মুখভর্তি দাড়ির ছবি প্রকাশ করে অভিনব প্রতিবাদ জানালেন বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। যা নিয়ে নেট দুনিয়ায় রীতিমত প্রশংসায় ভাসছেন বিশ্ব সেরা এই অলরাউন্ডার। “কুকুরের শরীরের থেকে মানুষের দাঁড়িতে জীবাণু বেশি” থাকে এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশভিত্তিক গণমাধ্যম বিবিসি বাংলা। সেখানে সুইজারল্যান্ডের এক অখ্যাত ক্লিনিকের ভুঁইফোঁড় এক গবেষণাকে পুঁজি করে এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করে গণমাধ্যমটি। মুসলমানদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত দাঁড়ি নিয়ে এমন উদ্ভট গবেষণা প্রকাশের প্রতিবাদে সাকিব দাঁড়িভর্তি মুখের ছবি পোস্ট করেন বলে ধারণা করা হয়।
আজ শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সাকিব আল হাসান তার নিজস্ব ভেরিফাইড পেজে দাঁড়ি সম্বলিত ছবিটি পোস্ট করেন। তিনি ছবির ক্যাপশনে লিখেছেন ‘জুম্মা মোবারক’। তবে এর থেকে বেশি কিছু লিখেননি। তবে অনেকেই মনে করেন ওই প্রতিবেদনের প্রতিবাদেই সাকিব এই ছবি পোস্ট করেছেন।
ছবিতে দেখা যায়, গাড়িতে বসে আছেন সাকিব আল হাসান। মুখে বড় দাড়ি। একটা ক্লোজ শট সেলফি। তার মুখভর্তি শোভা পাচ্ছে চমৎকার লম্বা ঘনদাঁড়ি। যদিও বর্তমানে সাকিবের মুখে দাড়ি নেই। তাই অনেকের ধারণা ওটা নকল দাঁড়ি এবং প্রসঙ্গ ছাড়া মুখভর্তি নকল দাঁড়ি কেন লাগাবেন সাকিব? এমন প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। উত্তরে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন ঐ প্রতিবেদনের প্রতিবাদেই সাকিব মুখে দাঁড়ি লাগিয়েছেন। ছবিটি পোস্ট করার পরপরই তা ছড়িয়ে পড়েছে নেট দুনিয়ায়। প্রশংসায় ভাসাচ্ছে সাকিবকে। কেউ কেউ বলছেন, দাঁড়িতেই একজন মুসলমানের আসল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।
গত ২৪ এপ্রিল বিবিসিতে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, “সুইজারল্যান্ডে একটি ক্লিনিকে পরিচালিত এক গবেষণায় পুরুষের দাড়ি সম্পর্কে ভয়াবহ এক ফলাফল বেরিয়ে এসেছে যে মানুষের দাড়িতে কুকুরের পশমের থেকে বেশি জীবাণু থাকে”। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর অনেকের মধ্যেই বিশেষ করে মুসলিম জাতিগোষ্ঠির মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কারণ দাড়ি ইসলাম ও মুসলমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। ইসলাম দাড়ি রাখতে উৎসাহিত করে থাকে। এরপর অনেকেই বিবিসি বাংলার এ প্রতিবেদনের বিরোধিতা করেছেন।
ফেসবুক ব্যবহারকারী জেমস মেডিসন লিখেছেন, ‘‘দাড়ি ফেইক না অরিজিনাল সেটা বড় কথা না। ইসলাম বিরোধীদের নিত্যনতুন চক্রান্তের বিরুদ্ধে এই ছবিটা একটা নিরব প্রতিবাদ। মুখে দাড়ি মানেই সে জঙ্গি নয়। দাড়ি রাখা মানেই সে জীবানুর ধারক ও বাহক নয়। দাড়িযুক্ত চেহারা মানেই সে চরমপন্থী নয়, সে সন্ত্রাসী নয়। দাড়িযুক্ত লোক মানে সে শান্তির প্রতীক।..ছবিটার ভাষা বলে শেষ করা যাবেনা। স্যালুট ইয়্যু সাকিব।’’
