Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ইরাকে বন্দিদশায় শতাধিক বাংলাদেশী

iraqচুয়াডাঙ্গা জেলার বাসিন্দা ফরিদুল ইসলাম। ভাগ্য ফেরাতে ইরাকে গেলেও দিন কাটে বন্দিদশায়। টানা ১৬ মাস বন্দিজীবন কাটানোর পর মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে আসেন তিনি।

তিনি জানান, ‘নয় মাস ইরাকের নাজাফ শহরে বন্দি থাকার পর সাত মাস বাগদাদে বন্দি থেকেছি। এখনো ১০০ জনের উপরে বাংলাদেশী বাগদাদে একটি ভবনে বন্দি অবস্থায় আছে। তাদের অবস্থা খুব খারাপ। বাইরের আলো-বাতাস দেখা যায় না। বন্দি অবস্থায় থাকা-খাওয়া ও পানির অভাবে মানবেতন জীবন যাপন করছে তারা। যারা একটু শিক্ষিত, দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলছে, তাদের অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’

chardike-ad

একই দিন ইরাক থেকে দেশে ফিরে আসেন সিরাজগঞ্জের আবু হানিফ। তিনি বলেন, ‘সেখানে খাওয়ার পানি নেই। ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় অন্ধকার ঘরে রাখা হয়েছে। একেকটি কক্ষে ৮-১০ জনকে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে।’

জানা গেছে, গত বছরের ২২ মে থেকে কয়েক ধাপে মোট ১৮০ জন বাংলাদেশীকে কাজ দেয়ার কথা বলে ইরাকে নিয়ে যাওয়া হয়। জুনে তিনজন আর গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুজন সেখান থেকে দেশে ফিরে আসেন। তারা জানান, সেখানে নিয়ে তাদের কোনো কাজ দেয়া হয়নি। তাদের নেয়া হয়েছে ভ্রমণ ভিসায়। যুদ্ধ চলতে থাকা ইরাকে নিয়ে মরুভূমিতে অস্ত্রের মুখে আটকে রাখা হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে। প্রতিদিন একটি পেঁয়াজ আর একটি রুটি দেয়া হয়, আর কোনো খাবার দেয়া হয় না। খাদ্য ও পানি সংকট এবং নির্যাতনের ফলে প্রত্যেকেই মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। দেশে পাঠানো সহজ হবে— এ কথা বলে ক্যারিয়ার ওভারসিস গত জানুয়ারিতে তাদের বাগদাদ নিয়ে যায়। বাগদাদে নিয়ে আবারো তাদের বন্দি করা হয়। সেখানে রড ও পাইপ দিয়ে মারধর করা হয়। এখনো তা অব্যাহত রয়েছে।

জানতে চাইলে ক্যারিয়ার ওভারসিসের গ্রুপ ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, ‘এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। একটি গ্রুপ আছে, যারা প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। আমরা বহু দেশে লোক পাঠিয়েছি। কখানো কেউ এমন কোনো অভিযোগ করেনি।’

গত ডিসেম্বরে বন্দিদের পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানানোর পর বিষয়টি সবার নজরে আসে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে বিষয়টি গুরুত্ব পায়। পরে বেসরকারি সংস্থা রাইটস যশোর ও অভিভাবকদের সঙ্গে এক বৈঠকে বেতন পরিশোধ এবং আটকে পড়াদের অতিদ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলেও ক্যারিয়ার ওভারসিসের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়। তারপর তিনি মাসের বেতন পরিশোধ করা হলেও দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

শতাধিক বাংলাদেশীর সঙ্গে বাগদাদে বন্দি অবস্থায় আছেন নাটোরের মো. হাফিজ (ছদ্মনাম)। তার মেয়ে ঝর্ণা আক্তার বলেন, আমার বাবাসহ অনেকেই একটি ভবনের মধ্যে বন্দি অবস্থায় রয়েছে। গত ১৬ মাসে আমরা মাত্র তিন মাসের বেতন পেয়েছি, আর কোনো অর্থ দেয়া হয়নি। প্রত্যেকের পরিবার থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। মামলা করা হয়েছে। আমি চাই, আমার বাবাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক।

ইরাকি অস্ত্রধারী প্রহরীদের নির্যাতনে প্রায় পঙ্গু হয়ে যাওয়া লক্ষ্মীপুর সদরের আবদুর রাজ্জাক দেশে ফিরেছেন গত ১৭ জুন। তিনি বলেন, ইরাকে নিয়ে আবু তোরাব হাউজিং কোম্পানিতে আমাদের ২ হাজার ৭০০ ডলারে বিক্রি করে দেয়া হয়। এর পর বাগদাদে নেয়া হয় অন্য কোম্পানিতে। কোনো কোম্পানিতেই কাজ নেই। বেতনও কিছুই দেয়া হচ্ছে না। দেশে আসতে চাওয়ায় রড ও পাইপ দিয়ে পায়ে আঘাত করে আমাকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। কাতারে নেয়ার কথা বলে ইরাকে নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। এজন্য তিনি মোট ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন ক্যারিয়ার ওভারসিসকে।

বন্দি ৭৩ জনের স্বাক্ষরসহ একটি পত্র নিয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে আসেন ফরিদুল ইসলাম ও আবু হানিফ। পত্রে এসব প্রতারণা ও নির্যাতনের ঘটনায় ক্যারিয়ার ওভারসিস জড়িত থাকার অভিযোগ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়েছে। একটি সেবরকারি সংস্থার সহায়তায় সে পত্রের অনুলিপি প্রবাসী কল্যাণ, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, বিএমইটির মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের আইজি বরাবরও পাঠানো হয়েছে।