Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আমিরাতের প্রথম নারী ডাক্তার জুলেখা দাউদের গল্প

julekha
ডা: জুলেখা দাউদ, আমিরাতের প্রথম মহিলা ডাক্তার

ভারতীয় নাগরিক জুলেখা দাউদকেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম নারী ডাক্তার বলে মনে করা হয়। এই দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পাল্টে দেয়ার ক্ষেত্রে এক বড় ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

জুলেখা দাউদের বয়স এখন ৮০। ১৯৬৩ সালে প্রথম যেদিন তিনি দুবাইতে এসে নামলেন, সেই দিনের কথা মনে করে তিনি বলেন, আমরা যখন নামলাম, তখন সেখানে কোন বিমানবন্দর পর্যন্ত নেই। কেবল একটা রানওয়ে। সেখানে প্রচণ্ড গরম ছিল যা সহ্য করা যায় না।

chardike-ad

সংযুক্ত আরব আমিরাতের এখনকার স্বাস্থ্য সেবার মান দেখলে সেসময়ের অবস্থা কল্পনাও করা যাবে না। তখন সেখানে হাসপাতাল বলতে কিছুই ছিল না। অন্যান্য দেশ থেকে ধার করে আনা ডাক্তার দিয়ে কোন রকমে স্বাস্থ্য সেবা চালাচ্ছিল তারা।

তিনি বলেন, কত রকম অসুখ-বিসুখে ভুগছিল তখন আমিরাতের মানুষ। যক্ষা থেকে শুরু করে ডায়রিয়া। মেয়েদের সন্তান প্রসব করানোর মতো মহিলা ডাক্তার পর্যন্ত ছিল না। অপুষ্টিতে ভুগছিল শিশুরা।

আমি তো দুবাই আসার আগে এই জায়গার নাম পর্যন্ত শুনিনি। এখানে আসার পরই বুঝতে পেরেছিলাম এখানকার জীবন কত কষ্টের।

amirat
মরুভূমির মাঝখানে একটা হাসপাতালে কাজ শুরু করেন তিনি।

তখন দুবাইতে এয়ারপোর্ট যেমন নেই, তেমনি নেই কোন সমূদ্র বন্দরও ছিল না। এয়ারকন্ডিশনিং ব্যবস্থা তখনো স্বপ্ন। একটা শহরে যে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা তার কিছুই ছিল না। বিদ্যুৎ থাকে না সবসময়।

দাউদের মতো সিরিয়া এবং লেবানন থেকে এসেছিলেন আরও অনেক ডাক্তার। তারা সেখানে কাজ করতে চাইছিলেন না। এরা ফিরেও গেছেন। কিন্তু দাউদ রয়ে গেছেন। তার মনে হয়েছিল এখানে অনেক কাজ করার আছে। তিনি বলেন, আমার মনে হয়েছিল এই লোকগুলোর আমাকে দরকার।

জুলেখা দাউদ একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। কিন্তু দুবাই তখনকার অবস্থার কারণে তাকে জেনারেল প্র্যাকটিশনার হিসেবেই কাজ শুরু করতে হলো। পোড়া রোগী থেকে শুরু করে সাপে কামড়ানো মানুষ, চর্মরোগ থেকে যে কোন কিছুরই চিকিৎসা করতে হচ্ছিল তাকে।

julekha
স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ড: জুলেখা দাউদ

ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে দুবাই পর্যন্ত তার এই দীর্ঘযাত্রা সহজ ছিল না। তিনি পাশ করেছিলেন নাগপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে। একটি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবার তাদের অবিবাহিতা মেয়েকে কিভাবে এত দূর দেশে যেতে দিয়েছিল? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি তখন অচিন্তনীয় ব্যাপার ছিল। কিন্তু তার বাবা-মা তাকে উৎসাহ এবং সমর্থন যুগিয়েছিলেন।

দুবাইতে তার প্রথম কাজ পড়েছিল মরুভুমির মাঝে এক কোন রকমে দাঁড় করানো অস্থায়ী হাসপাতালে। সেখানে চারিদিকে উপজাতীয়রা থাকতো। কয়েক মাস পর তাকে বদলি করা হলো শারজায়।

তখন দুবাই থেকে শারজাহ যাওয়ার কোন পাকা রাস্তা ছিল না। তাদের গাড়ি মরুভূমিতে বার বার আটকে যাচ্ছিল। দিনে দিনে দাউদের সুখ্যাতি বাড়তে লাগলো। পেশায় উন্নতি হতে লাগলো। স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন তিনি।

amirat-hospital
ডা: দাউদ এখন তিনটি বড় হাসপাতালের মালিক

১৯৭১ সালে যখন সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠিত হলো, তিনি আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেলেন। এরপর তিনি নিজেই স্বাস্থ্য খাতে উদ্যোক্তার ভূমিকায় নামলেন। এখন তিনি তিনটি বড় হাসপাতালের মালিক। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শাসকরাই তাকে সেদেশে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ যোগান।

দুবাই এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি একটা আলাদা স্থান রয়েছে তার হৃদয়ে। এখন তিনি অনেকটা সেমি-রিটায়ার্ড জীবন যাপন করছেন। বেশিরভাগ সময় কাটে শারজায়। সেখানে প্রতিদিন দু’ঘন্টা অন্তত নিজের হাসপাতালে গিয়ে কাজ করেন। তবে নিজের ভারতীয় পাসপোর্ট এখনো আছে তার। নিজের জন্মভূমির সঙ্গে সম্পর্কের কথা তাকে মনে করিয়ে দেয় এটি। ভারতে ফিরতে চান কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, এখন আমি এখানকারই মানুষ। ভারতের সঙ্গে আমার সম্পর্ক থাকবে। সেখানেই আমার সব মানুষ। কিন্তু এখন আমার জায়গা এটাই।