Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যুক্তরাষ্ট্রে স্বামী-স্ত্রী-সন্তান ছাড়া অভিবাসন নয়

americaঅভিবাসন নিয়ে বিভক্তির বক্তব্য দিয়ে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্টেট অব ইউনিয়ন বক্তৃতায় ইমিগ্রেশন নিয়ে চার দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। পারিবারিক অভিবাসনে স্বামী বা স্ত্রী এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান ছাড়া অন্য স্বজনদের নিয়ে আসার পথ বন্ধ করার প্রস্তাব করেছেন। পারিবারিক অভিবাসন বন্ধের প্রস্তাব নিয়ে কথা বলার সময় কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট সদস্যরা দুয়োধ্বনি তোলেন। ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দেওয়া বক্তব্যে অভিবাসন নিয়ে তাঁর চলমান বিতর্ককেই চাঙা করে দিয়েছেন। ঐক্যের বদলে অনৈক্যই তাড়া করবে আগামী দিনগুলো, এমন আভাস জোরালো হয়ে উঠেছে।

যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি—উভয় দলের নেতা-কর্মীদের মতভেদ ভুলে অভিবাসন ও অবকাঠামোগত বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

chardike-ad

অভিবাসন নিয়ে চার দফা প্রস্তাবের শুরুতেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ডাকা কর্মসূচিতে ঝুলে থাকা ১ কোটি ৮ লাখ অভিবাসীকে তিনি ক্রমান্বয়ে নাগরিকত্ব দিতে চান। অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়ে আমেরিকায় এসে যারা কাগজপত্রহীন অভিবাসী হিসেবে সমস্যার জীবন কাটাচ্ছে, তাদের সমস্যার সুরাহার প্রস্তাব দিয়েই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সীমান্তে তাঁর দেয়াল নির্মাণে অর্থ বরাদ্দের কথা বলেছেন।

তৃতীয় প্রস্তাবে বলেছেন লটারি ভিসায় গ্রিনকার্ড পাওয়ার কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়া। তাঁর শেষ প্রস্তাবটি পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করার। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, চলমান ভঙ্গুর অভিবাসন আইনে একজন অভিবাসী পারিবারিক অভিবাসনের মাধ্যমে অসংখ্যজনকে আমেরিকায় নিয়ে আসতে পারে। এই ব্যবস্থা বন্ধের জন্য তিনি স্বামী বা স্ত্রী এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান ছাড়া পারিবারের অন্যদের অভিবাসন বন্ধ করার প্রস্তাব দেন।

স্টেট অব ইউনিয়নের বক্তৃতার সময় এই একবারই কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যদের দুয়োধ্বনি তুলে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়। ফলে ইমিগ্রেশন নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই প্রস্তাব আগামী দিনে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘এক লক্ষ্যে কাজ করতে আজ আমি আমাদের সব বিভেদ সরিয়ে রাখার কথা বলছি। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের যা প্রাপ্য, অর্থনীতির জন্য যা প্রয়োজন, সেই নিরাপত্তা, দ্রুততা, নির্ভরযোগ্যতা এবং আধুনিক অবকাঠামো দেওয়ার বিষয়ে উভয় দলকে এক হওয়ার আহ্বান জানাই।’ গত এক বছরে ট্রাম্প প্রশাসন অবিশ্বাস্য অগ্রগতি ও অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন সময়। আমাদের স্বপ্ন নিয়ে বাঁচার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর তৈরি হয়নি।’

ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকা নির্মাতার জাতি। আমরা এক বছরে এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং তৈরি করেছি। এটা কোনো পাগলামি নয়।’ ট্রাম্প আরও বলেন, নির্বাচনের পর থেকে প্রায় ২৪ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ কর্মসংস্থান শিল্প খাতে। যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণে দেড় ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘নতুন সড়ক, সেতু, মহাসড়ক, রেলপথ ও নৌপথ তৈরি করব আমরা।’

উন্মুক্ত সীমান্তের বিষয়ে নিজের কঠোর অবস্থানের কথা আবারও তুলে ধরলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য অবারিত সীমান্ত দিয়ে ঢুকে পড়া দুষ্কৃতকারীদের দায়ী করেন তিনি। ‘স্টেট অব ইউনিয়ন’ ভাষণের স্থলে উপস্থিত ছিলেন এমএস-১৩ (থারটিন) নামের কুখ্যাত গোষ্ঠীর হাতে নিহত দুই শিশুর মা-বাবারা। তাঁদের দিকে তাকিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘পুরো যুক্তরাষ্ট্র এই শোকে সমব্যথী। উন্মুক্ত সীমান্ত বয়ে এনেছে অস্ত্র, সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আর এতে প্রাণ গেছে নিরীহ মানুষের।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা তাঁর দায়িত্বের অংশ বলে ঘোষণা করে ট্রাম্প বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে। দীর্ঘ ভাষণে প্রেসিডেন্ট তাঁর নিজের সাফল্যগাথাই বলে গেছেন। বলেছেন তাঁর নিজস্ব ধারণার পরিকল্পনার কথা। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বলে ট্রাম্প প্রচার চালিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ভাষণের অধিকাংশজুড়েই ছিল তাঁর এই ধারণার প্রতিফলন। ট্যাক্স কাট, বাণিজ্য ও উৎপাদনে সরকারি নিয়মনীতি শিথিল করাসহ দেশের অর্থনীতির সাফল্যকে নিজের সাফল্য হিসেবে তিনি তুলে ধরেন।

স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে দেওয়া ভাষণে কংগ্রেসম্যান জো কেনেডি বলেছেন, ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম বছরেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত একটি দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেছেন, দেশের প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোনো বাহবা পেতে পারেন না। প্রেসিডেন্ট ওবামার সময় থেকে দেশের অর্থনীতিতে এমন সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, বর্তমান ট্যাক্স কাট ধনীদের উপকার করবে। গরিব ও মধ্যবিত্তদের অর্থে ধনীদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সিনেটে ডেমোক্র্যাট দলের নেতা সিনেটর চার্লস শুমার বলেছেন, আমেরিকার আজকের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামাকে ধন্যবাদ জানানো।

সূত্র: প্রথম আলো