Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দলটি যখন পাকিস্তান!

newzealandক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। এটা সবাই জানে। তবে এই গৌরবময় অনিশ্চয়তাকে আরও অনিশ্চিতের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে যে দলটি, তার নাম নিঃসন্দেহে পাকিস্তান। এই একটি দল সম্পর্কে আগাম ভবিষ্যদ্বানী করতে সাহস করে না কেউ। বাজিকররা বাজি ধরতেও সাহস করে কম। কারণ, এই ক্রিকেট ইতিহাসে এই দলটি কখন কি করে বসে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। খোদ পাকিস্তানিরাও জানে না, তারা কখন জ্বলে উঠবে, কখন ফ্লপ হয়ে যাবে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আবুধাবি টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে নিশ্চিত জয়ের পথে পাকিস্তান। অনেকে তো জয় ধরে নিয়েই রিপোর্ট সাজিয়ে বসেছিল। কিন্তু দলটি যে পাকিস্তান! তাদের খেলায় টান টান উত্তেজনা তৈরি হবে না, নাটকের চেয়েও নাটকীয় কিছু ঘটে যাবে না, থ্রিলারের জন্ম হবে না, খেলোয়াড় থেকে দর্শক- সবাই স্নায়ুচাপে ভুগবে না, তা কি করে হয়! তাহলে যে সেটা পাকিস্তানের খেলা বলে মনে হবে না!

chardike-ad

আবু ধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে কিউইদের বিপক্ষে টেস্টের চতুর্থ দিনে এসে তেমন অবস্থাই তৈরি করেছে পাকিস্তান। টান টান উত্তেজনা ভরা এই ম্যাচে নাটকের চেয়েও বেশি নাটকীয়তা জন্ম দিয়ে শেষ পর্যন্ত ৪ রানে হেরে গেল পাকিস্তানিরা! একা এক প্রান্তে লড়াই করেও পারলেন না আজহার আলি। নিউজিল্যান্ডের অভিষিক্ত স্পিনার অ্যাজাজ প্যাটেলের ঘূর্ণিতেই শেষ হয়ে গেলো সরফরাজ আহমেদের দল। অ্যাজাজ প্যাটেল একা নেন ৫ উইকেট।

১৬৪ রানে ৯ম উইকেটের পতনের পর শেষ উইকেট জুটিতে শেষ জুটিতে মোহাম্মদ আব্বাসকে নিয়ে প্রায় ৭ ওভার একা ব্যাট করে যান আজহার আলি। প্রতি ওভারের শেষে ১ রান নিয়ে স্ট্রাইকে চলে যান তিনি। আব্বাসকে স্ট্রাইকই দিলেন না, আউট হয়ে যাওয়ার ভয়ে। শেষ পর্যন্ত আজহার আলি নিজেই পারলেন না ঘূর্ণিতে টিকে থাকতে। অ্যাজাজ প্যাটেলের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে শিকার হলেন এলবিডব্লিউর।

২৩.৪ ওভার বল করে ৪টি মেডেন, ৫৯ রান দিয়ে অ্যাজাজ প্যাটেল একাই নিলেন ৫ উইকেট। প্রথম ইনিংসে তিনি নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। ৪ রানের থ্রিলার জয়ের সেরা নায়ক হয়েই থাকলেন ৩০ বছর বয়সে অভিষেক হওয়া এই স্পিনার। ম্যাচ শেষে যে সেরার পুরস্কার উঠলো তার হাতে!

অথচ জয়ের জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল মাত্র ১৭৬ রান। তৃতীয় দিন বিকেলেই কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩৭ রান সংগ্রহ করে ফেলেছিল তারা। শেষ দুই দিনে তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন মাত্র ১৩৯ রান। হাতে উইকেট পুরো ১০টি।

এমন পরিস্থিতিতে আজ চতুর্থ দিন সকালে ব্যাট করতে নেমে আর মাত্র ৩ রান যোগ করার পরই বিচ্ছিন্ন হয় ওপেনিং জুটি। আগের দিনের ২৫ রানের সঙ্গে মাত্র ২ রান যোগ করে আউট হয়ে যান ওপেনার ইমাম-উল হক। তিনি করেন ২৭ রান। নিজের নামের পাশে ১০ রান যোগ করে আউট হয়ে যান মোহাম্মদ হাফিজও।

সেই যে বিপর্যয় শুরু, তাতে কিছুটা বাধ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন আজহার আলি এবং আসাদ শফিক। দু’জনের ব্যাট থেকে আসে ৮২ রানের দারুণ এক জুটি। ৪৮ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর আজহার আর আসাদ শফিকের ব্যাটে ১৩০ পর্যন্ত চলে গিয়েছিল পাকিস্তান। ৪৫ রান করে নেইল ওয়াগনারের বলে উইকেটের পেছনে আসাদ শফিক ক্যাচ দেয়ার পরই বিপর্যয় শুরু হয় পাকিস্তানের।

সেই বিপর্যয় সামাল দিতে পারেননি আর কেউ। শুধু আসা-যাওয়ার মিছিলে ছিলেন বাবর আজম, সরফরাজ আহমেদ, বিলাল আসিফ, ইয়াসির শাহ এবং হাসান আলিরা। এর মধ্যে বাবর আজমের দুর্ভাগ্য, রান আউটের শিকার হয়েছিলেন ১৩ রান করার পর। বাকিদের মধ্যে সরফরাজ করেন কেবল ৩ রান। বাকিরা রানের খাতাই খুলতে পারেননি।

অভিষিক্ত বাম হাতি স্লো অর্থোডক্স অ্যাজাজ প্যাটেলের ঘূর্ণিতেই শেষ হয়ে যায় পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। টানা উইকেট নিতে শুরু করেন তিনি। ফিরিয়ে দেন সরফরাজ আহমেদ, বিলাল আসিফ এবং হাসান আলিকে। ইয়াসির শাহকে ফিরিয়ে দেন ওয়াগনার।

তবে একদিনে যেমন অ্যাজাজ প্যাটেলের ঘূর্ণি, অন্যদিকে ছিল পাকিস্তানের আজহার আলির প্রতিরোধ। একাই লড়াই করলেন তিনি। এক পাশে যখন একের পর এক উইকেট পড়ছিল পাকিস্তানের, তখন অন্যপাশে আজহার আলিই লড়াই করে গেলেন একা। শেষ পর্যন্ত ৬৫ রান করেন তিনি।

প্রথম দিন টস জিতে ব্যাট করতে নেমেছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু পাকিস্তানি বোলারদের তোপের মুখে মাত্র ১৫৩ রানেই অলআউট হয়ে যায় কিউইরা। জবাব দিতে নেমে পাকিস্তান অলআউট হয় ২২৭ রানে। ৭৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে নিউজিল্যান্ড। এবারও খুব বেশিদুর যেতে পারেনি তারা। দুই পেসার এবং স্পিনার- হাসান আলি ও ইয়াসির শাহের তোপের মুখে অলআউট হয়ে যায় মাত্র ২৪৯ রানে। দুই বোলারই নেন সমান ৫টি করে উইকেট।

ফলে চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য ১৭৬ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় পাকিস্তানের সামনে। এই লক্ষ্যও তারা পাড়ি দিতে পারলো না। অলআউট হয়ে গেলো ১৭১ রানে। হেরে গেলে মাত্র ৪ রানের ব্যবধানে।