Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিদেশী শ্রমিকদের কাজের মেয়াদ বাড়াচ্ছে জাপান

৩ এপ্রিল, ২০১৪:

জাপানে বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। আবার দেশটিতে নির্মাণ থেকে শুরু করে সব খাতেই শ্রমিকের চাহিদার কোনো কমতি নেই। এ দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে জাপান, যার অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কর্মীদের কাজের মেয়াদ বাড়ানোর কথা ভাবছে তারা। তবে বিতর্কিত এ কর্মসূচির মেয়াদ বাড়ানো হলে, তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, সে প্রশ্নই এখন উঠছে। খবর রয়টার্সের।

chardike-ad

বর্তমানে জাপানে আসা শ্রমিকরা তিন বছর পর্যন্ত কাজ করার অনুমোদন পান। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) তা বাড়িয়ে পাঁচ বছর করার একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ নিয়োগ নীতিমালা শিথিলের মতো বিষয়ও প্রস্তাবে রয়েছে।

Flag_of_Japan.svgজাপানে বিদেশী শ্রমিক নিয়োগের কর্মসূচিটি চালু হয় ১৯৯৩ সালে। এ পর্যন্ত দেড় লাখের মতো কর্মী দেশটিতে কাজ করছেন। এর অধিকাংশই চীনা। তৈরি পোশাক শিল্প থেকে শুরু করে খামার— সব ক্ষেত্রেই এসব কর্মীকে কাজে লাগানো হয়। তবে চালুর পর থেকেই কর্মসূচিটি নানা বিতর্কের সূচনা করেছে।

এসব কর্মী সাধারণত কৌশলগতভাবে দক্ষ হতে শিক্ষানবিশ হিসেবে জাপানে আসে। তবে আইনজীবী ও শ্রম অধিকার সংগঠনগুলোর দাবি শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে অন্যায়ের শিকার হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে বেআইনিভাবে তাদের কম বেতন দেয়া হচ্ছে। এমনকি পাসপোর্ট বাজেয়াপ্তের মতো ঘটনাও ঘটছে। সরকারি তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, ২০১২ সালে ২০০ কোম্পানি তাদের শিক্ষানবিশ কর্মীদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছে। দুই বছর আগের তুলনায় সেটা ২১ শতাংশ বেশি।

এছাড়া পাওনা বেতন দিতে ব্যর্থ হয়েছে, এ ধরনের ঘটনা পাওয়া গেছে ৯০টি। আর শ্রম আইন ভঙ্গের মতো বিষয় ছিল ১৭০টি। বিদেশী শ্রমিকদের বিষয়ে জাপানে এ ধরনের ঘটনা দেশটিকে দেশে-বিদেশে সমালোচনার মুখে ফেলেছে। টোকিওতে বিদেশী শ্রমিকদের বিষয় নিয়ে কাজ করছেন আইনজীবী শইচি ইবুসোকি। তিনি বলেন, জাপানে আসার পর শ্রমিকরা নিজেদের পছন্দমতো কাজ করতে পারেন না। এমনকি কাজের চুক্তি সই বা বাতিলের ক্ষেত্রেও তাদের কোনো স্বাধীনতা নেই।

এ ধরনের কার্যকলাপকে জাতিসংঘ ২০১০ সালে ‘দাসত্ব’ আখ্যা দিয়ে কর্মসূচিটি বন্ধের আহ্বান জানায়। তবে জাপান এক্ষেত্রে বেপরোয়া। বিশেষ করে নির্মাণ ও খামারের মতো খাতগুলোয় শ্রমিক বেশি দরকার হয়ে পড়ায় বিদেশী শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারছে না তারা। এর অন্যতম কারণ দেশটির বয়স্ক জনগোষ্ঠীর হার বেড়ে যাওয়া। ২০৬০ সালের মধ্যে নিজ জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই ৬৫ বা তারও বেশি বয়সী হয়ে পড়বে জাপানে। এরই মধ্যে জাপান শ্রমঘাটতির যে সমস্যার মধ্যে রয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রী আবের সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধক হয়ে উঠবে।

দেশটির নির্মাণ খাতে শ্রমিক ঘাটতির চিত্র সবচেয়ে প্রকট। ১৯৯৭ সালেই এ খাতে শ্রমশক্তি এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে। আর ২০১০ সালের মধ্যে খাতটির এক-পঞ্চমাংশ শ্রমিকের বয়স ৬০ বছরের বেশি হয়েছে। শ্রমিক ঘাটতির এ অবস্থায় ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় টোকিও অলিম্পিকের জন্য নতুন প্রকল্পের নির্মাণকাজ সম্পন্নে কোম্পানিগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমনকি শ্রমিক সংকটের কারণে ২০১১ সালে সুনামিতে ধ্বংসপ্রায় জাপানের উত্তরাঞ্চলের পুনর্গঠন কাজও ব্যাহত হচ্ছে।

এ কারণেই জাপান সরকার বিদেশী শ্রমিক নিয়োগ কর্মসূচিতে কাজের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে ভাবছে। তবে এবার ফাঁকফোকর বন্ধের ব্যাপারে তারা বেশ সচেতন বলেও দাবি করা হচ্ছে। এলডিপির আইনপ্রণেতা ইয়াসুহিশা শিওজাকি এ বিষয়ে জানান, ‘সরকারের এ কর্মসূচিকে আমরা মজবুত করতে চাই। আমরা সবার উদ্বেগের বিষয়গুলো জানি। তাদের অভিযোগগুলো শোনার চেষ্টা করব।’

তিনি আরো বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশী শ্রমিকদের অপব্যবহার করবে, তাদের কঠিন শাস্তি দেব আমরা। এক্ষেত্রে বাইরের পর্যবেক্ষকদের নিয়োগ দেব, পাশাপাশি স্থানীয় সরকার অভিযোগ পর্যবেক্ষণ করবে।’

তবে প্রস্তাবিত এ বিষয়গুলো বিদেশী শ্রমিকদের সুরক্ষা দিতে পারবে না বলে মনে করছেন আইনজীবী ইবুসোকি। তিনি সরকারের কাছে এ কর্মসূচি না বাড়িয়ে বরং বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাঠামোগত পরিবর্তন না করে নীতিমালা কঠোর করলে, তা কোনো কাজে আসবে না। সূত্রঃ বণিকবার্তা।