Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

রেমিট্যান্সে সারাবিশ্ব বাংলাদেশ নবম, প্রবৃদ্ধি ৫৪ শতাংশ

remittance-drop

২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রায় ৪১ শতাংশই এসেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে। বিগত অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ১৬ লাখ ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ২৩ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশ জোগান দিয়েছে এ রেমিট্যান্স।

chardike-ad

উপর্যুপরি পতনের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে রেমিট্যান্স অন্তঃপ্রবাহ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছে রেমিট্যান্স। এর আগে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পরপর দুবার রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি হোঁচট খায়। যদিও গত এক দশকের সিংহভাগ সময়ে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৬৮ কোটি ৯২ লাখ ডলার। সে হিসেবে গত ১০ বছরে দেশে রেমিট্যান্স অন্তঃপ্রবাহে ৫৪ দশমিক ৬২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০০৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এক দশকে প্রবাসীরা ১৩ হাজার ১৮৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ১০ লাখ ১৩ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। এ সময়ে জীবিকার তাগিদে ৫৫ লাখ ৮৮ হাজার ৭২৬ জন বাংলাদেশী বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন দেশে থাকা প্রায় ১ কোটি প্রবাসী বাংলাদেশী দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছেন। গত এক দশকে বাংলাদেশীদের জন্য নতুন নতুন শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়েছে। দক্ষ জনশক্তি রফতানির সুবাদে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়ছে। গ্রামাঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে যাওয়ায় প্রবাসীরা বৈধ পন্থায় রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এ ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকলে আগামীতে জিডিপিতে প্রবাসীরা আরো বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে তারা মতপ্রকাশ করেন।

প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির ‘লাইফলাইন’ হিসেবে কাজ করছেন বলে মনে করেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও গবেষক ড. জায়েদ বখত। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সবসময়ই বাণিজ্য ঘাটতিতে থাকে। রফতানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় অনেক বেশি হওয়াই এ ঘাটতির কারণ। বাণিজ্যের ঘাটতি পুষিয়ে সরকারের চলতি হিসাবকে উদ্বৃত্ত রাখতে নিয়ামক ভূমিকা পালন করছে রেমিট্যান্স। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে দেশের রিজার্ভ।

তিনি বলেন, অতীতের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষ জনশক্তি আমরা বিদেশে পাঠাতে পারছি। তবে এ সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। আমাদের চেয়ে অনেক কম জনশক্তি বিদেশে পাঠিয়ে ফিলিপাইন অনেক বেশি রেমিট্যান্স আয় করে। দক্ষ জনশক্তি রফতানির মাধ্যমেই এটি সম্ভব হয়েছে। বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর আগে সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আসে ৭৯১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়ে ৯৬৮ কোটি ৯২ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। ওই অর্থবছরে রেমিট্যান্স অন্তঃপ্রবাহে ৩২ দশমিক ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। এরপর ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি এসেছে। প্রথমবারের মতো ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে বছর মোট রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৯৮ কোটি ৭৪ লাখ ডলার।

প্রবাসীরা ২০১০-১১ অর্থবছরে ১ হাজার ১৬৫ কোটি ডলার, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৩৪ লাখ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৪৬ কোটি ১১ লাখ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১ হাজার ৪২২ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠায়। দেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। সে বছর প্রবাসীরা ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ দশমিক ৫১ শতাংশ কমে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলারে নেমে যায়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমে রেমিট্যান্স ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে ঠেকে।

উপর্যুপরি দুই বছর রেমিট্যান্স প্রবাহে অস্বাভাবিক পতনের পর নানামুখী উদ্যোগ নেয় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। কড়াকড়ি আরোপ করা হয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবায়। হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন ও মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে নেয়া হয় কার্যকর ব্যবস্থা। এর ফলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ১৬ লাখ ডলারে উন্নীত হয়। চলতি অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধির এ ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রয়েছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, গত ১০ বছরে ৫৫ লাখ ৮৮ হাজার ৭২৬ জন বাংলাদেশী উপার্জনের উদ্দেশ্যে বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে ২০১৭ সালে রেকর্ড ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন বাংলাদেশী বিভিন্ন দেশে পাড়ি দেন। গত বছর বিদেশগামী জনশক্তির মধ্যে সাড়ে ৫ লাখই গেছেন সৌদি আরবে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ১০ রেমিট্যান্স সংগ্রাহক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নবম স্থানে রয়েছে। ২০১৭ সালে ৬৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স গ্রহণের মাধ্যমে এ তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত। ৬৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স নিয়ে চীন রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। শীর্ষ রেমিট্যান্স সংগ্রাহক দেশের মধ্যে আরো রয়েছে— ফিলিপাইন (৩৩ বিলিয়ন), মেক্সিকো (৩১ বিলিয়ন), নাইজেরিয়া (২২ বিলিয়ন), মিসর (২০ বিলিয়ন), পাকিস্তান (২০ বিলিয়ন), ভিয়েতনাম (১৪ বিলিয়ন)। বাংলাদেশ ১৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স উপার্জনের মাধ্যমে তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে। দশম স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া গত বছর রেমিট্যান্স উপার্জন করেছে ৯ বিলিয়ন ডলার। সূত্রঃ বণিকবার্তা।