Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ইতিহাস গড়েই জিতল শ্রীলঙ্কা

Srilanka-Zimbabweরীতিমত অবিশ্বাস্য। লঙ্কানদেরও সম্ভবত কেউ বিশ্বাস রাখতে পারেননি, তারা জিততে পারেন। ওয়ানডে সিরিজে অবিশ্বাস্যভাবে ৩-২ ব্যবধানে হারের পর মানসিকভাবে জিম্বাবুয়ে যেভাবে এগিয়ে গিয়েছিল, তাতে কলম্বো টেস্ট জয় যেন তাদের জন্য খুব সহজ একটি কাজ; কিন্তু শেষ দিনে এসে কিছুটা বুড়ো হাঁড়ের ভেলকি দেখাল শ্রীলঙ্কা।

যদিও দলের ক্রিকেটাররা অনেক তরুণ। তবুও জিম্বাবুয়ের চেয়ে তো অভিজ্ঞতায় এগিয়ে। সেই অভিজ্ঞতা বলেই শেষ দিনটা নিজেদের করে নিলো স্বাগতিকরা। শেষ মুহূর্তে অ্যাসেলা গুনারত্নে এবং নিরোশান ডিকভেলার দারুণ একটি জুটিতেই ৪ উইকেটের এক ঐতিহাসিক জয় পেয়ে গেলো শ্রীলঙ্কা।

chardike-ad

জয়ের জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কার সামনে লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল ৩৮৮ রান। নিজেদের মাঠে এত বড় লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের রেকর্ড লঙ্কানদের তো ছিলই না। এমনকি এশিয়া মহাদেশেও এত বড় রান তাড়া করার রেকর্ড নেই। শ্রীলঙ্কার মাটিতে ২০১৫ সালে ৩৮২ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিল পাকিস্তানের। এবার সেটাকেও পার হয়ে গেলেন দিনেশ চান্দিমালরা।

ক্রিকেটের ১৪০ বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাসে শ্রীলঙ্কার চেয়ে আরও বেশি রানে টেস্ট জয়ের রেকর্ড রয়েছে চারবার। তবে এর কোনোটিই এশিয়া মহাদেশে নয়। সবগুলোই এশিয়ার বাইরে। এশিয়ায় লঙ্কানদের এটা সবচেয়ে বেশি রানে জয়ের রেকর্ড।

লাঞ্চের পর বিলম্বিত দ্বিতীয় সেশনেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা। একমাত্র টেস্টের এই সিরিজে জয়ের মধ্য দিয়ে অধিনায়ক হিসেবে দারুণ অভিষেক হলো দিনেশ চান্দিমালেরও। নেতৃত্ব থেকে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ সরে যাওয়ার পর চান্দিমালকেই নতুন অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচন করা হয়।

থার্ড আম্পায়ারের একটি সিদ্ধান্তই অবশ্য বদলে দিয়েছে ম্যাচের ভাগ্য। ২৩৭ রান তখন শ্রীলঙ্কার স্কোর। ৩৭ রানে ব্যাট করছিলেন নিরোশান ডিকভেলা। এ সময় স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি। আম্পায়ারের কাছে আবেদন করা হলো। থার্ড আম্পায়ার কল করা হলে টিভি রিপ্লেতে দেখা গেলো দাগের ওপরই রয়েছে ডিকভেলার পা। স্ট্যাম্পিংয়ে ‘অন দ্য লাইন’ মানে পরিস্কার আউট। কিন্তু থার্ড আম্পায়ার, ভারতীয় চেত্তিহোদি শামসুদ্দিন দিলেন সবুজ বাতি জ্বালিয়ে। সবাই অবাক হলেও, এ যাত্রায় বেঁচে গেলেন ডিকভেলা।

এরপর আরও একবার জীবন পেলেন ডিকভেলা। লাঞ্চের পর পঞ্চম ওভারেই ডিকভেলার ক্যাচ ফেলে দেন উইকেটরক্ষক রেগিস চাকাভা। শেষ পর্যন্ত ডিকভেলা আউট হলেন ৮১ রান করে। আউট হওয়ার আগে অ্যাসেলা গুনারত্নের সঙ্গে ১২১ জুটি বেধে লঙ্কানদের জয় অনেকটাই ত্বরান্বিত করেন।

তবুও ডিকভেলা যখন আউট হন, তখনও লঙ্কানদের প্রয়োজন ছিল ৬৪ রান। এই বাকি কাজটা দিলরুয়ান পেরেরাকে সঙ্গে নিয়ে শেষ করে আসেন অ্যাসেলা গুনারত্নে। দু’জন মিলে শেষ পর্যন্ত ৬৭ রানের অপরাজিত জুটি গড়েন। ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন গুনারত্নে এবং ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন দিলরুয়ান পেরেরা।

চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে ৩ উইকেটে ১৭০ রান ছিল শ্রীলঙ্কার। জয়ের জন্য তখনও প্রয়োজন ছিল ২১৮ রানের। ৬০ রানে কুশল মেন্ডিস এবং ১৭ রানে উইকেটে ছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। শেষ দিনের শুরুতে এক ঘণ্টার মধ্যেই মেন্ডিস আর ম্যাথিউজের উইকেট তুলে নেয় জিম্বাবুয়ে। মেন্ডিস যোগ করেন আর মাত্র ৬ রান। ম্যাথিউজ আউট হন ২৫ রানে। অথ্যাৎ যোগ করেন ৮ রান।

এরপরই জুটি বাধেন ডিকভেলা এবং গুনারত্নে। দু’জনের ১২১ রানের জুটিই শ্রীলঙ্কাকে ঐতিহাসিক জয়টি এনে দিলো। এর মধ্যে নিশ্চিতই ভিলেনরূপে পরিগণিত হতেন চেত্তিহোদি শামসুদ্দিন।

গ্রায়েম ক্রেমার ৪ উইকেট নিয়েও দলকে বিরল একটি জয় এনে দিতে পারলেন না কেবল থার্ড আম্পায়ারের একটি ভুল সিদ্ধান্তে। ডিকভেলা যদি ৩৭ রানের মাথায় আউট হয়ে যেতেন, তাহলে দিনের বাকি অংশে লঙ্কানদের অন্য উইকেটগুলো হয়তো টপাটপ তুলে নিতে পারতো জিম্বাবুয়ে। কিন্তু একটি সুযোগ পেয়েই সেটিকে কাজে লাগিয়ে জিম্বাবুয়েকে ইতিহাস গড়া থেকে বঞ্চিত করলো শ্রীলঙ্কা।