Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ভোটের আগের রাতে ব্যালটে নৌকার সিল মেরে রাখার পরিকল্পনা ফাঁস

electionঢাকা-১ আসনে (দোহার-নবাবগঞ্জ) ভোট কারচুপির নীলনকশা বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ-পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছে। এ জন্য দফায় দফায় গোপন বৈঠকে বসছে স্থানীয় প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা। তবে তাদের গোপন বৈঠক শেষ পর্যন্ত আর গোপন থাকছে না। ভোট কারচুপি আর গোপন নির্বাচনী নীলনকশার অনেককিছুই ইতিমধ্যে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।

শুক্রবারও নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের এমন একটি গোপন বৈঠকের খবর ফাঁস হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ বৈঠকে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ভোটের আগের রাতে ব্যালটে বিপুল সংখ্যক নৌকার সিল মেরে রাখার পরিকল্পনা করা হয়।

chardike-ad

১৭৮টি কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে নৌকা প্রতীকের ব্যালটে ৩০০টি সিল মারতে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এ কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করবেন ভোট কর্মকর্তারা। নির্ভরযোগ্য একধিক সূত্র চাঞ্চল্যকর এ তথ্য নিশ্চিত করে।

এদিকে ঢাকা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপির কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও হুমকি অব্যাহত আছে। মটরগাড়ির বিজয়কে রুখতে রাতের অন্ধকারে কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। কোথাও কোথাও তল্লাশির নামে বাড়িঘরে ভাংচুরও চালানো হচ্ছে।

এমন বাড়াবাড়ি দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, ভোট কারচুপির জন্য শেষ ধাপের অ্যাকশন প্ল্যান হিসেবে মটরগাড়ি প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের ওপর নির্যাতনের পথ বেছে নেয়া হয়েছে।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে শুক্রবার কলাকোপা ইউনিয়নের একটি বাড়িতে প্রশাসনের গোপন বৈঠক হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন নবাবগঞ্জের ১৪টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা। এরা হলেন- কলাকোপা ইউনিয়নের ইব্রাহিম খলিল, শিকারীপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর রহমান পিয়ারা, জয়কৃষ্ণপুরের মাসুদুর রহমান, বারোয়াখালীর আরিফুর রহমান, বান্দুরা ইউনিয়নের হিল্লাল মিয়া, বক্সনগর ইউনিয়নের আবদুল ওয়াদুদ মিয়া, গালিমপুর ইউনিয়নের তপন মোল্লা, আগলা ইউনিয়নের আবিদ হোসেন, চুড়াইন ইউনিয়নের জলিল ব্যাপারী, কৈলাইল ইউনিয়নের পান্না মিয়া, বাহ্রা ইউনিয়নের সাফিল উদ্দিন, শোল্লা ইউনিয়নের দেওয়ান তুহিনুর রহমান ও যন্ত্রাইল ইউনিয়নের নন্দলাল শিং।

সূত্র আরও জানায়, ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন ও সেক্রেটারি জালাল উদ্দিন এবং আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান আওলাদ হোসেন। বৈঠকে ঢাকার একজন শিল্পপতিও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, আলোচনা হয়- ভোটের আগের রাতেই নৌকার সিল মারা শত শত ব্যালট পেপার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে পাঠানো হবে। এ জন্য নির্বাচনী এ আসনের মোট ১৭৮টি ভোট কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ৩শ’টি ব্যালটে নৌকা প্রতীকে আগেই সিল মেরে রাখা হবে। এরপর নির্বাচন শেষে এসব জাল ভোট গণনা করে ভোটের ফল ঘোষণা করবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বৈঠকে আরও আলোচনা হয়, যেহেতু দোহার-নবাবগঞ্জে এবার ধানের শীষের প্রার্থী নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই ধানের শীষের সব ভোট পড়বে মটরগাড়ি প্রতীকের বাক্সে। তাই যে করেই হোক ধানের শীষের ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়া যাবে না।

