Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

২২ গজে পা রাখার আগে কেমন ছিল তাদের জীবন

pathan-brothersবিশ্বজুড়ে এখন ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের পাশাপাশি হঠাৎ জ্বলে উঠেন তরুণরাও। তারপর তারকার তকমা। কত কাঠ-খর পুড়িয়ে তারা এই পর্যায়ে উঠে এসেছেন তা অনেকেরই অজানা। ভারতয়ি ক্রিকেটের তেমনই ১০ ক্রিকেটারদের গল্প বলা হলো এখানে-

১) পাঠান ব্রাদার্স: ভারতীয় ক্রিকেটে পাঠান ভাইদের ছোটবেলা কেটেছে মসজিদে৷ যে মসজিদে মাত্র মাসিক ২৫০ টাকায় ঝাঁড়ু দেয়ার কাজ করতে ইরফান ও ইউসুফের বাবা৷ পরে একটি ঘর নিলেও সেখানেই থাকতেন পরিবারের পাঁচজন৷ নতুন জুতো কেনার পয়সা না থাকায় পুরনো জুতো কিনে তা নিজেই সেলাই করতেন ইরফান৷ বাকিটা ইতিহাস৷ মাত্র ১৯ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক হয় ইরফানের৷ ২০০৬ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টের প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিক করে নজির গড়েন ভারতের বাঁ-হাতি সুইং বোলার৷ ২৯টি টেস্ট, ১২০টি ওয়ানডে এবং ২৪টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন ইরফান৷ দাদা ইউসুফ দেশের হয়ে ৫৭টি ওয়ানডে এবং ২২টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন৷ পরে ভদোদরায় বাংলো বানান পাঠান ব্রাদার্স।

chardike-ad
irfan
এখানেই থাকতেন ইরফান পাঠানরা

২) মুনাফ প্যাটেল: গুজরাতের ইকহারে জন্ম মুনাফ মুসা প্যাটেলের ছোটবেলা কেটেছে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে৷ বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর৷ শিশুশ্রমিক হিসেবে ভারতীয় দলের প্রাক্তন পেসার দৈনিক ৩৫ টাকা বেতনে কাজ করতেন টাইলস ফ্যাক্টরিতে৷তিন বেলা পেট ভরে খেতে না-পাওয়া মুনাফের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন অবাস্তব৷ জুতো কেনার পয়সা না থাকায় চপ্পল পরেই টেনিস বলে খেলতেন তিনি৷ গ্রামের এক ব্যক্তি এ দেখে মুনাফকে জুতো কিনে দেন এবং বরোদার এক ক্রিকেট ক্লাবে ওকে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন৷ পরে এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে ট্রায়ালে সুযোগ পান মুনাফ৷ সেখানে কিংবদন্তি অসি পেসার ডেনিস লিলির তত্ত্বাবধানে প্র্যাকটিস করেন বরোদার ডানহাতি৷ পের স্টিভ ওয়া মুনাফের জন্য সচিনের কাছে দরবার করেন৷ ২০০৬-এ টেস্ট অভিষেক হয় মুনাফের৷ দেশের হয়ে ১৩টি টেস্ট ও ৭০টি ওয়ান ডে খেলেছেন তিনি৷

৩) জহির খান: কপিল দেবের পর একমাত্র ভারতীয় পেসার যার দখলে তিন শ’র বেশি টেস্ট উইকেট রয়েছে৷ কিন্তু জহিরের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার রাস্তা ছিল অমসৃণ৷ মুম্বাই ন্যাশনাল ক্রিকেট ক্লাবে সুযোগ পাওয়ায় জহিরকে আন্টির সাথে মুম্বাইয়ে এক হাসপাতালের একটি বেডের মধ্য দিন কাটাতে হয়৷ কারণ তার আন্টি হাসপাতালে হেল্পারের কাজ করতেন৷দুইবেলা খাবারের পয়সাও ছিল জহিরের কাছে৷ না খেয়ে সকালে প্র্যাকটিসে যেতেন৷ মেন্টর সুধীর নায়েক জহিরকে মাসে পাঁচ হাজার টাকার কাজ দেন৷ তা দিয়েই সমস্ত খরচ চালাতেন ভারতীয় বোলিংয়ের ‘জ্যাক’৷ ২০০০ সালে কেনিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় ভারতীয় ক্রিকেটে সেরা বাঁ-হাতি পেসারের৷ ভারতের হয়ে ৯২টি টেস্ট এবং ২০০টি ওয়ান ডে খেলেছেন জহির৷

zahir-khan
জহির খান থাকতেন এখানে

৪) রবীন্দ্র জাদেজা: সৌরাষ্ট্রে জন্ম রবীন্দ্র অনিরুদ্ধ জাদেজার বাবা একটি বেসরকারি সংস্থায় সিকিউরিট গার্ডের কাজ করতেন৷ দারিদ্রতার সাথে লড়াই করা জাদেজার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল অলীক৷ তবুও চেষ্টা চালিয়ে যান৷ কিন্তু ২০০৫-এ দুর্ঘটনায় মায়ের মৃত্যুর পর ক্রিকেট ছেড়ে দিতে চেয়েছিল জাদেজা৷ কিন্তু বোন পার্টটাইম কাজ করে তার খেলার খরচ চালাতেন৷ ২০০৮-এ বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন জাদেজা৷ পরের বছরই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে অভিষেক হয় বাঁ-হাতি অল-রাউন্ডারের৷ এখন টিম ইন্ডিয়ার বিরাটের দলে অন্যতম সদস্য তিনি৷

