অনলাইন প্রতিবেদক, ৯ জুলাই ২০১৩:
দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রীষ্মকালীন সেমিস্টারে যারা পিএইচডি এবং মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছেন তাদেরকে সম্মাননা দিয়েছে কোরিয়ায় বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের সংগঠন বিএসএকে। গত শনিবার এবং রবিবার দুইদিনব্যাপী বিএসএকে আয়োজিত গ্রীষ্মকালীন মিলনমেলায় এই সম্মাননা দেওয়া হয়। ডিগ্রীপ্রাপ্তদের সম্মাননা সনদ প্রদানের পাশাপাশি নবীন শিক্ষার্থীদেরকেও বরণ করে নেওয়া হয়।
পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনকারী একজন তার অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন ‘এটি সত্যিই ভাল উদ্যোগ, আপনজনদের পক্ষ থেকে এ ধরনের সম্মাননা পেয়ে আমি অভিভুত, এ ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক সে কামনাই করছি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যদি এ সব তরুণ বিজ্ঞানীদেরকে একত্রিত করে সংবর্ধনা দেয়া হয় তাহলে তারা দেশের কাজে উৎসাহ পাবেন এবং অর্জিত জ্ঞান দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। মাস্টার্স ডিগ্রী প্রাপ্ত এক শিক্ষার্থী বলেন দীর্ঘ প্রবাস জীবনে এত আনন্দময় মুহুর্ত আর আসেনি।
প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন ইন কোরিয়া (বিএসএকে) কর্তৃক দুই দিন ব্যাপী জমজমাট ‘গ্রীষ্মকালীন মিলন মেলা ২০১৩’ অনুষ্ঠিত হয় দেছন সী-বীচে। দক্ষিণ কোরিয়ার দেছন সী-বীচ ‘মাড ফেস্টিভাল’ এর জন্য বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। প্রতি বছর হাজার হাজার টুরিস্ট যেখানে আসেন ‘মাড ফেস্টিভাল’ এ অংশগ্রহণের জন্য।
কোরিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাংলাদেশি ছাত্রদের অভুতপূর্ব এক মিলনমেলায় পরিণত হয় অনুষ্ঠানটি। বিদেশের মাটিতে একসাথে অসংখ্য ছাত্রের সম্মিলন সত্যিই এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত পঞ্চম বারের মত এই ধরনের আয়োজন করা হলো।
অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছাত্ররা তাদের অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন কারো কোন অনুদান ছাড়াই নিজেদের টাকায় এত বড় অনুষ্ঠানই প্রমান করে আমরা পারব, যদি মেধাবী তরুণরা এভাবে দেশের প্রতিটি কাজেই সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে আসে। যে মুহুর্তে জাতি হিসেবে আমাদের পরিচিতি মোটেও সুখকর নয়, ঠিক সেই মুহুর্তে এ রকম ভাল উদ্যোগ আমাদের মনে আশার সঞ্চার করে। দূর্নীতি আর অস্থির রাজনীতির কারণে বিদেশে এমনিতেই বাংলাদেশের ভাবমুর্তি হতাশাব্যাঞ্জক তবুও আমরা চেষ্ঠা করছি। নিজেদের চেষ্টায় এমন কিছু করা যাতে এ দেশ আমাদের মেধাবী জাতি হিসাবে চিনতে পারে সে সাথে এ দেশের গবেষণা কর্মে বাংলাদেশি ছাত্রদের উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি মিলে।
উল্লেখ্য, দঃ কোরিয়ায় অনেক বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের যেমন চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন সহ অন্যান্য অনেক দেশের ইউনিক প্লাটফর্ম থাকলেও শুধু বাংলাদেশী ছাত্রদের কোন প্লাটফর্ম ছিলনা। বিএসএকে সে অভাব পু্রণে বিরাট ভুমিকা রেখেছে। বিএসএকের একজন এক্সিকিউটিভ মেম্বার জানান গত কয়েক বছর যাবত আমরা চেষ্টা করছি যাতে বিদেশে এসেও একসাথে সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারি, অন্তত সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করতে পারি। সে সুত্রেই বিএসএকের পথ চলা, পঞ্চম বারের মত এই সংবর্ধনার আয়োজন করতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত। প্রবাসী ছাত্রদের লেখা দিয়ে ‘মলাটবদ্ধ কালধ্বনি’ নামক পঞ্চম ই-বুক এর মোড়ক উন্মোচন করা হয় এই অনুষ্ঠানে।
এক নবীন তার অনুভূতিতে বলেন, বিদেশে এসে একসাথে অনেক বাংলাদেশি ছাত্র দেখে সত্যিই অবাক লাগছে! বিএসএকের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অনেকের সঙ্গেই তিনি পরিচিত হয়েছেন বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, বিএসএকের ফেসবুক গ্রুপে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ৫২২ জন, এবং www.bsak.org নামে একটি হোমপেজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছে যাতে প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য রয়েছে। কোরিয়ার এসে যদি কোন ছাত্র বিপদে পড়ে তাহলে যাতে সহজেই সবাই মিলে তাকে সাহায্য করতে পারে সেই লক্ষ্যই তারা কাজ করছেন বলে জানান। এই ওয়েবপেজে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশীপের তথ্য রয়েছে, দেশে থেকেই যাতে কোন মেধাবী ছাত্র জানতে পারে কোরিয়ার উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে।
প্রতিযোগীতামূলক বিশ্বে মেধার রাজ্যে জায়গা করে নিতে হলে এ ধরনের ইউনিক প্লাটফর্ম গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখবে বলে অনেকেই মতামত দেন। অনেকেই জানান, দেশের মাটিতে যা সম্ভব হয়না তাই বাস্তবায়ন করে দেখালেন বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একঝাঁক তরুণ মেধাবী।