Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মনে হচ্ছে স্বর্গের পথে হাঁটছি

cheri-fulস্কুলে পড়াকালীন যখন রেডিও শুনতাম এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া একটি গান- ওগো বিদেশিনি তোমার চেরি ফুল দাও, আমার শিউলি নাও, এসো দু’জনে প্রেমে হই ঋণী। সেই গান শুনে কোনো এক কাল্পনিক বিদেশিনিকে শিউলি ফুল দেবার জন্য কত খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি, যেমনটি পেয়েছিলাম না চেরি ফুলের দেখা।

তারপর অনেকগুলো বসন্ত পেরিয়ে ২০১৫ সালে স্কলারশিপ নিয়ে যখন জাপানে আসলাম তখন বসন্তের দূত হিসেবে চেরি বা সাকুরা ফুলের দেখা পেলাম প্রথমবারের মতো। সে ছিল এক অদ্ভুত অনুভূতি।

chardike-ad

প্রতিবছরই রুক্ষ-শুষ্ক শীতের শেষ লগ্নে মার্চে বসন্ত আসি আসি করলেই হালকা গোলাপি কিংবা দুধ সাদা আভায় পত্রহীন সাকুরা গাছগুলোতে সহস্র ফুল ফুটে ওঠে। তখন কেবলই মনে হয়-এ শুধু ফুলের দিন, এ লগন ফুল ফোটাবার।

রাস্তা দিয়ে হাঁটলে, দেখা যায় রাস্তার দুই ধারে সারি সারি সাকুরা ফুলের গাছ আর ডালে ডালে গোলাপি আর সাদা ফুলের বাহার। হালকা লিলুয়া বাতাস বইলেই ঝরা ফুলে ছেয়ে যায় পথ। দৃষ্টির সীমানা পর্যন্ত ফুল ছড়ানো সেই পথে হাঁটলে মনে হয় এ যেন স্বর্গের পথে হাঁটছি, এ পথ যেন শেষ না হয়।

japanজাপানিরা এই সময় দল বেঁধে সাকুরা ফুল দেখতে যায়, যা হানামি নামে পরিচিত। হানা অর্থ ফুল, আর মি (মিরু) মানে দর্শন দুটো শব্দ মিলিয়ে হানামি অর্থাৎ ফুলদর্শন। জাপানিরা ফুল দেখার এই রীতিকে বলেন, সাকুরা মাৎসুরি বা চেরী ফেস্টিভ্যাল।

পার্ক বা উন্মুক্ত উদ্যানে যেখানে অনেক ফুলসহ সাকুরা গাছের দেখা মেলে, সেখানেই জমায়েত হয় শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সবাই। দিনভর চলে নানা ধরনের কর্মকাণ্ড, গাছের তলার সবুজ ঘাসের ওপর মাদুর পেতে চলে খাওয়া দাওয়া, ফুল ফোটা উপলক্ষে নতুন মদের বোতল খোলা হয়, ফুলের সাথে বিভিন্ন আঙ্গিকে ছবি তোলা তো চলেই।

রাতে ও অনেকে এসব জায়গায় অবস্থান করেন। রাতে কোনো কোনো জায়গায় করা হয় আলোকসজ্জা, রাতের রকমারি আলোতে এই ফুলকে আরও ও অপূর্ব লাগে। রাতের হানামিকে জাপানিরা বলে ইওজাকুরা।

অনেক দেশের পর্যটক আসেন এ সময় জাপানে বেড়াতে, সাকুরা ফুল দেখতে। গত বছর প্রায় ৫০ লাখ লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে চেরি ফুল দেখতে জাপানে এসেছিল। জাপান ছাড়া ও চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়াতে ও বসন্তকালে সাদা ও গোলাপী রঙের অনেক প্রজাতির চেরি ফুল ফোটে।

japanতিন দেশের লোকেরাই এ ফুলের জন্য পাগল। সাকুরা ফুল দেখার উৎসব এখন জাপান ছাড়াও বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে পালিত হয়। আমেরিকা ও তে এখন ঘটা করে সাকুরা ফুল দেখার উৎসব করা হয়। শত বছর আগে ১৯১২ সালে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে জাপানিরা আমেরিকাকে তিন হাজার বিশ টা সাকুরা গাছের চারা উপহার দিয়েছিল।

ওই গাছগুলো ম্যানহাটনের সাকুরা পার্কে আর ওয়াশিংটন ডিসির ইস্ট পটোম্যাক পার্কের রাস্তার দুইপাশে লাগানো হয়েছিল। সাকুরা ফুলের জন্য আমেরিকানরা ও মুগ্ধ ছিলেন বলেই হয়তো আমেরিকাতে প্রথম দুটি চেরি ফুলের গাছ রোপন করেছিলেন সেই সময়ের ফাস্ট লেডি হেলেন ও আমেরিকাতে জাপানের অ্যাম্বাসিডর এর স্ত্রী চিন্দা।

১৯৬৫ সালে আরও ৩৮০০ চারা উপহার হিসেবে পাঠানো হয় জাপানের পক্ষ থেকে। ফলে সাকুরা এখন নাকি আমেরিকানদের কাছেও বেশ মোহনীয় একটি ফুল। এ বছর ব্রিটেনকে ১০০০ সাকুরা গাছ উপহার দিয়েছে জাপান। শুনেছি প্রতিবেশী দেশ ভারতের হিমাচল, জম্মু কাশ্মীরে ও উল্লেখযোগ্য চেরি ফুলের গাছ দেখতে পাওয়া যায়।

সে যায় হোক, জাপানিরা অন্য অনেকের চেয়ে সাকুরা নিয়ে একটু বেশিই মাতামাতি করে, এমনিতেই জাপানের জাতীয় গাছ ও ফুল হচ্ছে সাকুরা। কোনো জাপানিকে যদি প্রশ্ন করেন চেরি ফুল কেন পছন্দ করেন, একবাক্যে বলবে ‘সাকুরা উৎকুশিই কারা’। কারণ সাকুরা অপরূপ। সহস্র বছর আগে থেকে শুরু করে আজও লেখা হচ্ছে এই ফুল নিয়ে অসংখ্য হাইকু, কবিতা, গান কত কি।

লেখক- খায়রুল বাশার, জাপানের সাগা থেকে