Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড পাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ ইবি ক্যাটাগরিতে

green-cardযুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করতে বাংলাদেশের মেধাবী এবং দক্ষ পেশাজীবীরা বেছে নিচ্ছেন ইবি-১ ক্যাটাগরির আবেদন। সাম্প্রতিক সময়ে, মেধাবী গবেষক, পেশাজীবী, সাংবাদিকদের অন্তত ২৫ জন আবেদন করেই পেয়েছেন ইবি-১ কোটার গ্রিন কার্ড। কর্মভিত্তিক এই অভিবাসন কোটায় বাংলাদেশের জন্য যত গ্রিন কার্ডের বরাদ্দ আছে, তার বিপরীতে আবেদন পড়ছে কমই। সে ক্ষেত্রে, এই কোটায় ১০টি দক্ষতা দেখানোর বিপরীতে ন্যূনতম ৪/৫টি দক্ষতার প্রমাণ দাখিল করতে পারলেই মিলছে গ্রিন কার্ড। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বুলেটিন তথ্য, অ্যাটর্নিদের বক্তব্য এবং যাঁরা এই কোটায় আবেদন করে সফল হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ওজোন পার্কে ড. বিলকিস রহমান সপরিবারে ইবি-১ কোটায় গ্রিন কার্ড পেয়েছেন নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। বিলকিস রহমান একজন গবেষক। ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমির অর্থায়নে ‘২১ শতকের নারী পুরুষের সম্পর্ক’ নিয়ে বই লেখেন। তাঁর সেই বইয়ের গবেষণা তথ্য দেশ–বিদেশের নানা জায়গায় পড়ার বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর গবেষণা কর্মকাণ্ডের অর্থায়ন এসেছে কানাডা ও ভারত সরকারের তরফে। নারীর সমতা নিয়ে তাঁর গবেষণালব্ধ কাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তথ্য–উপাত্ত দেখিয়ে তিনি স্থায়ী বসবাসের আবেদন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে এসে। আবেদন করার ৯ মাস ৬ দিনের মাথায় পরিবারসহ তাঁর গ্রিন কার্ড চলে এসেছে।

chardike-ad

বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের একজন শীর্ষস্থানীয় মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করতেন এম এম জসিম। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান। অসাধারণ মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে নিজেকে তথ্যপ্রমাণসহ উপস্থাপন করে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর আবেদন করে তিনি গ্রিন কার্ড পান ১০ মাসের মাথায়। ওই সময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত এম এম জসিমই ছিলেন প্রথম কয়েকজন আবেদনকারীর একজন।

এম এম জসিম ও বিলকিস রহমানের মতো আরও অন্তত ২০ জন আবেদন করেন এই কোটায়। কেউ ফটোসাংবাদিক হিসেবে, কেউ টিভির প্রযোজক হিসেবে, কেউ অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে, আবার কেউ ধর্মীয় সম্প্রতির শিক্ষক হিসেবে। আবেদনকারীরা, নিজেদের কর্মক্ষেত্রে সেরা কর্মী হিসেবে আবেদন করেছিলেন। তাঁদের প্রায় সবাই এখন সপরিবারে স্থায়ী বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড পেতে আগে যাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয়কে একমাত্র উপায় বলে মনে করতেন, তাঁদের অনেকেই এখন বিবেচনা করছেন ইবি-১ ক্যাটাগরিকেই।

ইবি-১ ক্যাটাগরিতে কেবল তাঁরাই যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের জন্য সুযোগ পান, যদি কেউ গবেষণা বা কর্মক্ষেত্রে অনন্য অসাধারণ দক্ষতার অধিকারী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর সেসব গুণাবলি বা দক্ষতা কীভাবে তিনি কাজে লাগাবেন। আর আমেরিকা কীভাবে সেটা থেকে উপকৃত হতে পারে, সেই সব কারণ দেখাতে হবে তথ্য-উপাত্তসহ।

তবে অনেক ক্ষেত্রে ইবি-১–এর কোটায় বাংলাদেশের জন্য যত অলিখিত কোটা আছে, তার বিপরীতে অনেক কম আবেদন পড়ছে। তাই ন্যূনতম যোগ্যরাও পেয়ে যাচ্ছেন গ্রিন কার্ড—এই মন্তব্য ইবি-১ আবেদন করে সফল হওয়া আইনি পরামর্শকদের একজন নাসরীন আহমেদের। তাঁর মতে, এমন অনেক ক্ষেত্র আছে, যেখানে একজন বাংলাদেশি হিসেবে কেউ আবেদন করলে যেই যোগ্যতা দেখাচ্ছেন, একজন চীনা বা ভারতীয় নাগরিক এর চেয়েও বেশি যোগ্যতা দেখিয়ে আবেদন করলেও তাঁরা প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন। কেননা প্রতিটি দেশের জন্য এই কোটায় গ্রিন কার্ড পাওয়ার আলাদা কোটা রয়েছে।

