যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) তিন শিক্ষার্থীকে আজীবন ও পাঁচজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলনকক্ষে যবিপ্রবির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের ৫৪তম সভায় তাদের বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক স্থাপিত র্যাগিং সংবলিত পোস্টার ও নোটিশ ছিঁড়ে ফেলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোর প্রতি অবমাননা, শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এছাড়া রিজেন্ট বোর্ডের সভায় এক ছাত্রীকে মানসিকভাবে হেনস্তার দায় প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কর্মচারী রকিব রহমানকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আজীবন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী হুমায়রা আজমিরা এরিন, একরামুল কবির দ্বীপ ও মো. রোকনুজ্জামান। এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছেন শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী আসিফ আল মাহমুদ, মো. মোতাসসিন বিল্লাহ, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের মাহমুদুল হাসান শাকিব, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনীম ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী হারুন অর রশীদ।
আজীবন ও এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও অবস্থান করতে পারবে না এবং তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এ ছাড়া অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রিজেন্ট বোর্ড ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় রাহুত, শেখ শরীফ উদ্দীন, সুকান্ত কুমার রায়, মো. জাহিদ হাসান এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সোহেল রানাকে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে যাদের চূড়ান্ত সতর্ক করা হয়েছে তাদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো কাজে সম্পৃক্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে মর্মেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের ৫৩তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় গত ৪ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত অ্যান্টি-র্যাগিংয়ের পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ও সুপারিশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের ৫৪তম সভায় বহিষ্কারের এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। একইসঙ্গে ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পেসের বাইরে র্যাগিংকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
রিজেন্ট বোর্ডের সভায় এক ছাত্রীকে মানসিকভাবে হেনস্তার দায় প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কর্মচারী রকিব রহমানকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
যবিপ্রবির উপাচার্য ও রিজেন্ট বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন যবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুল মজিদ, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ, যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গোবিন্দ চন্দ্র বিশ্বাস, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম শাহি আলম, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীর, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সিটিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুর রশীদ, যবিপ্রবির ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়েসায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ আনিছুর রহমান, কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. বিপ্লব কুমার বিশ্বাস, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ, সরকারি এমএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবু তালেব মিয়া, সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু তোরাব মোহাম্মদ হাসান, যবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব প্রমুখ।
সৌজন্যে- যুগান্তর