মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ৩০টি পুলিশ পোস্টে কথিত ‘রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের’ হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ৭১ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে ২৪টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ছাউনিতে বিদ্রোহীদের হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১১ জনসহ ৩২ জনের প্রাণহাণি ঘটে। এরপর শুক্রবার সকাল থেকে সংঘর্ষ ও সহিংসতা চলতে থাকায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। খবর : রয়টার্স।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত ৩০টি পুলিশ পোস্টে হামলা হয়েছে, যাতে ৫৯ জন রোহিঙ্গা বিদ্রোহীর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১২ সদস্য নিহত হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্যের মধ্যে ১০ জন পুলিশ, এক সেনা সদস্য এবং একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা রয়েছেন বলে জানায় রয়টার্স।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে রাখাইনের মংডু ও বুথিদাউং এলাকার বিভিন্ন গ্রামে সমন্বিত এই হামলার সূচনা হয় বলে শুক্রবার মিয়ানমার সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়।
রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বড় ধরনের এই সমন্বিত হামলার ঘটনায় সঙ্কট নতুন মাত্রা পেল।
এদিকে, হামলার বিষয়ে শুক্রবার ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ)’ নামে একটি গ্রুপ দায় স্বীকার করেছে। এক সময়ে ‘হারাকা আল-ইয়াকিন’ নামে পরিচিত এই গ্রুপটিই গত বছরের অক্টোবরে পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছিল।
রোহিঙ্গা গেরিলাদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসী ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশ পোস্ট ঘিরে ফেলে এই হামলা চালায় বলে মিয়ানমার সরকারের বিবৃতির বরাতে জানায় সংবাদমাধ্যম মিজিমা। ওই সময় পাঁচ পুলিশ সদস্য এবং অন্তত সাতজন হামলাকারী নিহত হন।
ভোর ৩টার দিকে প্রায় দেড়শ হামলাকারী খামারা এলাকায় একটি সেনা ক্যাম্পে ঢোকার চেষ্টা করলেও প্রতিরোধের মুখে পিছিয়ে যায় বলে জানানো হয়েছে সরকারের বিবৃতিতে।
গত বছরের অক্টোবর মাসে একই ধরনের হামলায় নয় পুলিশ সদস্য নিহত হয়। এরপর থেকে বড় ধরণের সেনা অভিযান চালায় মিয়ানমার সরকার। ওই অভিযানে বেসামরিক রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া এবং ধর্ষণের মত অভিযোগ ওঠে।
সেনাবাহিনীর ওই দমন অভিযানের মুখে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান রাখাইন থেকে পালিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সে সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয় বলেও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
রয়টার্স বলছে, চলতি মাসে নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইনের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়গুলোয় নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। বৃহ্স্পতিবার রাতে শুরুর পর কিছু কিছু এলাকায় সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে এখনও সংঘর্ষ চলছে।
নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দুইটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি।