Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রার্থী শূন্য আসন নিয়ে চিন্তিত বিএনপি

bnpbnpভোটের মাঠের প্রচার-প্রচারণায় প্রতিকূল পরিবেশে থাকা বিএনপির চিন্তা এখন আইনি জটিলতায় ধানের শীষের প্রার্থীশূন্য হওয়া আসনগুলো নিয়ে। দলটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আদালতের চূড়ান্ত রায়ে প্রার্থীশূন্য আসনগুলোতে বিকল্প প্রার্থী দেওয়া হবে। এজন্য প্রার্থী খুঁজছেন দলের নেতারা।

যেখানে নিজেদের বা জোটের বিকল্প প্রার্থী নেই সেখানে সমমনা দল কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়ার কথা ভাবছে দলটি। শূন্য আসনে যাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরাও রয়েছেন।

chardike-ad

ইতিমধ্যে হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে যেসব আসনে বিএনপির প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে, সেসব আসনে পুনঃতফসিলের অথবা ওইসব আসনে বিএনপির অন্য বৈধ প্রার্থীদের প্রার্থিতা দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে গিয়ে দাবি জানিয়েছে দলটি। নির্বাচন কমিশন বিএনপির এই দাবি আমলে নিয়ে ২৩ ডিসেম্বর বৈঠক করে।

বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, তাদের প্রার্থীশূন্য আসনে পুনঃতফসিল বা অন্য বৈধ প্রার্থীদের প্রার্থিতা দেওয়ার কোনো আইনগত সুযোগ নেই।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার আবেদনে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের রায়ে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১৩ প্রার্থীর। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আটটি আসনে ধানের শীষের কোনো প্রার্থী নেই। তিনি বলেন, ১৬ জন প্রার্থী কারাগারে আছেন। ছয়জনকে তফসিল ঘোষণার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া আটজনকে অবৈধ করা হয়েছে।

জানা গেছে, বাতিল হওয়া প্রার্থীদের অধিকাংশই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার আগেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কারও কারও প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে দণ্ডিত হওয়ার কারণে, কারও ঋণ খেলাপির কারণে। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা তাদের প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করলেও নির্বাচন কমিশন তা বৈধ করেছিল। পরে নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত হাইকোর্ট স্থগিত করেন। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির ১৯ জনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি আসনে আদালতের চূড়ান্ত রায়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীশূন্য থাকছে।

চেম্বার জজ আদালতের আদেশে যাদের ভোটের পথ বন্ধ হয়েছে, তাদের মধ্যে বিএনপির ১০ প্রার্থী হলেন- ঢাকা-১ আসনে খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা-২০ তমিজ উদ্দিন, চাঁদপুর-৪ আবদুল হান্নান, জয়পুরহাট-১ মো. ফজলুর রহমান, রাজশাহী-৬ মো. আবু সাঈদ চাঁদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ মোসলেম উদ্দিন, ঝিনাইদহ-২ মো. আবদুল মজিদ, জামালপুর-৪ ফরিদুল কবির তালুকদার, বগুড়া-৭ মিল্টন মোর্শেদ ও নীলফামারী-৪ আমজাদ হোসেন সরকার।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আবু আশফাক। উপজেলা চেয়ারম্যান নিয়ে আইনি জটিলতায় সর্বোচ্চ আদালতে তার প্রার্থিতা স্থগিত হয়ে গেছে। সেখানে বিএনপি, ২০ দল বা ঐক্যফ্রন্টের এখন কোনো প্রার্থী নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামকে বিএনপি জোট সমর্থন দিতে পারে বলে জানা গেছে। রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন নাদিম মোস্তফা। আইনি জটিলতায় তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। সেখানে বিএনপি থেকে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মণ্ডলকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়েছে। আইনি জটিলতায় মানিকগঞ্জ-১ আসনে এসএ কবীর জিন্নাহর পরিবর্তে খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলু ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন। সিলেট-২, জামালপুর-১ আসনে গণফোরামের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সিলেট-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি জটিলতায় সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েও তার প্রার্থিতা স্থগিত হয়। সেখানে গণফোরামের উদীয়মান সূর্য প্রতীকে মো. মুকাব্বির খানকে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। মানিকগঞ্জ-৩ আসনে ঋণখেলাপির কারণে আফরোজা খান রীতার মনোনয়ন স্থগিত হয়েছে। সেখানে গণফোরামের উদীয়মান সূর্য প্রতীকে সাবেক এমপি মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম খান কামালকে সমর্থন দিতে পারে বিএনপি। জয়পুরহাট-১ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী করা হয় ফজলুর রহমানকে। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আইনি জটিলতায় তার প্রার্থিতা স্থগিত হয়। সেখানে বিএনপির ফয়সাল আলিম নামে আরেক বৈধ প্রার্থী আছেন। এখন ধানের শীষের প্রতীক তাকে দেওয়ার জন্য তোড়জোড় চলছে।