৫) বিনোদ কাম্বলি: মুম্বাইয়ের বস্তি থেকে ক্রিকেটের রাজপথে আগমন ঘটে কাম্বলির৷ বাবা ছিলেন এক সামান্য মেকানিক৷ মাসে যার আয় ছিল মাত্র ৫০০ টাকা৷ একটি ঘরের ১৮ জন থাকত৷ শোনা যায়, ব্যাট কেনার জন্য চুরিও করেছিলেন কাম্বলি৷ কিন্তু চমক ঘটে স্কুল ক্রিকেটে সারদাশ্রম বিদ্যামন্দিরের হয়ে সচিন টেন্ডুলকারের সাথে তার ৬৬৪ রানের পার্টনারশিপ শুধু ভারতেই নয়, ক্রিকেটবিশ্বেও নজর কাড়ে৷ এর পর মাসে ২০০ টাকা পেতেন কাম্বলি৷ যা দিয়ে ক্রিকেটের খরচ চালাতেন সচিনের বন্ধু৷ ১৯৯১-এ শারজায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথমবার ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপান কাম্বলি৷ দুই বছর পর কলকাতায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক মুম্বইয়ের প্রতিশ্রুতিময় এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের৷ দেশের হয়ে ১৭টি টেস্ট এবং ১০৪টি ওয়ানডে খেলেন তিনি৷

kambli-house
জাতীয় দলে যোগ দেয়ার আগে এখানেই থাকতেন কাম্বলি

৬) মহম্মদ শামি: উত্তরপ্রদেশের আমরোহা জেলার সাহসপুর নামে এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম শামির বাবা ছিলেন এক দরিদ্র কৃষক৷ ক্রিকেটের প্রতি ছেলের আগ্রহ দেখে গ্রাম থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে মোরাদাবাদে এক ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে তাকে ভর্তি করেন বাবা৷ উত্তরপ্রদেশে অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ না পাওয়ায় শামিকে কলকাতায় পাঠান কোচ বদরুদ্দিন সিদ্দিকি৷ এখান থেকেই প্রথমে বাংলা এবং ২০১৬ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে ভারতীয় দলে ডাক পান শামি৷ যিনি এখন টিম ইন্ডিয়ার পেস বোলিংয়ের মূল সম্পদ৷

৭) হরভজন সিং: ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট প্রাপক ভাজ্জি বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের আর্থিক হাল ধরতে কানাডায় ট্রাক ড্রাইভার হওয়ার কথা ভেবেছিলেন৷ ১৯৯৮-এ দেশের হয়ে টেস্ট অভিষেক হলেও প্রথম আটটি টেস্টের পর দল থেকে বাদ পড়েছিলেন৷ কিন্তু ২০০১-এ অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ফের ভারতীয় দলে ডাক পান হরভজন৷ বাকিটা ইতিহাস৷ কলকাতা টেস্টে তার হ্যটট্রিক-সহ ১৩টি উইকেট নেন ভাজ্জি৷ চেন্নাইয়ে পরের টেস্টে ২০টি অজি উইকেটের মধ্যে ১৫টিই নেন টার্বুনেটর৷

৮) বীরেন্দ্র সেহওয়াগ: নজফগড়ের নবাব বলে পরিচিত সেহওয়াগ একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছেন৷ ৫০ জনের বেশি লোক এক সাথে থাকতেন৷ সেহওয়াগের বাবার গমের ব্যবসা ছিল৷ বাবা চাইতেন সেহওয়াগ বড় হয়ে এই ব্যবসা দেখুক৷ কিন্তু বীরুর তা পছন্দ ছিল না৷ প্রায় ৮৪ কিলোমিটার দূরে ক্রিকেট খেলতে যেতেন৷ সচিন টেন্ডুলোরের ব্যাটিং টিভিতে দেখে প্র্যাকটিস করতেন বীরু৷ বকিটা ইতিহাস৷ দেশের হয়ে ১০৪টি টেস্ট এবং ২৫১টি ওয়ান ডে খেলেছেন সেহওয়াগ৷ ১৯৯৯-এ মোহালিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে প্রথমবার ভারতীয় দলের জার্সি পড়েন বীরু৷

yadav
ভারতীয় দলে খেলার আগে এখানেই থাকতেন উমেশ যাদব

৯) উমেশ যাদব: ভারতীয় দলের পেসার উমেশের বাবা ছিলেন একজন খনি শ্রমিক৷ ক্রিকেট খেলার মতো অর্থ ছিল না৷ছোটবেলায় টেনিস বলেই খেলতেন উমেশ৷ কিন্তু বড় হয়ে পুলিশের চাকরি করার ইচ্ছে ছিল এই ডানহাতি পেসারের৷ কিন্তু ট্রায়ালে সুযোগ পাওয়ার পর ধীরে ধীরে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি৷ ২০১০-এ ভারতের জিম্বাবোয়ে সফরের দলে সুযোগ পান উমেশ৷ পরের বছর ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় ভারতীয় দলের এই স্পিডস্টারের৷

১০) রমেশ পওয়ার: দেশের হয়ে দুটি টেস্ট ও ৩১টি ওয়ানডে খেলা মুম্বাইয়ের এই অফ-স্পিনার জীবন সংগ্রাম অন্যদের অনুপ্রেরণা দেয়ার মত৷ ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ায় পর রমেশের বোন তাকে সাহায্য করেন৷ মোটা থাকার জন্য ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেক কটুক্তি শুনতে হয়েছিল রমেশকে৷ কিন্তু ২০০৪-এ ভারতের পাকিস্তান সফরে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর নিঃশব্দে সবকিছুর জবাব দেন মুম্বাইয়ের এই অফ-স্পিনার৷