ইসলাম মুকুল( ছাত্র দল), মাতুয়াইলের সাখাওয়াত হোসেন রাহাত (ছাত্র দল), মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ, ভাসানটেকের আল আমীন, আগারগাঁওয়ের জসিমউদ্দিন (ইসলামী ছাত্র শিবির), সদর উপজেলার সোলাইমান উদ্দিন ( ছাত্র দল), চট্টগ্রামের লোহাগড়ার সাকিবুল ইসলাম(ইসলামী ছাত্র শিবির), রাঙ্গুনিয়ার জিল্লুর রহমান ভান্ডারী( যুব দল), ভোলা সদরের আবুল কালাম (শ্রমিক), ঝিনাইদহের শৈলকুপার সুলতান আলী বিশ্বাস (শ্রমিক), চরফ্যাশনের হারুন অর রশীদ (ছাত্র দল), সাতক্ষীরার তালা‘র রফিকুল ইসলাম (সাধারণ জনতা), রামনগরের শহীদুল ইসলাম (জামায়াতে ইসলাম), ময়মনসিংহের নান্দাইলের আসিফ পারভেজ টুকুন(ছাত্র দল), যশোরের চৌগাছার আবদুস সামাদ মোল্লা (বিএনপি), মনিরামপুরের মো. ইউসুফ (যুবদল), দুর্গাপুরের মো. লিটন (যুব দল), সদরের রাজু ( বিএনপি) সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সাইদুল ইসলাম(জামায়াতে ইসলাম),কুমিল্লা সদর দক্ষিনের কালা স্বপন(বিএনপি),  চৌদ্দগ্রামে সাহাবুদ্দিন পাটোয়ারি (ইসলামী ছাত্র শিবির), পিরোজপুরের বাচ্চু মিয়া (জামায়াতে ইসলাম) প্রমুখের নাম ও ঠিকানার পাশাপাশি হত্যার বিবরণ দেয়া হয়েছে।

অপহরণ ও গুমের বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০ দলীয় জোটের অনেক নেতা-কর্মীর সন্ধান মিলছেন না। তাদের পরিবারের সদস্যরাও নানাভাবে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কিন্তু নিরাপত্তার দিকটা বিবেচনায় রেখে ওই তালিকা দেয়া হয়নি।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, নির্বাচিত ঢাকা সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর চৌধুরী আলমসহ ২০১২ সালে গুম-খুনের বিষয়গুলো উল্লেখ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি।