Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা রহিমা খাতুনের

rohima-khatunথাইল্যান্ডের পাচারকারীদের বন্দিশিবির থেকে পালিয়ে এসেছেন রহিমা খাতুন (২৫) নামে এক নারী। তিনি ওই বন্দিশিবিরকে নির্যাতনের সেল হিসেবে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, গহিন জঙ্গলে এখনও পাচারকারীদের হাতে বন্দি বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের অবস্থা শোচনীয়। তারা ঠিকমতো খাবার পান না। স্বাস্থ্যের ভয়াবহ অবনতি হয়েছে তাদের। তার ওপর চলে প্রহার। আত্মীয়স্বজনদের কাছে পাচারকারীরা দাবি করে মুক্তিপণ। তা দিতে ব্যর্থ হলে চলে আরও নির্যাতন। রহিমার দাবি, তাকে যে শিবির বা ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছিল সে দলে রয়েছেন ৪০০ বন্দি। তার বেশির ভাগই বাংলাদেশের নাগরিক ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা।

এমন অবস্থায় গতকাল থাইল্যান্ডের অনুসন্ধানকারীরা দ্বিতীয় আরও একটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছেন। সেখানে কি পরিমাণ মৃতদেহ আছে এবং নিহতরা কোন দেশের নাগরিক সে বিষয়ে পরিষ্কার জানা যায়নি। গতকাল এ খবর দিয়েছে অনলাইন ব্যাংকক পোস্ট। এতে বলা হয়, রহিমা খাতুনের (২৫) চোখেমুখে এখন হতাশা। মানুষ দেখলেই চমকে উঠছেন তিনি। আবার তাকে অপহরণ করা হতে পারে এ ভয়ে তটস্থ রহিমা। আশ্বস্ত হওয়ার মতো কাউকে পেলে আকুতি জানাচ্ছেন তাকে বাঁচাতে। বন্দিশিবির থেকে পালিয়ে এখন জীবনের সঙ্গে লড়াই করছেন তিনি। ফেলে এসেছেন তার ১০ বছর বয়সী মেয়েকে। তার ভাগ্যে কি ঘটেছে বলতে পারেন না রহিমা। মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই চোখের কোণে জমছে পানি। ভাবলেশহীন তাকিয়ে থাকেন। রহিমা ও তার মেয়েকে মিয়ানমার থেকে অপহরণ করে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল থাইল্যান্ডের গহিন জঙ্গলে।

chardike-ad

সেখান থেকে পালিয়ে তিনি বলেছেন, তাকে যে ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছিল সেখানে রয়েছে প্রায় ৪০০ মানুষ। এর বেশির ভাগই রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী। সেখানে বন্দিদের সঙ্গে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছেন রহিমা। পেডাং বেসার এলাকায় রূপ চাং পাহাড়ের কাছে যেসব গ্রাম আছে পালিয়ে তিনি তার কাছাকাছি যান। সেখান থেকেই সোমবার বিকালে উদ্ধার করা হয়েছে তাকে। পরিচয় জানার পর তাকে ভর্তি করা হয়েছে সংখলা প্রদেশের একটি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তাকে। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। রহিমা মানসিকভাবে এতটাই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন, তিনি অতীত সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারছেন না। তবে এতটুকু বলেছেন- আমাকে ওই শিবিরে আটকে রেখে প্রহার করা হয়েছে। এমন নির্যাতন করা হয়েছে অনেকবার। তিনি বলেছেন, তাকে ও তার মেয়েকে মিয়ানমারের কোন এক জায়গা থেকে অপহরণ করা হয় ৪ মাস আগে। এর পর নিয়ে যাওয়া হয় থাইল্যান্ডের গহিন জঙ্গলে। সেখানে প্রায় ৪০০ মানুষের সঙ্গে তাদের রাখা হয়। এখানে অন্য যারা আছেন তারা হয় বাংলাদেশী না হয় রোহিঙ্গা। তাদের সারাক্ষণ নজরদারিতে রাখা হয়। ঠিকমতো খাবার দেয়া হয় না। দাবি করা হয় মুক্তিপণ। মুক্তিপণ দিতে না পারলে অব্যাহতভাবে নির্যাতন চালানো হয়।

রহিমা বলেন, এক সময় অকস্মাৎ পাচারকারীরা বলে, পুলিশ আসছে, পালাও। ওরা ধরতে পারলে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে। এ কথা বলেই তারা দৌড়ানো শুরু করে। উপায় না দেখে অন্যরা সবাই দৌড়াতে থাকে তাদের পিছু পিছু। রহিমা বলেন, আমি তাদের সঙ্গে দৌড়াতে পারিনি। দৌড়ানোর মতো শক্তি ছিল না আমার। সবাই আমাকে পিছনে ফেলে দৌড়াতে থাকেন।

পেছনে পড়ে যান রহিমা খাতুন। এ সময় তিনি পাহাড়ের নিচের দিকে যে গ্রাম আছে, সে দিকে হাঁটা শুরু করেন। কতক্ষণ, কতদিন এভাবে ক্লান্ত পায়ে তিনি হেঁটেছেন বলতে পারেন না। এক পর্যায়ে পাহাড়ি ওই গ্রামের মানুষগুলো তাকে দেখে উদ্ধার করেন। এমনি এক নির্মম সময়ে তিনি হারিয়ে ফেলেন নিজের ১০ বছর বয়সী মেয়েকে। সে এখন কোথায় আছে, কি তার পরিণতি তার কিছুই জানেন না রহিমা।

ওই একই হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে উদ্ধার হওয়া তুতানসাসা (২৮) নামে আরেক ব্যক্তিকে। কয়েক দিন আগে গণকবর থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া একমাত্র ব্যক্তি এই তুতানসাসা। তিনি একটি চিনিকলের সাবেক একাউন্ট ম্যানেজার। তিনি সোমবার জাতীয় পুলিশ প্রধান সময়োত পুমপানমুয়াংকে বলেছেন, ওই জঙ্গলে আরও ৬০ থেকে ৭০টি এরকম ক্যাম্প আছে। সেখানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে পাচার করে মানুষকে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। এসব বিপন্ন মানুষের আত্মীয়স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করছে পাচারকারীরা। তুতানসাসা বলেছেন, তাকে ৯ মাস আগে বাংলাদেশ থেকে অপহরণ করা হয়। এরপর থাইল্যান্ডের জঙ্গলে কমপক্ষে তিনটি আলাদা আলাদা ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়। তিনি সবশেষে যে ক্যাম্পে ছিলেন সেখানে কমপক্ষে ৪০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। ওদিকে গতকাল অনুসন্ধানকারীরা গহীন ও দুর্গম জঙ্গলে আরও একটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছেন। এসব ঘটনায় এর কাছাকাছি অবস্থিত একটি গ্রামপ্রধান ইয়ালি ক্রেমকে আটক করেছে পুলিশ। সে বলেছে, প্রথম গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে গত শুক্রবার। সেখানে যে পরিমাণ মৃতদেহ পাওয়া গেছে, তার বাইরে অন্য বন্দিদের মৃতদেহ রয়েছে দ্বিতীয় ওই গণকবরে। ইয়ালি ক্রেমসহ এ ঘটনায় স্থানীয় মোট ৫ জন রাজনীতিক ও বিদেশী নাগরিককে আটক করা হলো। দ্বিতীয় যে গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে তা প্রথম গণকবর থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে। পুলিশ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্রাউত বলেছেন, তারা সেখানে ৫টি কবরের সন্ধান পেয়েছেন।