Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

২ বছরে মালয়েশিয়া গেলেন ৭ হাজার, হতাশায় ১৪ লাখ

Malaysia৪ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১২ সালে মালয়েশিয়া সরকারের সাথে বাংলাদেশের জিটুজি চুক্তি হওয়ায় অনেক আশা নিয়ে সরকারের নির্দেশনায় নিবন্ধন করেন প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ ভাগ্যান্নেসী। সরকারের পক্ষ থেকে বছরে লক্ষাধিক লোক পাঠানোর কথা বলা হলেও ২ বছরে দেশটিতে যেতে পেরেছেন মাত্র ৭ হাজার বাংলাদেশি।

মালয়েশিয়ায় কম খরচে যাওয়ার আশায় নিবন্ধন করে অন্য দেশের চিন্তা বাদ দিয়েছেন অনেকেই। কেউ আবার বন্ধ করে দিয়েছেন স্বাভাবিক কাজকর্ম। তবে দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানির এ ধীর গতির কারণে হতাশ হয়ে পড়েছেন এসব নিবন্ধনকারী। তাদের অভিযোগ- সরকার একদিকে কম খরচে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে দেশটিতে বেসরকারিভাবে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে; অন্যদিকে নিবন্ধন করে বছরের পর বছর বসিয়ে রেখেছে। এতে বাড়ছে শুধু হতাশাই।

chardike-ad

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ কূটনৈতিক যোগাযোগের পর ২০১২ সালে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় দেশটি। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর দুই দেশের সরকারের মধ্যে সরকারিভাবে লোক নিতে মালয়েশিয়ায় সমঝোতা স্মারক সই হয়।

চুক্তি সই শেষে ঢাকা ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, মালয়েশিয়া বনায়ন (প্লান্টেশন) খাতে কর্মী নিতে ১০ হাজার চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। প্রতি মাসেই তারা ১০ হাজারের বেশি লোক নেবে এ খাতে। এজন্য মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহীদের একটি তথ্যভাণ্ডার করা হবে।

মন্ত্রীর এ ঘোষণার পর ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে আগ্রহীদের নিবন্ধন শুরু হয় সারাদেশে। এতে নিবন্ধন করেন ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৭৭৬ জন। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ব্যয় হয় প্রায় সাত কোটি টাকা। নিবন্ধনকারীদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৩৬ হাজার ৩৮ জনকে নির্বাচিত করা হয়।

নির্বাচিতদের তিন ভাগে ভাগ করে ২৩ জানুয়ারি প্রথম দফায় পাঠানোর জন্য লটারিতে ১১ হাজার ৭৫৮ জনের যাবতীয় কাগজপত্র তৈরি করা হয়। এরপর আরও দুই ধাপে ২৪ হাজার ২৪০ জনের কাগজপত্র তৈরি করে মালয়েশিয়ায় পাঠায় জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)।

প্রথম দফায় কাগজপত্র পাঠানো লোকদের মধ্যে ২০১৩ সালের এপ্রিলে ১৯৮ জন শ্রমিককে মালয়শিয়া পাঠানোর মাধ্যমে দেশটিতে নতুন করে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়। এরপরই শুরু হয় মালয়েশিয়ার ধীরে চলো নীতি। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের চাপে ২ বছরে মাত্র সাড়ে ৭ হাজার ভিসা দেয় তারা।

বিএমইটির মালয়েশিয়া বিষয়ক সেল সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে চুক্তি সইয়ের পর ১০ হাজার শ্রমিকের চাহিদাপত্র পাঠিয়ে তা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে ক্রমান্বয়ে আরও ৫ লাখ লোক নেওয়ার আশ্বাস দেয় মালয়েশিয়া সরকার। তবে ২০১৩ সালের এপ্রিলে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর ২০১৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সর্বমোট ৭ হাজার ১৬৬ জন বাংলাদেশিকে নিয়েছে তারা।

বিএমইটির মালয়েশিয়া বিষয়ক সেলের প্রধান নজরুল ইসলাম খান মনে করছেন, প্রতিবেশী অন্যান্য দেশে ভিসা বিক্রি করে লোক পাওয়ার কারণে বিনা টাকায় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো শ্রমিক নিতে আগ্রহী হচ্ছে না।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়ার কথা বললেও কোম্পানিগুলো চাহিদাপত্র না দেওয়ায় পর্যাপ্ত লোক নিতে পারছে না দেশটি। কোম্পানিগুলো ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়া থেকে টাকাসহ লোক পাচ্ছে। আর বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি থাকায় উল্টো টাকা খরচ করতে হয় তাদের।

এদিকে কম খরচে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আশায় অন্যান্য দেশে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়েছেন নিবন্ধনকারীদের অনেকেই। অনেকে কাগজপত্র মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কারণে ভিসা পাওয়ার আশায় নতুন করে কোনো কাজে যোগ না দিয়ে হতাশায় ভেঙ্গে পড়ছেন। কেউবা আবার মালয়েশিয়া যাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছেন।

প্রথম ধাপে মালয়েশিয়ায় কাগজপত্র পাঠানো চট্টগ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট, মেডিকেল চেক-আপ, ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে দুই বছর হলো। আজ-কাল করে আশা দেওয়া হচ্ছে মন্ত্রণালয় থেকে। এখানে ঝুলে থাকায় অন্য দেশের জন্য চেষ্টাও করছি না। যেকোনো সময় মালয়েশিয়া থেকে ডাক আসতে পারে; তাই করা যাচ্ছে না কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যও। অনেকেই তার মতো বসে থেকে হতাশায় ভুগছেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দার জানান, মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বাজার বন্ধ থাকার কারণে। তারা যে চাহিদার কথা জানিয়েছিল সে অনুসারে ভিসা না দেওয়ায় হতাশ আমরা। তবে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সরওয়া প্রদেশের একটি কোম্পানির জন্য ৫ হাজার শ্রমিকের কাগজপত্র পাঠিয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই এ ভিসাগুলো পাওয়া যাবে।

অন্যান্য দেশ থেকে ভিসা বিক্রির মাধ্যমে লোক নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকেই ভিসা বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে অবৈধপথে যারা যান তারা দেশটির শ্রমবাজার নষ্টের জন্য দায়ী।

সূত্রঃ অর্থসূচক