Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দক্ষিণ কোরিয়ার ১০টি নজরকাড়া দিক

এই আধুনিক বিশ্বে নাগরিক সুযোগ সুবিধা ও উন্নত জীবনধারার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া বেশ পরিচিত। পাহাড়ে ঘেরা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ও প্রযুক্তির অপূর্ব সুন্দর মনোরম পরিবেশের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। রাস্তা ঘাটে সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ছোঁয়া। জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধির মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া আজ উন্নতির চরম শিখরে। কঠোর পরিশ্রমী হিসাবে পরিচিত এশিয়ার অন্যতম এই দেশে ১৯৭০ সালেও দেশটির মাথাপিছু আয় ছিল ১৭০ ডলার। এখন তা প্রায় ৩২ হাজার ডলারেরও বেশি।

দক্ষিণ কোরিয়া আজ বিশ্বের তৃতীয় প্রযুক্তির দেশ। দেশ জাতিভেদে সামাজিক রীতি কিংবা সাংস্কৃতির পার্থক্য চোখে পড়ে পৃথিবী জুড়ে। দক্ষিণ কোরিয়ায় কিছু বিষয় সম্পর্কে জানাবো যা দেশটিতে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। এইসব জিনিস অন্য দেশে সাধারণত চোখে পরে না। পৃথিবীর আর কোথাও দেখা গেলেও কোরিয়ার মত এতোটা স্বাভাবিক নয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় যদি আপনি ভ্রমণে কিংবা চাকরির উদ্দেশ্যে আসেন তাহলে যে স্বাভাবিক ১০ টি বিষয় চোখে পরবে এবং আপনার নজর কাড়বে তা উল্লেখ করছি।

chardike-ad


১) গর্ভবতী নারীদের সুরক্ষা: শুধু দক্ষিণ কোরিয়ায় গর্ভবতী নারীদের প্রতি রাষ্ট্রের মনোভাব সত্যিই সবাইকে অবাক করে দেওয়ার মত। দেশটির সরকার গর্ভবতীদেরকে এককালীন ৫০০ মার্কিন ডলার দিয়ে থাকে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধার মধ্যে এটি অন্যতম দৃষ্টান্ত। কোরিয়ায় বাসে, সাবওয়েতে কিংবা পার্কিংয়ে গর্ভবতীদের জন্যে আলাদা সুবিধা রয়েছে যা দক্ষিণ কোরিয়াতেই চোখে পরবে।


২) ডিজিটাল বাস স্টপেজ: প্রায় প্রতিটি বাস স্টপেজে একটি করে তথ্য সম্বলিত ডিজিটাল লাইভ স্ক্রিন রয়েছে। ওই স্টপেজের সব বাসের আসা-যাওয়ার সময়সহ অন্যান্য তথ্য সঠিক সময় দেওয়া থাকে। সময়ের গুরুত্ব এই দেশে অনেক বেশি। আপনি ঘরে বসেই আপনার মুঠোফোনে সঠিক সময় দেখেই বের হতে পরবেন, বিশ্বের আর কোথাও বাস স্টপেজগুলোতে এতটা আয়োজন রয়েছে বলে মনে হয় না।


৩) কেনার আগেই খাবারের স্বাদ: খাবারের স্বাদ নিয়ে ভাবছেন, কিন্তু খেয়ে দেখার সুযোগ তো আর নাই। আর এই ধারণাটি একেবারে ভুল প্রমাণ করেছে কোরিয়ান নাগরিকরা। প্রতিটি খাবারের দোকানে ক্রেতাদের জন্যে বিশেষ সুবিধা রয়েছে। ফল কিংবা খাবার কেনার আগে তা খেয়ে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। আপনি যাই কেনেন না কেন, তা সামনে অল্প পরিমাণে রেখে দেয়া থাকে। ওগুলো খেয়ে বুঝে নিতে পারেন কেমন হবে সে খাবারের স্বাদ। বিশেষ করে মার্টগুলোতে এই সুব্যব্যস্থা রাখা হয়।

