শুক্রবার । ডিসেম্বর ১২, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক দেশজুড়ে ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

অশ্রুসিক্ত চোখে সাজিদের দাফন, জানাজায় মানুষের ঢল


sajid-janaja

শিশু সাজিদের জানাজায় মুসল্লিরা। ছবি: সংগৃহীত

গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারানো দুই বছরের শিশু সাজিদকে শেষ বিদায় জানাতে হাজির হয়েছিল গ্রামের হাজারো মানুষ। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট মধ্যপাড়া এলাকায় সাজিদের বাবার বাড়ির পাশের ফাঁকা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে নেককিড়ি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সকালে গ্রামের আকাশ–বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা ভেসে আসে—কোয়েলহাট পূর্বপাড়ার রাকিব উদ্দীনের শিশু ছেলে সাজিদ আর নেই। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই থমকে যায় পুরো গ্রাম। কেউ মাঠে যায়নি, দোকানও খুলেনি তেমন। সবাই পাঞ্জাবি-পরা, টুপি মাথায় সাজিদের বাড়ির দিকে ছুটে আসে শেষবারের মতো নিষ্পাপ শিশুটিকে দেখার জন্য।

জানাজার মাঠে ভিড় জমে সকাল থেকেই। গ্রামের বৃদ্ধ থেকে স্কুলপড়ুয়া কিশোর—সবার চোখেই পানি। কেউ ফিসফিস করে বলছিলেন, “আল্লাহ, এমন মৃত্যু যেন কারও ভাগ্যে না আসে।” যখন ছোট্ট সাজিদকে সাদা কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় আনা হলো, তখন চারপাশে কান্নার ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। শিশুটির মা ছুটে যেতে চাইছিলেন বারবার—চাইছিলেন ছেলেকে শেষবার ছুঁয়ে দেখতে। স্বজনরা তাকে ধরে রাখলেও তার কান্না থামাতে পারেনি কেউ।

জানাজার নামাজ পড়ান কাজী মাওলানা মিজানুর রহমান। নামাজ শেষে হাজারো মানুষ হাত তুলে দোয়া করেন—সাজিদের মাগফিরাতের জন্য ও তার শোকাহত পরিবারের ধৈর্যের জন্য। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাসহ এলাকার অসংখ্য মানুষ।

এরপর যখন সাজিদের ছোট্ট কফিনটি কবরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, পুরো পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে যায়। শুধু শোনা যাচ্ছিল স্বজনদের কান্না। গ্রামের মানুষ বলছিলেন, এত মানুষের অংশগ্রহণে শিশুর জানাজা—এ দৃশ্য তাদের জীবনে প্রথম।

গত বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পাচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়া এলাকায় সাজিদ গভীর নলকূপের সরু গর্তে পড়ে যায়। প্রায় ৪৫ ফুট মাটি খননের পর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা ৩২ ঘণ্টা পর শিশুটিকে বের করে আনলেও তাকে জীবিত রাখা সম্ভব হয়নি। উদ্ধার করে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।