চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের ২১ দশমিক ৭ শতাংশ দখল নিয়ে শীর্ষে রয়েছে স্যামসাং। অবশ্য গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ডিভাইস বিক্রি কমেছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। খবর পিটিআই।
আইডিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে ডিভাইস বিক্রি কমলেও শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে স্যামসাং। তবে অ্যাপল ও চীনভিত্তিক বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড স্মার্টফোনের বাজারে তাদের দখল বাড়াতে সমর্থ হয়েছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের বাজার দখল ২১ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে গত বছরের একই সময় বৈশ্বিক স্মার্টফোনের বাজারে প্রতিষ্ঠানটির দখল ছিল ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ। গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় এ বছর বৈশ্বিক স্মার্টফোনের বাজার ১১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৩৩ কোটি ৭২ লাখ ইউনিটের ঘরে পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক প্রান্তিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডিভাইস বিক্রির রেকর্ড এ সংখ্যা।
২০১৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে নতুন আইফোন উন্মোচনের মধ্য দিয়ে স্মার্টফোন বাজারে দখল বাড়িয়েছিল অ্যাপল। সে সময় রেকর্ড সংখ্যক মুনাফা করেছিল প্রতিষ্ঠানটির। ডিভাইস বিক্রির দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও মুনাফা আয়ের দিক থেকে স্যামসাংকে পেছনে ফেলে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে আরো ২ পয়েন্ট বাজার দখল বেড়েছে অ্যাপলের। বর্তমানে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের ১৪ দশমিক ১ শতাংশ দখলে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্লেষকদের মতে, গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো বড় ডিসপ্লের আইফোন সিক্স ও সিক্স প্লাস ডিভাইস উন্মোচন করে অ্যাপল; যা স্মার্টফোনের বাজারে প্রতিষ্ঠানটিকে একটি শক্তপোক্ত অবস্থান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্রমবর্ধমান স্মার্টফোনের বাজারে স্যামসাং ও অ্যাপলের পাশাপাশি চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য বাড়ছে। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে সাশ্রয়ী দামের স্মার্টফোন সরবরাহের মাধ্যমে চীনের বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড স্মার্টফোনের বাজারে দখল বাড়িয়েছে। বর্তমানে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ বাজার দখল নিয়ে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের শীর্ষ তিনে জায়গা করে নিয়েছে হুয়াউই। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি ইউরোপের বাজারগুলোয় প্রতিষ্ঠানটির স্মার্টফোনের চাহিদা বৃদ্ধি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে প্রতিষ্ঠানটির ডিভাইস বিক্রি বেড়েছে ৪৮ শতাংশ।
অন্যদিকে স্মার্টফোন বাজারে ক্রমান্বয়ে দৃঢ় অবস্থান তৈরি করছে চীনের শাওমি। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাজার দখল নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় এ বছর প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। সম্প্রতি চীনের বাইরে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজ শুরু করেছে শাওমি। বৈশ্বিক বাজারে উপস্থিতি বাড়াতে সম্প্রতি ব্রাজিলেও ডিভাইস বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া স্মার্টফোন বাজারের ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বাজার দখল নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে চীনভিত্তিক প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা কোম্পানি লেনোভো। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে আধিপত্য বাড়াতে মটোরোলাকে অধিগ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি। এ অধিগ্রহণের ফলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ প্রতিষ্ঠানটির ডিভাইস ব্যবসায় এক নতুন মাত্রা যোগ হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ভারতসহ বিশ্বের উদীয়মান বাজারগুলোয় ডিভাইস বিক্রি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
এ বিষয়ে আইডিসির গবেষণা ব্যবস্থাপক অ্যান্থনি স্কারসেলা বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে স্মার্টফোন বাজারের প্রবৃদ্ধিতে স্যামসাং, অ্যাপল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসই শুধু অবদান রাখছে না। এক্ষেত্রে সাশ্রয়ী দামের স্মার্টফোন ডিভাইসগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।’ এছাড়া তিনি বলেন, বিশ্বের উদীয়মান বাজারগুলোয় সাশ্রয়ী দামের স্মার্টফোন ডিভাইসের চাহিদা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
আইডিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশেষ করে যেসব গ্রাহক ফিচার ফোন ছেড়ে স্মার্টফোন ব্যবহারে আগ্রহী, তাদের কাছে সাশ্রয়ী দামের সর্বশেষ প্রযুক্তির ডিভাইসগুলো বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।(সৌজন্যেঃ বণিকবার্তা)