৪) উপহার হিসেবে টয়লেট টিস্যু: বাস্তবজীবনে কাজে লাগে এমন উপহার হিসবে খুব বেশি পছন্দ করেন কোরিয়ান নাগরিকরা। কাজেই কেউ যদি টয়লেট টিস্যু উপহার দেয় তাহলে কোরিয়ানরা অনেক খুশি হয়। নতুন বাসায় উঠলে বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনদের খাওয়ানোর রেওয়াজ আছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এইসব আয়োজনেও বেশিরভাগ উপহার হিসেবে টয়লেত টিস্যুসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়া হয়।

৫) চার্চে ফ্রি চিকিৎসা: দেশটির চার্চগুলো আগতদের জন্যে কিছু না কিছু উপহারের ব্যবস্থা রাখে। প্রার্থনার পর সবাই এই উপহার পান। চার্চে প্রার্থনার সাথে সাথে অনেকেই দন্তচিকিৎসক এবং হেয়ার স্টাইলারের কাছ থেকে ফ্রিতে সেবা নিতে আসেন। পুরো কোরিয়া জুড়ে এমন উপহার প্রতিবছর ১০ লাখ মানুষ পেয়ে থাকেন।

৬) মধ্যরাত পর্যন্ত পড়ালেখা: বর্তমান যুগে দক্ষিণ কোরিয়ায়  ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার চাপ অনেক বেশি। তাই বলে যে আগে ছিল না তা কিন্তু নয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় হাইস্কুল পড়ুয়াদের নিয়মিতভাবে অন্তত মধ্যরাত পর্যন্ত লেখাপড়া করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে দিনরাত পড়াশোনা করা যেন একটা রীতি। মধ্যরাত পর্যন্ত পড়তে হবে এটা যেনো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়।


৭) যুগল পোষাক: প্রেমিক প্রেমিকা কিংবা স্বামী স্ত্রী একই পোশাক পরতে পছন্দ করে কোরিয়ায়। ম্যাচিং করা পোশাক এখানে দারুণ জনপ্রিয়। অন্য দেশেও ম্যাচিং করা পোশাকের বেশ জনপ্রিয়তা রেয়েছে কিন্তু কোরিয়ানদের বিষয়টি নজরে পড়ার মতো। তাদের এ ধরনের পোশাকের জন্যে আলাদা ফ্যাশন হাউজ রয়েছে প্রতিটি শহরে।

৮) শিক্ষকদের জন্য কফি: শিক্ষকদের কোনো উপহার দিতে চান। আপনি অনেক কিছুই ভেবে থাকতে পারেন, কি উপহার দেওয়া যায়। কিন্তু কোরিয়ায় শিক্ষকদের জন্যে সেরা উপহার হলো এককাপ কফি কিংবা কয়েকটি ক্যান্ডি। আর কফির কাপের পাশে কয়েকটি ক্যান্ডি থাকলে তো আর কথাই নেই।

৯) সাবওয়ে যেন পার্কের রাইড: কোরিয়ার সাবওয়ের কারগুলোতে প্রবেশ করলে মনে হবে কোনো বিনোদন পার্কের কারে উঠে পড়েছেন। একবার যদি আপনি কোরিয়ায় আইটিএক্স বা কেটিএক্সে ভ্রমণ করেন তাহলে আপনার মনে হবে বিমানে ভ্রমণ করছেন। বিভিন্ন শহরে ড্রাইভারবিহীন চলতে থাকা মনোরেলে উঠলে মনে হতে পারে আপনি কোন পার্কের রাইড চড়ছেন।

১০) জন্মহার বাড়াতে অভিনব উদ্যোগ: দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ যথেষ্ট কাজপাগল। আর এই মানুষগুলোর জন্যে কাজের সীমা নির্ধারিত নেই। কিন্তু জন্মহার বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন ও অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার। দেশটির কর্মীরা এখন থেকে ৬৮ ঘন্টার জায়গায় কাজ করবেন ৫২ ঘন্টা। এর মাধ্যমে এখন থেকে সপ্তাহে ১৬ ঘণ্টা বেশি ছুটি পাবেন তারা। জন্মহার বাড়ানোর লক্ষ্যে এমন নিয়ম করা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়।

লেখক- মোহাম্মদ আল আজিম, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে