Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শিশুর টাকায় ঢাবির শিক্ষার্থী হওয়ার গল্প

liraলিরা চৌধুরী একজন প্রবাসী বাংলাদেশি। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহরে থাকেন তিনি। আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে নিজের শিশুকাল থেকে অর্থাৎ ২০০৫ সাল থেকে নিজের খরচের অর্থ বাঁচিয়ে প্রতিমাসে ১৫ ডলার করে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছেন বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশু সাইফের জন্য। লিরার এই অর্থে চলছে সাইফের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবাসহ আনুষঙ্গিক খরচ। সেই শিশু লিরা এখন একজন ডাক্তার। আর তার অর্থে পড়াশুনা চালিয়ে আসা বাংলাদেশি শিশু সাইফ বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী।

এই গল্পটির বাস্তব রূপকার হলেন যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশি ডা. এহসান হক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা শাস্ত্রের অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত। তার জন্ম পটুয়াখালীতে। বাস্তব এই গল্পের সূচনা, বাস্তবায়ন ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে জানাতে রোববার তিনি রাজধানীর মতিঝিল এফবিসিসিআই ভবনে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

chardike-ad

সংগঠনটির কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কার্যক্রম এবং দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় তরুণদের ভূমিকা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, হতদরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত ও স্বাবলম্বি করে তুলতে এই উদ্যোগ।

২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ডা. এহসানের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ডিস্ট্রেস চিল্ড্রেনস অ্যান্ড ইনফেন্টস ইন্টারন্যাশনালের (ডিসিআই)’। এর মাধ্যমে ‘সান চাইল্ড স্পন্সরশীপ’ নামের প্রোগ্রামের আওতায় বিদেশের যেকোন শিশু বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুর স্পন্সর হতে পারবে।

যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশি এই ডা. জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশী ও বিদেশি শিশুদের পাঠানো অর্থে দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ালেখার ব্যয় বহন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় প্রতিমাসে বিদেশী শিশুটি তার পকেটমানি থেকে ১৫ ডলার পাঠিয়ে দেবে, যা দিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খরচ চলবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুটির। শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, যেকোন সৎ উদ্যোগ, এতিমখানা, অস্বচ্চল পরিবারকে স্বাবলম্বী করে তুলতে অর্থায়ন ও জরুরি ত্রাণ বিতরণ-এই ছয়টি প্রকল্প রয়েছে প্রতিষ্ঠানের।

অনুষ্ঠান শেষে চ্যানেল এই উদ্যোগের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন ওই অধ্যাপক। তিনি বলেন, এই প্রোগ্রামের আওতায় প্রথমে একটি বিদেশী শিশুকে বাংলাদেশের একটি দরিদ্র শিশুকে সহায়তা করার জন্য অনুপ্রাণিত করা হয়। বিদেশী শিশু রাজি হবার পর পরিবার থেকে গৃহস্থালীর নানা কাজে সহায়তা করে শিশুটিকে অর্থ উপার্জন করতে হয়, যার একটি অংশ সে মাসের শেষে নির্ধারিত সুবিধাবঞ্চিত শিশুর খরচ মেটাতে ডিসিআইর মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়।

অনুষ্ঠান শেষে চ্যানেল এই অধ্যাপক বলেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিশ্বের ১০টির অধিক দেশের শিশুদের পাঠানো অর্থে বর্তমানে দেশের দেড় হাজারের বেশি শিশু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা পাচ্ছে। এই অর্থ তাদের জীবনের বদলে দিয়েছে।

‘এর মাধ্যমে বাংলাদেশের শিশুটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবাসহ অন্যান্য সুবিধা পাচ্ছে, সেই সাথে বিদেশী শিশুটি সহানুভুতিশীলতা, নেতৃত্বগুণসহ অন্যান্য গুণাবলী অর্জন করতে পারছে।’ প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট থেকে যে কেউ অর্থ পাঠানোর জন্য উপযুক্ত শিশু বেছে নিতে পারবেন। সেখানে অর্থ সহায়তাপ্রার্থীদের তালিকা দেয়া থাকে বলেন তিনি।

এহসান জানান, বর্তমানে দেশের পটুয়াখালী, নীলফামারী, ফেনী, হবিগঞ্জ ও ঢাকার কেরানীগঞ্জ অঞ্চলের শিশুরা এই প্রোগ্রামের আওতায় থাকলেও কাজের পরিধি সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এই জন্য এফবিসিসিআইর সহায়তা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

লেখক- জসিম উদ্দিন বাদল, সৌজন্যে- চ্যানেলআই অনলাইন