ভারত শাসিত কাশ্মীরে শুক্রবার অভূতপূর্ব এক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘোষণার পর থেকে সেখানে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। পালানোর জন্য হাজার হাজার লোক বিমানবন্দর, বাস টার্মিনালে ভিড় করছেন। এদের মধ্যে রয়েছে স্থানীয়, তীর্থযাত্রী এবং পর্যটক।
শুক্রবার নির্দেশনা জারি করে হিন্দুদের পবিত্র অমরনাথ তীর্থ যাত্রা কাটছাঁট করে সবাইকে কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। পর্যটকদেরও দ্রুত ফিরে যেতে বলা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন বিমানবন্দর, বাস টার্মিনালগুলো লোকে লোকারণ্য।
শুক্রবার হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় সরকার আর সেনাবাহিনী ঘোষণা করে অমরনাথ যাত্রাপথে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র, ল্যান্ডমাইন উদ্ধার এবং অন্যান্য গোয়েন্দা তথ্য থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে। তাই পর্যটকদের উপত্যকা থেকে দ্রুত চলে যেতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত ২৮ হাজার সদস্যকে কাশ্মীরে পাঠানো হচ্ছে। গত সপ্তাহেও সেখানে অতিরিক্ত সেনা পাঠানো হয়। গত দুদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে কাশ্মীর নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ছে।
অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছেন যে কাশ্মীরের বিশেষ স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখে ভারতীয় সংবিধানের যে ধারাগুলো, সেগুলোকে সংশোধন করার চেষ্টার অংশ হিসেবে এই পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে কিনা। বিরোধী দল কংগ্রেস বলছে, সরকার কাশ্মীর নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
অনেকের আশঙ্কা সংবিধানের ধারা সংশোধনের চেষ্টা করা হলে কাশ্মীরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দিতে পারে। তা সামাল দিতেই বাড়তি নিরাপত্তা বাহিনী পাঠানো হচ্ছে বলেও গুজব ছড়াতে থাকে। কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের সঙ্গে শুক্রবার গভীর রাতে এবং শনিবার দুপুরে দেখা করেছেন কাশ্মীরের প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা।
রাজ্যপাল বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বাড়তি এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদী হামলা মোকাবিলার আশঙ্কার কারণেই। এর সঙ্গে কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ সরিয়ে নেয়ার কোনও পরিকল্পনাই নেই। তবে বিরোধীরা বলছে অন্যকথা।
শনিবার দুপুরে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার পর কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, ‘অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।‘
তিনি আরও বলেন, ‘এরমধ্যেই হঠাৎ করে অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করে দেয়া হলো, পর্যটকদের রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে বলা হল। এগুলোর অর্থ বোঝা যাচ্ছে না! রাজ্যপালের কাছে সেটাই জানতে গিয়েছিলাম যে আসলে হচ্ছেটা কী!’
শুক্রবার রাতে রাজ্যপালের সঙ্গে জরুরিভিত্তিতে দেখা করেন আরেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি সহ আরও কয়েকজন নেতা। রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করার পর মেহবুবা মুফতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাশ্মীরের মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক আমি দেখছি, তা আগে কখনও দেখি নি।’
শ্রীনগর থেকে বিবিসির সংবাদদাতা মাজিদ জেহাঙ্গীর বলছেন, শুক্রবারের মতো শনিবারও সরকার বা সেনাবাহিনী বা রাজ্যপালের দেয়া আশ্বাসে মানুষ ভরসা রাখতে পারছেন না। গতকাল থেকেই পেট্রল পাম্প বা অন্যান্য দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় লেগে রয়েছে। সবাই রেশন আর জ্বালানী যোগাড় করে রাখছেন।
সরকারি নির্দেশনার মেনে হাজার হাজার মানুষ এখন কাশ্মীর ত্যাগ করছেন। বিমানবন্দর বা বাস টার্মিনালে দাঁড়ানোর উপায় নেই। বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ সব বিমান সংস্থাকে অনুরোধ করেছে যে আগামী কয়েকদিন কাশ্মীর থেকে অতিরিক্ত বিমান চালানোর জন্য তারা যেন প্রস্তুত থাকে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা