Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বীমার আওতায় আসছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা

idraপ্রথমবারের মতো বীমার আওতায় আসছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। এখন থেকে আকস্মিক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুজনিত দাবি পূরণে ‘প্রবাসী বীমা’ নামে নতুন একটি পলিসি ব্যবহার করতে পারবেন তারা। সম্প্রতি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) নতুন এ পলিসির অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই পলিসিটি বাধ্যতামূলক করে সাধারণ বীমা খাতের কোম্পানিগুলোয় চিঠি দেবে আইডিআরএ।

জানা যায়, এ বীমার আওতায় দেড় হাজার টাকা প্রিমিয়ামে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কাভারেজ দেয়া হবে দেশীয় কোম্পানির মাধ্যমে। গ্রাহকের যে কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুজনিত দাবি পূরণ করবে বীমাকারী প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি নতুন এ পলিসি চালুর অনুমোদন পেয়েছে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। তবে বীমাগ্রহীতা যে দেশে অবস্থান করবে, সে দেশে নিযুক্ত থার্ড পার্টি অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের (টিপিএ) মাধ্যমে বীমা দাবি পূরণের শর্তাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে দেশীয় বীমাকারী প্রতিষ্ঠান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি টিপিএ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স।

chardike-ad

এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ সদস্য কুদ্দুস খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি ও পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রবাসীদের বীমার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত নতুন একটি পলিসির অনুমোদন দিয়েছি আমরা। রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ানো, বিদেশ গমনে ইচ্ছুকদের উত্সাহ প্রদান ও দেশে থাকা তাদের পরিবারের সামাজিক-আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ বীমার বিকল্প নেই।’

এর আগে ২০০৯ সালে সরকার প্রথম এ বীমা অনুমোদনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু প্রক্রিয়াগত ত্রুটিসহ কয়েকটি কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ উদ্যোগ আটকে থাকে। বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এ নিয়ে আবারো তোড়জোড় শুরু হয়। সে ধারাবাহিকতায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নতুন এ পলিসির অনুমোদন দেয় আইডিআরএ।

জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যাওয়া ৮৫ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের নামে বীমা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর আগে লেবাননে গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত নারী শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনা হয়। আর বাকি দেশগুলোয়ও নারী প্রবাসীদের নামে বীমার কাজ শেষ পর্যায়ে। বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রস্তাবের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এ বীমার আওতায় বীমাগ্রহীতাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হবে। এছাড়া বিদেশে যদি কোনো শ্রমিক মারা যান, তাহলে তার মরদেহ আনা ও দাফন সম্পন্ন হওয়া ছাড়াও পরিবারকে অর্থসহায়তা দেয়া হবে। বীমার মেয়াদ হবে এক বছর। তবে তা নবায়নযোগ্য। চাকরির সময় বাড়ানো হলে নতুন করে আরেকটি বীমা করতে হবে। প্রিমিয়াম এককালীন পরিশোধ করতে হবে।

অন্যদিকে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো অভিবাসী শ্রমিক অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করলে পরিবার ১০০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাবে। দুর্ঘটনায় কোনো বীমাগ্রহীতার মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে ১০০ শতাংশ। অসুস্থতা অথবা দুর্ঘটনা, দৃষ্টিশক্তি লোপ, উভয় পা, একটি পা একটি চোখ, একটি পা একটি হাত ও একটি হাত একটি চোখ হারানো বা দুর্ঘটনায় সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে পড়লেও ১০০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে। এছাড়া স্থায়ী পঙ্গুত্ব ও শ্রমদানে সম্পূর্ণ অক্ষম ব্যক্তিদের দেশে ফেরানো বাবদ ৩ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। তবে বীমাকারী আত্মহত্যা করলে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না।

এ পলিসির আওতায় দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকের জন্য কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করতে বা হুইলচেয়ার কিনতে নগদ অর্থ সহায়তা দেবে বীমা কোম্পানি। এছাড়া বীমাগ্রহীতার পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স হারিয়ে গেলে এমনকি ওয়ার্ক পারমিট বাতিল হলেও অর্থসহায়তা দেয়া হবে।

এ বিষয়ে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা নাসির এ চৌধুরি বলেন, বিদেশে কর্মরত সব প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিককে বীমার আওতায় আনা সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমাদের বীমা কোম্পানিগুলো সব দায়দায়িত্ব নিতে পারবে। বিদেশে কোনো কর্মী স্বাভাবিক বা দুর্ঘটনায় মারা গেলে তার পরিবার হঠাৎ অসহায় হয়ে পড়ে। বেশির ভাগ শ্রমিক ধারদেনা করে, জমি বিক্রি করে বা বন্ধক দিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয়। তাদের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে পরিবার নিঃস্ব হয়ে পথে বসে যায়। কিন্তু বীমা করা থাকলে একটু হলেও সহায়তা পাবেন তারা। বণিকবার্তা।