Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাংলাদেশে শেষের খেলা শুরু

the economistশেষের খেলা হয়তো শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এ সপ্তাহে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে খেলার শেষ হতে সময় নেবে। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিরোধী দল বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়। এ সপ্তাহে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করবে বলে অনেকে ধারণা করেছিলেন। খালেদা জিয়া শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীই নন, তিনি কার্যত তার সরকারের সর্বশেষ প্রতিপ। দুই মাস ধরে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি অবস্থা যখন চরম উত্তেজনায় পৌঁছেছে মানুষ তখন এ প্রশ্ন করা বন্ধ করে দিয়েছে যে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে কারান্তরীণ করার রাস্তা খুঁজে পাবেন কি না।
এখন তাদের প্রশ্ন কখন তা ঘটবে। ৪ মার্চ একটি আদালত জবাব দিয়েছেন যে এখনই নয়।
লন্ডনের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের গতকালের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। ‘পলিটিকস ইন বাংলাদেশ : অন দ্য বয়েল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার খালেদা জিয়ার মামলার শুনানি এক মাস পেছানো হয়েছে। এ বিলম্বকরণ বিচারিক বিবেচনার থেকে সম্ভবত রাজনীতির সাথেই বেশি জড়িত। ৪ মার্চ তাকে গ্রেফতার করা হবে বলে জল্পনাকল্পনা ছিল। এর এক দিন আগে সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও তুরস্কসহ ৯টি দেশের কূটনীতিকরা তার কার্যালয়ে হঠাৎ উপস্থিত হন। কার্যালয়ের ভেতরে পুলিশ দুই মাস ধরে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। কূটনীতিকদের সফরে সম্ভবত সরকারের উপলব্ধি হয়েছে যে যদি ৬৯ বছরের এক নারীকে অন্যায়ভাবে কারাগারে পাঠাতে দেখা যায় তাহলে এটা কার্যত বেগম জিয়াকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হতে সহায়তা করবে। এর পরিবর্তে সরকার খালেদা জিয়ার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত নিজেদেরকে তুষ্ট রেখেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার অনানুষ্ঠানিক আটকাবস্থা ও তার মাথার ওপর এখন যাবজ্জীবন কারাদে র ঝুঁকি রয়েছে। তিনিই একমাত্র উল্লেখ করার মতো ব্যক্তি, যিনি এখনো কারারুদ্ধ নন। সাম্প্রতিক সময়ে সিনিয়র অন্য অনেক নেতাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। গৃহবন্দী করা হয়েছে অথবা নির্বাসনে রয়েছেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশ আটক করেছে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। নির্বাচনে বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াতে ইসলামীর প্রধান নেতাদের মৃত্যুদ দিয়েছেন যুদ্ধাপরাধবিষয়ক আদালত। ৫ জানুয়ারির পর রাজপথের সহিংসতায় নিহত হয়েছেন কমপে ১২০ জন। এর বেশির ভাগই নিহত হয়েছেন পেট্রলবোমা নিেেপ। এসব পেট্রলবোমা ছুড়েছে বিরোধীদলীয়রা। তবে অনেকে নিহত হয়েছেন পুলিশের গুলিতে।
ভবিষ্যতের বিশ্বাসযোগ্য কোনো নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল নয়। বেগম জিয়া ও তার প্রবীণ উপদেষ্টাদের দেখে মনে হচ্ছে অচলাবস্থার তীব্রতা তারা উপভোগ করছেন। বিরোধী দলের তুলনামূলক উদারপন্থী নেতাদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। বরং চরমপন্থী, উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় কট্টরপন্থী, যারা ক্রমবর্ধমান হুমকি প্রদর্শন করছেন, তাদের জন্য জায়গা খালি করা হচ্ছে। এর একটি প্রতিফলন দেখা গেল ২৬ ফেব্রুয়ারি যেদিন এক আমেরিকান-বাংলাদেশী লেখককে ঢাকায় রিকশা থেকে নামিয়ে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি ইন্টারনেটে ইসলামি চরমপন্থীদের সমালোচনা করার সাহস দেখিয়েছিলেন, তার পাল্টা হিসেবে তাকে হত্যা করার সঙ্কল্প নিয়েছিল চরমপন্থীরা।
কোনো শান্তিপূর্ণ পথ পাওয়া যাবে কি না এটি এখনো পরিষ্কার নয়। বেগম জিয়ার এক উপদেষ্টা মনে করেন জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচন হবে একটি সম্ভাব্য পথ। শেখ হাসিনার এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন বিএনপিকে অবশ্যই ‘২০১৯ সালের পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত অপো করতে হবে।’ এ দিকে অর্থনীতি অব্যাহতভাবে ধুঁকছে। রাজপথের প্রতিবাদকারীরা উৎপাদিত পোশাকের বিশাল অংশ বাজারে পৌঁছতে দিচ্ছেন না। ফলে অর্ডারের সংখ্যা কমছে। ব্যবসায়ী নেতারা ও ঢাকার অভিজাতরা এতে হতাশ হচ্ছেন। এদের অনেকে মনে করছেন, আরেক ধরনের পরিবর্তন হয়তো আসন্ন। যদি বাংলাদেশে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে পরিচিত সেনাবাহিনী বেসামরিক রাজনীতিবিদদের আচরণে অধৈর্য হয়ে যান এবং তাদের সমূলে উৎপাটিত করেন, তবে এটিই প্রথম উদাহরণ হবে না। দেশটির তুলনামূলক গুরুত্বপূর্ণ বিদেশী অংশীদাররা যেমন, আমেরিকা, ভারত ও সৌদি আরব বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ আবারো প্রত্যভাবে ভেঙে পড়তে দেখে খুশি হবে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে। তিনি হয়তো ইসলামিস্ট চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের কারণে তাকে নৈতিক সমর্থন দিতে পারেন। তবে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিকে যতটা সম্ভব স্থিতিশীল ও সহনীয় দেখতে চাইবেন। সাধারণত, সফররত একজন ভারতীয় নেতা এ ধরনের সফরে অন্তত প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার সাথে সাাৎ করার আশা করেন। তবে এবার তা জটিল বলে প্রমাণিত হতে পারে।