নাসরীন আহমেদ বলেন, যাঁরা ইবি-১–এ আবেদন করে সফল হচ্ছেন, আমাদের বিশ্বাস করতেই হবে যে তাঁরা আসলেই ব্যক্তিগত আর পেশাজীবনে অনন্য অসাধারণ গুণাবলির অধিকারী। তাঁরা তাঁদের কাজের প্রমাণপত্র আর অতীত কর্ম–অভিজ্ঞতা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ অথবা অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবেন বলে বিশ্বাস করছে অভিবাসন দপ্তর। তবে এটা কোনো সাধারণ ক্যাটাগরি নয়, তাই নিজেকে অনন্য অসাধারণ হিসেবে প্রমাণ করতে পারবেন না এমন কারও ক্ষেত্রে ইবি-১ আবেদন করলে তা বাতিল হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অভিবাসী হওয়ার যেসব প্রথা আছে যেমন রাজনৈতিক আশ্রয়, বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব, পারিবারিকভাবে অভিবাসী হওয়ার বাইরেও প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার গ্রিন কার্ড দেওয়া হয় ইবি-১ ও ইবি-৫ কোটায়। যাঁরা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে এই দেশের অভিবাসী হতে চান, তাঁদের জন্য আছে ইবি-৫ ক্যাটাগরি। এটাকে বলা হয় বিনিয়োগ কোটা। এই বিনিয়োগ কোটায় ১০ হাজার করে গ্রিন কার্ড ইস্যু করা হয়, যার সুযোগ নেন অনেকেই। এর বাইরে, সারা বিশ্ব থেকে এক্সট্রা অর্ডিনারি কোয়ালিফায়েড বা ইবি-১ ক্যাটাগরিতে ৪০ হাজার গ্রিন কার্ড দেওয়া হয়।

প্রতিটি দেশের জন্য গ্রিন কার্ড প্রদানের আলাদা কোটা ভাগ করা আছে। সব কোটাভিত্তিক গ্রিন কার্ডের যত ক্ষেত্র আছে, সেখান থেকেও আলাদা দেশের জন্য অন্তত ৭ শতাংশ গ্রিন কার্ড কোটা আবেদনকারীদের দেওয়ার রেওয়াজ আছে। সব মিলিয়ে একটি দেশ থেকে ২৫ হাজার ৬২০টির মতো করে গ্রিন কার্ড প্রদানের হিসাব আছে। ইউএস ভিসা বুলেটিন ২০১৭–এর তথ্য ঘেঁটে এসব উপাত্ত পাওয়া গেছে।

মিশিগানের একজন অ্যাটর্নি চেরিস এন ইনগ্রাম তাঁর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ভিসা বুলেটিনের তথ্যের বরাত দিয়ে লিখেছেন, ভারতীয় ও চীনা নাগরিকদের ইবি-১ গ্রিন কার্ড কোটা শেষ হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বুলেটিনের একটি চিত্র দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের মে মাসের ১১ তারিখে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন দপ্তর চীনা ও ভারতীয় নাগরিকদের তরফে ইবি-১ ক্যাটাগরিতে গ্রিন কার্ড ইস্যু আপাতত স্থগিত রেখেছে। তবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় গ্রিন কার্ডের আবেদন জমা দেওয়া অব্যাহত রেখেছেন চীনা ও ভারতীয় নাগরিকেরা। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ভারত, চীন, ফিলিপাইন ও মেক্সিকোর জন্য এক বছরে ৪০ হাজার ইবি-১ গ্রিন কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। সেই কোটা পূরণ হওয়ার পর আপাতত চীন ও ভারতের কেউ এই কোটায় আবেদন করলে আবেদন হয়তো গৃহীত হচ্ছে। তবে তাঁদের নামে গ্রিন কার্ড ইস্যু হচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন দপ্তর ইউএসসিআইএস-এর ওয়েবসাইটে ইবি-১-কে একটি কর্মভিত্তিক অভিবাসন পন্থা বলে বলা হয়েছে। শুধু শিক্ষক, গবেষক, বিরল দক্ষতার পেশাজীবী অথবা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার বা শীর্ষ কর্মী হিসেবে যাঁদের অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরাই এর যোগ্য হতে পারেন। প্রতিটি পেশার জন্য আলাদা গুণাবলি, নেতৃত্ব ক্ষমতা, বিচারক হিসেবে ভূমিকা পালন, ওই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তাঁর লেখালেখি, আবেদনকারীর কর্মদক্ষতা নিয়ে পত্রিকার প্রতিবেদন এবং গ্রিন কার্ড পাওয়ার পরও ওই ক্ষেত্রে তাঁর কাজ চালিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি—এসব বিবেচনা করেই প্রদান করা হয় এই গ্রিন কার্ড, যার সুযোগ নিতে পারেন বাংলাদেশি দক্ষ নাগরিকেরা।

সৌজন্যে: প্রথম আলো