নাটোর-১ আসনে আইনি জটিলতায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী মনজুরুল ইসলামের প্রার্থিতা বাতিল হয়। সেখানে বিএনপির শিরিন আক্তার ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে জানা গেছে। ঝিনাইদহ-২ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন আবদুল মজিদ। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। ওই আসনে বাসদের প্রার্থী আসাদুল ইসলামকে বিএনপি জোট সমর্থন দিতে পারে বলে জানা গেছে। বগুড়া-৩ আসনে ধানের শীষের আবদুল মহিত তালুকদারের জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আফজাল হোসেন (আপেল) এবং আবদুল মজিদের (ডাব) মধ্যে কোনো একজনকে সমর্থন দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ঢাকা-২০ আসনে ধানের শীষের তমিজউদ্দিনের জায়গায় বিকল্প কোনো প্রার্থী নেই। এ আসনটিতে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডির এমএ মান্নান নির্বাচন করছেন। তাকেই সমর্থন দেবে ঐক্যফ্রন্ট। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয় ইঞ্জি. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিনকে। কিন্তু তার প্রার্থিতা স্থগিত হয়ে যাওয়ায় ওই আসনে বিএনপির বৈধ প্রার্থী নাছির উদ্দিন হাজারী লড়ছেন। নওগাঁ-১ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী দেওয়া হয় সালেক চৌধুরীকে। আইনি জটিলতায় তিনি সর্বোচ্চ আদালতে হেরে যান। সেখানে বিএনপির আরেক প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের হাতেই শেষ পর্যন্ত ধানের শীষ প্রতীক থাকছে।

চাঁদপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিল এমএ হান্নান। কিন্তু উচ্চ আদালতে তার প্রার্থিতা স্থগিত হয়ে যায়। সেখানে বিএনপির সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন নসুও বৈধ প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। তাকে নিয়ে বিএনপি এখন চিন্তাভাবনা করছে। বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন মোর্শেদ মিল্টন। সেখানে বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থী নেই। ওই আসনে বৈধ প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির ফজলুল হক ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মোনতেজার রহমান। বিএনপি এই দুজন থেকে একজনকে বেছে নিতে পারে। দিনাজপুর-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। সেখানে মোফাজ্জল হোসেন দুলাল নামে বিএনপির আরেকজন বৈধ প্রার্থী রয়েছেন। জামালপুর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন রশিদুজ্জামান মিল্লাত। তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাওয়ায় ওই আসনে উদীয়মান সূর্য প্রতীকে গণফোরামের ইঞ্জি. সিরাজুল হককে বিএনপি সমর্থন দেওয়ার চিন্তা করছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী গতকাল রাতে জানান, আইনি জটিলতায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীশূন্য হওয়া আসনগুলোতে বিকল্প প্রার্থীর বিষয়ে আলোচনা চলছে। গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এনিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এদিকে নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী মো. আমজাদ হোসেন সরকারের প্রার্থিতা স্থগিত করার পর সেখানে কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। গতকাল দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর এক চিঠিতে এ মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন।

সৌজন্যে- ইত্তেফাক