তবে বৈঠক প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজনৈতিক একটি মিটিং হয়েছে। তবে আমি সেখানে ছিলাম না। আপনারা যা শুনতে পেয়েছেন তা সঠিক নয়।’

এদিকে বৈঠকের পর শুক্রবার বিকালেই নবাবগঞ্জ-দোহারের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি হানা দেয় পুলিশ। বিশেষ করে মটরগাড়ি প্রতীকের কর্মী-সমর্থক ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। আতঙ্কে নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারছেন না।

জয়পাড়া চায়ের স্টলে লোকজনকে বলতে শোনা যায়, নৌকার কর্মীরা প্রকাশ্যেই মটরগাড়ি মার্কার কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এমনকি মটরগাড়ি মার্কার পক্ষে কাজ করলে মেরে ফেলা হবে বলে শাসিয়ে যাচ্ছে।

নবাবগঞ্জের বাহ্রা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সেলিম মিয়া, বোরহান উদ্দিন ও সেলিম মাস্টারের বাড়িতে গত দু’দিন রাতে হামলা হয়। মুখোশ পরা অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা এ হামলা চালায়। কৈলাইল ইউনিয়নের খলিল মাতবরের বাড়িতে হানা দেয় সাদা পোশাকের পুলিশ। বক্সনগর ইউনিয়নের মটরগাড়ি প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা বাড়িতে থাকতেই পারছেন না। সকালে পুলিশ এলে বিকালে আসে র‌্যাব। রাতে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা আসে মুখোশ পরে।

যন্ত্রাইল ইউনিয়ন পরিষদের সামনে মটরগাড়ি প্রতীকের একটি ক্যাম্প বৃহস্পতিবার দিনে-দুপুরে ভাংচুর করা হয়। আহ্লাদীরপুরে মটরগাড়ি প্রতীকের বহু কর্মী-সমর্থক এলাকাছাড়া। কারণ পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের লোকজন উপর্যুপরী বাড়ি বাড়ি গিয়ে হানা দিচ্ছে সেখানে।

নবাবগঞ্জের শিকারীপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক টিপুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলার শিকার হন শিকারীপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, যুবদল নেতা ইসহাক হোসেন, যুবদলের সাবেক সভাপতি কাউসার হোসেন অভি।

এ ছাড়া বিএনপি নেতা কালাম ও শুক্কর আলীর ওপর হামলা চালিয়ে তাদের রক্তাক্ত করা হয়। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, যুবলীগ নেতা মীর আলোক হোসেনের নেতৃত্বে মটরগাড়ি ও বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হক টিপু বলেন, মারধরের অভিযোগ সঠিক নয়। তবে আমরা একটু উচ্চস্বরে কথাবার্তা বলেছি।

এদিকে রাত ৯টায় জানা যায়, নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণ ইউনিয়নের আরগুসাই গ্রামের মাহফুজ খানের বাড়িতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ২০-২৫ সন্ত্রাসী ওই হামলা চালিয়েছে। সন্ত্রাসীরা তিনটি ঘরে ব্যাপক ভাংচুর করে। মাহফুজ খান নবাবগঞ্জ জাতীয় পার্টির যুবসংহতির সিনিয়র সহসভাপতি।

তল্লাশির নামে পুলিশের নির্যাতন ও বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। নবাবগঞ্জ থানার ওসি মোস্তফা কামাল ফোন রিসিভ করলেও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

তবে ভোটারদের মধ্যে স্বস্তি ফেরাতে শুক্রবার নবাবগঞ্জ-দোহারের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের টহল দেখা গেছে। একই সঙ্গে দেখা গেছে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত। দোহারের কার্তিকপুরে বিজিবির অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এখানে তারা সব ধরনের সন্দেহজনক যানবাহন তল্লাশি করছে।

সৌজন্যে- যুগান্তর