‘‘অল রাউন্ডার। প্রথমে দেখে আমিও চিনিনি। সত্যিই অলরাউন্ডার! আল্লাহ তাঁর মাতো আমাদেরকেও হেদায়তের রাস্তায় চলার তাওফিক দিন। অনেক অনেক ভালবাসা ও শুভ কামনা শাকিব আল হাসান।’’ লিখেছেন এনএইচ মাহফুজ।
গাজী ইয়াকুব মন্তব্য করেন, ‘‘এডিটিং হোক আর বাস্তব হোক বিবিসির অনৈতিক সংবাদ প্রতিবেদনের প্রতিবাদে সময়োপযোগী এমন ছবি আপলোডে দেশের সকল দাড়িরাখা ভাইদের পক্ষ থেকে আপনাকে আন্তরিক মোবারকবাদ।’’
সাকিবের প্রতিবাদের প্রশংসা করে রিয়াজ রিয়াপ লিখেছেন, ‘‘দাড়িতে অনেক ক্ষতিকর জীবাণু থাকে পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর এমন নিউজের প্রতিবাদ স্বরূপ সাকিব এই ছবি আপলোড করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একজন মুসলিম হিসেবে সবার প্রতিবাদ করা উচিত। ধন্যবাদ সাকিব ভাইকে।’’
‘‘বিবিসির প্রতিবেদনের প্রতিবাদ হিসেবেই দেখতে চাই এই নকল দাড়ি। বাস্তবজীবনেও আপনার জীবন সুন্নাতময় হোক দোয়া রইল’’ এমনটাই আশা প্রকাশ করে মিসবাহ।
মুফতি নাজমুল হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘একজন মুসলমানের দাড়ি কমপক্ষে প্রতিদিন পাঁচবার ধোয়া হয়। আর প্রতিদিন গোসল করে। কারন সম্মানের দিক থেকেও দাড়ি সর্বোচ্চ পর্যায়ে। তাই মুসলমানের দাড়িতে জীবাণু থাকে না। আর বিধর্মীরা নিজের দাড়ি ঠিকমতো পরিষ্কার করে না, কারন তাদের কাছে দাড়ি স্রেফ পশমের ন্যায়। তাই কেয়ার করার প্রয়োজন পড়ে না কিন্তু সব সময় কুকুরকে অনেক পরিষ্কার রাখে। কারণ তারা কুকুরের সাথে ঘুমায়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে একজন মুসলমান এর কাছে বিধর্মীর গবেষণার চেয়ে রাসুলের সুন্নত প্রিয়, তাই দাড়ি রাখাটা সুন্নত অনুসরণ করেই রাখা হয়, কোন ঠাকুরকে অনুসরণ কিংবা কোন বিধর্মীর গবেষণা মুসলমানকে দাড়ি রাখা থেকে বিরত রাখতে পারে না। আর মুসলমান এটাও বিশ্বাস করে “প্রতিটি সুন্নাতে অবশ্যই কল্যাণ রয়েছে” যা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে।’’
‘‘এইটাই হলো মুমিনের পরিচয়। ভালোবাসা আরো অনেক গুণ বেড়ে গেলো আপনার প্রতি প্রিয় সাকিব ভাই। আমি যেমন হইনা কেন! আমি যেই লাইনের মানুষ হইনা কেন! আমার ইসলাম, আমার পেয়ারা নবী ও তাঁর সুন্নাহ তাঁর আদর্শ নিয়ে কেউ কটাক্ষ করলে তাঁর প্রতিবাদ আমি করবোই। এটাই হলো ইমানের দাবী। তাই সাকিব ভাইয়ের এই আলগা দাড়ি লাগিয়ে ছবি পোস্ট করাটা একজন ইমানদারের পরিচয় বহন করে। এই আলগা দাড়ির স্থানে আল্লাহ আসল দাড়ি রাখার তাওফিক দান করুন’’ লিখেছেন রায়হান মাহমুদ।
বর্তমানে সাকিব রয়েছেন আইপিএলের ব্যস্ততা নিয়ে। দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ইতোমধ্যে খেলেছে ১০টি ম্যাচ। তবে সাকিব মাঠে নেমেছেন মাত্র দুটিতে। আসরের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামলেও দলকে জেতাতে পারেননি সাকিব। তার বোলিং থেকেই প্রতিপক্ষ বের করে নিয়ে যায় জয়। তারকা ও প্রতিভাবান বিদেশিতে ঠাসা হায়দরাবাদের একাদশে সাকিব ব্রাত্যই থেকে যাচ্ছিলেন।