বর্তমানে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীন তিন ধাপের নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডারে নিয়োগ হয়। চাকরিপ্রার্থীদের পছন্দক্রম ও পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ক্যাডার নির্ধারণ করা হয়। ক্যাডারগুলো হলো প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র, কর, কৃষি, আনসার, নিরীক্ষা ও হিসাব, সমবায়, শুল্ক ও আবগারি, পরিবার পরিকল্পনা, মৎস্য, খাদ্য, বন, সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য, পশুসম্পদ, ডাক, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, গণপূর্ত, রেলওয়ে প্রকৌশল, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক, সড়ক ও জনপথ, পরিসংখ্যান ও বাণিজ্য ক্যাডার। একেকটি চাকরির কাজের ধরন একেক রকম। পদ-পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধায় ভিন্নতা আছে। এসব নিয়ে ক্যাডারগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্বও আছে।
এর মধ্যে কর্মকর্তাদের সংখ্যার দিক দিয়ে বিসিএস শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বড় ক্যাডার। শিক্ষা ক্যাডারে কর্মকর্তা প্রায় ১৬ হাজার। আর স্বাস্থ্য ক্যাডারের সদস্য ৩০ হাজারের বেশি। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বিসিএসে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার হিসেবে না রেখে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো আলাদা করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে। তবে এই ক্যাডারের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ক্যাডার থেকে আলাদা করা হলেও উপসচিব পর্যায়ে পদোন্নতির পরীক্ষায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের কর্মকর্তারাও যাতে অংশ নিতে পারেন, সে রকম সুপারিশও থাকছে।
পরিচয় প্রকাশ না করে একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসনের ক্ষেত্রে ভিন্ন রকমের সুপারিশ দিতে যাচ্ছে কমিশন। অন্য ক্যাডারের সঙ্গে সমতা আনতে প্রশাসনকে আলাদা সার্ভিস হিসেবে গণ্য করা হবে। সমবায় ও খাদ্য ক্যাডারও প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত হবে। প্রশাসন ক্যাডারের পদগুলো মাঠ প্রশাসনে (ইউএনও, এডিসি ইত্যাদি) সীমাবদ্ধ থাকবে। মাঠপর্যায়ে শীর্ষ পর্যায়ের পদ হবে বিভাগীয় কমিশনার। তবে আরেকটি শীর্ষ পদ থাকবে, নাম হতে পারে ‘চিফ কমিশনার’। শীর্ষ পদ থেকে মূলত মাঠ প্রশাসনকে তদারকির কাজটি করা হবে। এখন যেটা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শাখা।
বর্তমানে প্রশাসন ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব হতে পারেন। সরকারের এই পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়। বর্তমানে কর্মরত উপসচিবের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬০০। উপসচিব হওয়া কর্মকর্তারাই ধাপে ধাপে ওপরের পদে যাবেন।
বর্তমানে জেলা প্রশাসক হন প্রশাসন ক্যাডার থেকে উপসচিব হওয়া কর্মকর্তারা। কিন্তু উপসচিবদের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের (যেমন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) মধ্যে থেকেও একটি অংশ যাতে ডিসি হতে পারে, সে রকম সুপারিশ করতে পারে সংস্কার কমিশন।
মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি যেসব মন্ত্রণালয়ে একাধিক বিভাগ আছে, সেখানে ‘চিফ সেক্রেটারি’ পদ চালুর সুপারিশ করতে পারে কমিশন। বর্তমানে ২৫ বছর চাকরি করলে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার সুযোগ পান কর্মকর্তারা। এ ক্ষেত্রে তাঁরা পেনশন–সুবিধা পান। এখন ১৫ বছর চাকরি করলেই পেনশন–সুবিধাসহ স্বেচ্ছা অবসরে যেতে পারবেন বলে সুপারিশ করছে কমিশন।
কমিশনপ্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা যেসব সুপারিশ করছি, সেগুলো সবই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তবে বাস্তবায়ন করা হবে কি না, সেটা সরকার বুঝবে।’