Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ফেসবুক ব্যবহার করে কোটিপতি

facebookতিন বছর আগেও যিনি ছিলেন দেউলিয়া, পথের ফকির, জেল ফেরত আসামি আর আজ তাঁর মাসে আয় দুই লাখ ৭৫ হাজার ডলারেরও বেশি! বাংলাদেশি অর্থ যার পরিমাণ দুই কোটি সাড়ে নয় লাখ। ফেসবুকের যথাযথ ব্যবহারই তাঁকে দেউলিয়া থেকে কোটিপতি বানিয়েছে। বলা হচ্ছে, ডব্লিউটিএফ ম্যাগাজিন ও ফানিয়ারপিকস ডটনেটের প্রতিষ্ঠাতা জেসন ফিকের কথা।

ফেসবুকের কল্যাণে নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করা জেসন ফিককে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিজনেস ইনসাইডার। ২০০৫ সাল থেকেই অর্থকষ্টে ছিলেন জেসন। রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে কাজ করতেন তিনি। কিন্তু এক্ষেত্রে বাজারে মন্দা চলতে থাকায় তাঁর দুরাবস্থা সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছায়। স্ত্রী-পুত্র নিয়ে পড়েন মহাবিপদেই। টিকে থাকার জন্য আয়ের পথ খুঁজতে থাকেন তিনি।

chardike-ad

এ সময়ই তাঁর বন্ধুরা একটি ওয়েবসাইট খোলার পরামর্শ দেন জেসনকে। বন্ধুদের কথা শুনে ডব্লিউটিএফ ম্যাগাজিন ডটকম ডোমেইনটি কিনে ফেলেন তিনি। চিন্তা করেন এই সাইটটিতে বিনোদনমূলক বিভিন্ন কনটেন্ট রাখবেন তিনি। তাঁর এই ডিজিটাল উদ্যোগের সঙ্গে হাত মেলান কয়েকজন বন্ধু। কিন্তু এ সময় কোনো অর্থকড়ি ছাড়াই শুরু করতে হয় এই উদ্যোগটি। জেসনের ভাষ্য, ‘আমার দলটি কোনো রকম আর্থিক সুযোগ-সুবিধা ছাড়া কাজ করে যাচ্ছিল। আমরা মজার মজার কনটেন্ট তৈরি করে যাচ্ছিলাম। আমরা আসলে কী করছিলাম সে সম্পর্কে ধারণা ছিল না।’

২০১১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়েবসাইট চালু করেন তিনি। এতে মজার মজার সব কনটেন্ট আপলোড করেন। তৈরি করেন ফেসবুক পেজ এবং তাঁর ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে একই রকম কনটেন্ট শেয়ার করতে শুরু করেন। এ সময় ম্যাগাজিনের জন্য একটি গল্প সংগ্রহ করতে গিয়ে তাঁকে জেলে যেতে হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মারামারিতে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাঁর জীবন আরও দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। কোনো চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল না। পরিবারকে সাহায্য করার মতো অর্থও ছিল না। তিনি আত্মহত্যার কথাও ভাবতে শুরু করেন। কিন্তু তাঁর কারাভোগের অভিজ্ঞতার ঘটনা প্রকাশের জন্য একটি মাধ্যম খুঁজছিলেন তিনি। এ সময় তিনি বেছে নেন ফেসবুককে।

জেসন ফিক পরিকল্পনা করেন তাঁর ম্যাগাজিনসহ বেশ কিছু ফেসবুক পেজ খুলবেন এবং সেগুলোতে লাইক বাড়ানোর মাধ্যমে তাঁর তৈরি ওয়েবপেজগুলোতে ভিজিটর আনবেন। এরপরই জেসন শুরু করেন তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ।

বিভিন্ন নামে ফেসবুকে ফ্যান পেজ খুলে লাইক বাড়ানোর কাজ শুরু করেন তিনি। তাঁর প্রচেষ্টা বিফলে যায়নি। ওয়েবসাইটে ভালো কনটেন্ট এবং ফেসবুকে লাইকের কারণে ওয়েবসাইটে ভালো পাঠক পেতে শুরু করেন এবং বিজ্ঞাপন থেকে দ্রুত তাঁর আয় বাড়তে থাকে।

শুরুতে অনেকগুলো ফেসবুক পেজ তৈরি করে তা চালাতে শুরু করেন জেসন। জেসন বলেন, ‘ফেসবুকে অনর্থক সময় দেওয়ার জন্য আমার স্ত্রী রাগ করতে শুরু করলেও আমি না খেয়ে বসে ফেসবুক পেজগুলো চালাতাম। আমি আমার স্ত্রীকে বলতাম ফেসবুকে আমি যে ডিস্ট্রিবিউশনের কাজ করছি এর মূল্য একদিন পাব।’

বর্তমানে জেসন ৪০টি ফেসবুক পেজ চালাচ্ছেন এবং এসব পেজগুলোতে সব মিলিয়ে দুই কোটি ৮০ লাখ লাইক রয়েছে। এই ফেসবুক পেজগুলো থেকে তাঁর ওয়েবসাইটে অসংখ্য পেজভিউ হয়। ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন থেকে তাঁর আয়ও আসে প্রচুর। এ ছাড়াও জেসন সোশ্যাল মিডিয়া বিষয়ক পরামর্শক হিসেবেও ব্যবসা শুরু করেছেন। বর্তমানে ১৬ জনের কর্মসংস্থানও করেছেন তিনি।

৪০ বছর বয়সী জেসন ফিক দাবি করেন, শুধু ফেসবুকের কার্যকর ব্যবহারের কল্যাণেই তাঁর ভাগ্য বদলাতে পেরেছেন এবং নিজেকে একজন কোটিপতি হিসেবে দেখতে পারছেন। এই ব্যবসায় লাভ যেমন তেমনি চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা সম্পর্কে জেসন মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগের এই ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’ পরিকল্পনা পাল্টে তিনি ব্যবসা করে যাচ্ছেন। একে যুদ্ধক্ষেত্র মনে করার কারণ হচ্ছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝেই তাদের এলগরিদম পরিবর্তন করে এ ধরনের উদ্যোগকে ঠেকানোর চেষ্টাও করে থাকে।

সূত্রঃ প্রথম আলো