Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

নিউইয়র্কে টয়লেট বিড়ম্বনায় মোদি

Modiজাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে হাই-প্রোফাইল সফরে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ হ্রাসে সরকারি একটি প্রকল্পের সফলতার কারণে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী বিল গেটসের প্রতিষ্ঠিত বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন পুরস্কার নেয়ার কথা রয়েছে তার।

মোদির এই পুরস্কার ঘিরেই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। আর এই বিতর্কের শুরু একটি টুইটকে কেন্দ্র করে। গত ২ সেপ্টেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় এক মন্ত্রী ঘোষণা দেন, খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগের অবসান ঘটাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের নেয়া একটি প্রকল্পের স্বীকৃতি দিচ্ছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।

chardike-ad

‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ নামের এই প্রকল্প ‘ক্লিন ইন্ডিয়া মিশন’ নামেও পরিচিত। সারা দেশের স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে এই প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র মানুষের জন্য দেশটিতে কোটি কোটি টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।

টুইটের পর থেকেই এই পুরস্কারের বিরোধিতা করে এক লাখের বেশি মানুষ একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। অনেক তারকা অতিথি বলেছেন, তারা ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। এশীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অভিনেত্রী জামিলা জামিল ও রিজ আহমেদ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন। কিন্তু কী কারণে এই অতিথিরা থাকতে পারবেন না সেব্যাপারে পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

নরেন্দ্র মোদির এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে অনেকেই সমালোচনা করেছেন। কারণ অতীতে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের ‘গোলকিপার’ পুরস্কার অধিকাংশ সময় তৃণমূলের রাজনীতিক কিংবা কোনো কমিউনিটির নেতা পেয়েছেন; রাষ্ট্রের প্রধানের এ পুরস্কার পাওয়ার নজির বিরল।

যে কারণে গোলকিপার পুরস্কার পাচ্ছেন মোদি: ভারতে কোটি কোটি মানুষ খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করেন। কারণ তাদের টয়লেট বানানোর সামর্থ্য নেই। এমনকি অনেক অঞ্চলে পানির সঙ্কট রয়েছে। এটি ভারতের অবিরাম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করায় মাটি ও পানি দূষিত হচ্ছে। যে কারণে অনেক রোগ ছড়াচ্ছে। রাতে বাড়ির বাইরে জঙ্গলে কিংবা ঝোঁপ ঝাড়ে মলত্যাগ করতে গিয়ে নারী এবং তরুণীরা ঝুঁকিতে পড়েন।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আকাশচুম্বী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই সময় তিনি দেশ থেকে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের অবসান ঘটানোর ঘোষণা দিয়ে ভারতে এবং বহির্বিশ্বের মনযোগ আকর্ষণ করেন। নরেন্দ্র মোদি এবং তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি সরকারি এই প্রকল্পকে সফল বলে দাবি করে আসছে।

চলতি বছর দেশটির সাধারণ নির্বাচনের আগে মোদি দাবি করেন, তার সরকারের নেয়া এই কর্মসূচির ফলে দেশটির ৯০ শতাংশ মানুষ এখন স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করছেন। বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ টয়লেট ব্যবহার করতে পারতেন বলে জানান তিনি।

এক বিবৃতিতে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বলছে, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অভিযানের অংশ হিসাবে স্যানিটেশন উন্নয়নে যে অগ্রগতি সাধন করেছেন নরেন্দ্র মোদি, সেজন্য তাকে সম্মাননা দেয়া হবে।

সমালোচকরা যা বলছেন: গুজরাটে ২০০২ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনায় সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে মোদির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন। এক সময় ওয়াশিংটনে প্রবেশে যার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, সেই ব্যক্তি এখন সেখানে গিয়ে সম্মাননা পাচ্ছেন; মূলত এই বিষয়টি ঘিরেই সমালোচনা শুরু হয়েছে।

ভারতের এই প্রধানমন্ত্রীকে একজন মেরুকরণকারী হিসেবে অনেকেই মনে করেন। আবার অনেকেই তাকে সমাজে বিভাজনমূলক ভাষণ দিয়ে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরির মূলহোতা ভাবেন। এছাড়াও গত ৫ আগস্ট ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে সেখানে তার সরকারের নেয়া ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জনজীবন থমকে যাওয়ার অভিযোগ করছেন সমালোচকরা।

সমালোচকরা বলছেন, কাশ্মীরের হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, ব্যবসায়ী ও বিক্ষোভকারীদের বিনাবিচারে আটকে রাখা হয়েছে। এখনো রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরিদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নিপীড়ন চালাচ্ছে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শিব বিশ্বনাথান বিবিসিকে বলেন, ‘পুরস্কার প্রাপ্তির সময়টি আমাদের হতাশ করছে; কারণ কাশ্মীর এখন একটি ইস্যু, শুধুমাত্র কাশ্মীরিরা নয়। সেখানে একটি ট্রমা ক্লিনিক চালু করা খুবই প্রয়োজন। অধিকারের নামে গেটস ফাউন্ডেশন এটা কী করবে? ক্ষমতাসীন মোদি সরকার কী সেটার অনুমতি দেবে?