Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

‘বেশ চাপে রয়েছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম’

journalistগ্রেপ্তার, হয়রানি, হামলার শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা। সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ওপর রয়েছে অঘোষিত চাপও। মানবাধিকার কর্মী মীনাক্ষী গাঙ্গুলির কথায়, ‘‘চাপাতি ও অপরাধের গন্ধ খোঁজার মধ্যে জিম্মি বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতা৷” জার্মান রেডিও ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, সর্বশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজের অনলাইন পত্রিকার কার্যালয় থেকে সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন ফরিদপুরের আইনজীবী স্বপন কুমার পাল। তাঁর অভিযোগ, সাংবাদিক প্রবীর সিকদার ফেসবুকে একটি ‘স্ট্যাটাস’ দিয়ে বলেছেন যে, তাঁর যদি মৃত্যু হয়, তাহলে তার জন্য তিনজন দায়ী থাকবেন। এর মধ্যে প্রথম নামটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের, যিনি আবার প্রধানমন্ত্রী আত্মীয়। তাই এই মামলাটির মধ্যে মন্ত্রীর নির্দেশ যে আছে, তা অনেকের কাছেই পরিষ্কার।

chardike-ad

প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে সোচ্চার হন সাংবাদিক ও প্রগতিশীল সব শ্রেণির মানুষ। স্বাধীনতাযুদ্ধে ১৪ জন স্বজন হারানো এই সাংবাদিকের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন সাংবাদিকরা। অবশেষে রিমান্ডের মধ্যেও বৃহস্পতিবার তাঁকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সবার ধারণা, সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশেই সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।

ঠিক পরে দিন, অর্থাৎ বুধবার, গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারর্সনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ৷ তাঁকেও তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত, যদিও রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তাঁকে। রাজনৈতিক কর্মসূচির পালনের সময় তিনি গ্রেপ্তার হন। তবুও তাঁর গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন সব পক্ষের সাংবাদিকরা। তাঁর মুক্তিও দাবি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাংবাদিকতার বাইরেও শওকত মাহমুদের আরো দু’টি পরিচয় আছে৷ তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এবং কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি। সে কারণে তাঁর মামলাটা রাজনৈতিক। সুতরাং এই মামলা নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। তবে সাংবাদিক সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমার একটাই চাওয়া যে, শওকত মাহমুদের সঙ্গে যেন মানবিক আচরণ করা হয়। তিনি অসুস্থ, ডায়বেটিসে ভুগছেন।” তাঁর চিকিৎসার সুব্যবস্থা যেন করা হয় – সে প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন এই সাংবাদিক নেতা।

শওকত মাহমুদের গ্রেপ্তার নিয়েও সোচ্চার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো৷ কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের লিখেছেন, ‘‘আমার যে রাজনৈতিক বিশ্বাস, তার সঙ্গে শওকত মাহমুদের রাজনৈতিক বিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক নেই। একবার এক বন্ধুর বাসায় আড্ডার সময় তুমুল অর্থহীন তর্কের পর আমি শওকত মাহমুদের সঙ্গে রাজনৈতিক আলাপ বন্ধ করে দেই। কিন্তু তাতে আমাদের বন্ধুত্ব বন্ধ হয়নি। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ায় আমি চিন্তিত ও দুঃখিত।”

বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনা আগেও ঘটেছে। এখনো সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয়নি। তবে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে সাংবাদিকের আহত হওয়ার ঘটনা চলমান আন্দোলনেই প্রথম ঘটছে। এ বছর হেফাজত-এ-ইসলামের সমাবেশে প্রহৃত হন সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন। গত দুই সপ্তাহে হরতাল এবং অবরোধের সময় ককটেল হামলায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক৷ ছবিতে নাদিয়া শারমিনের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানাতেচ্ছেন নারী সংগঠন কর্মীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক লিখেছেন, ‘‘মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বললে প্রবীর সিকদারের পাশাপাশি সাংবাদিক শওকত মাহমুদের কথাও বলতে হবে। যদি আমরা তা বলতে না পারি, তাহলে ধরে নেব, আমরা সবার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নই। তবে এ কথাও ভুলে যাইনি যে, তিনি নিছক সাংবাদিক নন, তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, যে বিএনপি গণতন্ত্র চেয়ে, অগণতান্ত্রিক আন্দোলন করেছে।”

একই দিন গত বুধবার, জাতীয় পরিচয়-পত্রের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন টেলিভিশন চ্যানেল-২৪ এর দুই জন সংবাদকর্মী। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা স্বাধীন বা নিরাপদ – মোটেও তা বলা যাচ্ছে না।

গত বুধবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে সংগঠনটির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি লেখেন, ‘‘বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা এক নজিরবিহীন আক্রমণের সম্মুখীন। একদিকে চাপাতিধারী উগ্রপন্থি, অন্যদিকে অপরাধের গন্ধ খুঁজে বেড়ানো সরকার। উভয়ের মাঝে বাকস্বাধীনতা যেন জিম্মি। ধর্মনিরপেক্ষতা প্রচারের কারণে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের হাতে চারজন ব্লগার এ বছর খুন হয়েছেন। ধর্মনিরপেক্ষতাকে উগ্রপন্থিরা ‘ইসলামবিরোধী’ হিসেবে বিবেচনা করে। এ মাসের শুরুর দিকে ব্লগার নীলাদ্রি চট্রোপাধ্যায় হত্যাকাণ্ডের পর, আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আনসারুল্লাহ বাংলাটিম নামে একটি উগ্রপন্থি দল দায় স্বীকার করে। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলে, ভবিষ্যতেও এমন হামলা আরও ঘটবে। নীলাদ্রি ও অন্যান্য নিহত ব্লগারের ওপর হুমকির বিষয়টি পুলিশ জানতো, কিন্তু তাঁদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয় তারা।”সূত্র : ডয়েচে ভেলে।