শুক্রবার । ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক বিজনেস ৭ মে ২০২৫, ১২:২৩ অপরাহ্ন
শেয়ার

রেমিট্যান্সে ভর করে জুলাই-মার্চ সময়ে চলতি হিসাবের ঘাটতি কমেছে ৮৫%


রেমিট্যান্সে ভর করে জুলাই-মার্চ সময়ে চলতি হিসাবের ঘাটতি কমেছে ৮৫%

 

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকে দীর্ঘ সময় ধরে চলা সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মাঝেও অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট বা চলতি হিসাবের ঘাটতি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৫ শতাংশ কমে এসেছে। মূলত শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ, অর্থ পাচার হ্রাস এবং আমদানির তুলনায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার বেশি থাকায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে চলতি হিসাবের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৫৯ মিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরে ঘাটতি কমেছে প্রায় ৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার।

ট্রেড ব্যালান্স বা আমদানি-রপ্তানির পার্থক্যের সঙ্গে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি নেট ইনকাম যোগ করে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স হিসাব করা হয়।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে প্রবাসী আয়ে এসেছে ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১৭ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার। এতে রেমিট্যান্সে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। এটি চলতি হিসাবের ঘাটতি কমাতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “রপ্তানি যেমন বেড়েছে, রেমিট্যান্সও বেড়েছে। এই দুই খাত ভালো করায় চলতি হিসাবের ঘাটতি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।”

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “ট্রেড, সার্ভিস ও প্রাইমারি অ্যাকাউন্টে ঘাটতি থাকলেও রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট মোটামুটি ভালো অবস্থানে যাচ্ছে। আমদানি বাড়ায় ডলারের চাহিদা বেড়েছে ঠিকই, তবে সরবরাহ বেড়েছে তার চেয়েও বেশি হারে। মার্চ মাসে ঈদ উপলক্ষে রেকর্ড ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা ঘাটতি কমাতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে।”

বাণিজ্য ঘাটতি সামান্য কমেছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ১৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, ঘাটতি কমেছে প্রায় ২ শতাংশ।

এ সময় রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আমদানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

জাহিদ হোসেন বলেন, “রপ্তানি ভালো হলেও আমদানি তুলনামূলক বেশি বেড়েছে। তাই বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমেছে ঠিকই, তবে তা খুব একটা বড় নয়।”

আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত বেড়ে ১.৩১ বিলিয়ন ডলার

দাতা সংস্থাগুলোর সহায়তা বাড়ায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ফাইনান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে সারপ্লাস বা আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে, যেখানে আগের অর্থবছরে এই উদ্বৃত্ত ছিল ৯০১ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ উদ্বৃত্ত বেড়েছে প্রায় ৪০৬ মিলিয়ন ডলার।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই সময়ে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) আগের অর্থবছরের ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৮৬১ মিলিয়ন ডলারে নেমেছে। একই সময়ে ট্রেড ক্রেডিট ঘাটতি ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৫১১ মিলিয়ন ডলারে নেমেছে। যদিও ফেব্রুয়ারি শেষে এই ঘাটতি মাত্র ৩৩ মিলিয়ন ডলার ছিল।

এছাড়া, মাঝারি ও দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ গত বছরের তুলনায় ১৯ শতাংশ কমেছে।

বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকৃত বিদেশি বিনিয়োগ খুবই সীমিত। ফাইনান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে যে এফডিআই দেখা যাচ্ছে তার বড় অংশই আগের বিনিয়োগের আয় থেকে পুনঃবিনিয়োগ।

তারা আরও বলেন, মার্চে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়লেও ট্রেড ক্রেডিট ঘাটতি আবার বেশি বেড়েছে, যা চিন্তার বিষয়।

‘এরোরস অ্যান্ড অমিশন’ এর কারণে সামগ্রিক ব্যালেন্স এখনও ঘাটতিতে

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ শেষে ব্যালান্স অব পেমেন্টের সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি কমেছে।

এই ঘাটতি কমে আসাকে ইতিবাচক উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন বলেন, “এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো ইঙ্গিত। তবে এই সময়ে এরোরস অ্যান্ড অমিশন দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার, যার প্রকৃত কারণ স্পষ্ট নয়। অনেক বৈদেশিক লেনদেন আমরা সঠিকভাবে রেকর্ড করতে পারছি না।”

তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসা, শিক্ষা ও অন্যান্য প্রয়োজনের কারণে হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে হচ্ছে। কঠোর নীতির কারণে অনেক বৈধ আউটফ্লোও অস্বচ্ছভাবে হচ্ছে। তাই প্রয়োজনীয় অনুমোদন না দিলে এই এরোরস অ্যান্ড অমিশন কমবে না।”

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, গত বছরের মার্চ শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ রিজার্ভ মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে।

 

খবর: টিবিএস