শুক্রবার । ডিসেম্বর ১২, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

স্কুলছাত্রীদের জন্য হিজাব নিষিদ্ধ করল অস্ট্রিয়া


hijab-school-student

ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রিয়া ১৪ বছরের কম বয়সী স্কুলছাত্রীদের জন্য হিজাব নিষিদ্ধ করেছে। দেশটির পার্লামেন্টে নতুন আইন পাস হওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) থেকে প্রকাশ্যে আসে। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা, নারী অধিকার কর্মী এবং মুসলিম সম্প্রদায় এ সিদ্ধান্তের কড়া বিরোধিতা করছে।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইনটি সমাজে বিভাজন আরও প্রকট করবে এবং মুসলিমদের আরও প্রান্তিক করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সরকার বলছে, এটি শিশুকিশোরীদের “স্বাধীনতা রক্ষার” জন্য করা হয়েছে।

রক্ষণশীল নেতৃত্বাধীন অস্ট্রিয়ান সরকারের উদ্যোগে চলতি বছরের শুরু থেকেই আইনটি প্রস্তাব আকারে আলোচনায় ছিল। ভোটের আগে ক্ষমতাসীন জোটের দল লিবারেল নিয়সের সংসদীয় নেতা ইয়ানিক শেটি বলেন, এই আইন কোনোভাবেই স্বাধীনতা কমানোর উদ্দেশ্যে পাস করা হয়নি। বরং তাদের দাবি—হিজাব কেবল একটি পোশাক নয়; অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি “পুরুষের দৃষ্টির আড়ালে রাখার প্রতীক”। তাই মেয়েদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রক্ষার অংশ হিসেবেই নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে।

নতুন আইনের বিধান অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া শিক্ষাবর্ষেই এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। কেউ আইন ভঙ্গ করলে পরিবারকে বারবার অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৮০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।

এটি অস্ট্রিয়ায় হিজাব নিষিদ্ধ করার দ্বিতীয় উদ্যোগ। এর আগে ২০১৯ সালে ১০ বছরের কম বয়সী মেয়েদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করেছিল পিপলস পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার। কিন্তু পরে দেশটির সাংবিধানিক আদালত তা “বৈষম্যমূলক” বলে বাতিল করে দেয়। এবার আইনটি আরও সতর্কভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও, শেটি নিজেই স্বীকার করেছেন—এই আইন আদালতে টিকে থাকবে কি না তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

আইনের বিরোধিতা করে একমাত্র ভোট দিয়েছে গ্রীন পার্টি। তাদের মতে, এটি সরাসরি সংবিধানবিরোধী। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, এই আইন মেয়েদের ক্ষমতায়ন নয়, বরং অস্ট্রিয়ায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বিদ্যমান বর্ণবাদী পরিস্থিতিকে আরও উসকে দেবে।

নারী অধিকার সংগঠন ‘আমাজোন’-এর সদস্য অ্যাঞ্জেলিকা অ্যাটজিঙ্গার বলেন, এই আইন মেয়েদের কাছে ভুল বার্তা পাঠাচ্ছে—“তাদের শরীর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাদের নিজের নয়।” সমাজে যে বৈচিত্র্য ও ধর্মীয় সহনশীলতা থাকা উচিত, এ নিষেধাজ্ঞা তা আরও সংকুচিত করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

হিজাব নিষিদ্ধের এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক চলছে। সরকারের মতে, এটি শিশুদের স্বাধীনতা রক্ষার সিদ্ধান্ত—কিন্তু সমালোচকদের মতে, এটি মুসলিম মেয়েদের ওপর আরেক দফা বৈষম্যের চাপ।