আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের অনিশ্চয়তার মধ্যেও বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার ব্যাপারে সবুজ সংকেত পেয়েছে বাংলাদেশ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চলমান ‘রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড রিকভারি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট-২’ কর্মসূচির আওতায় এই বাজেট সহায়তার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছে। আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা করেই বিশ্বব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, ঋণের শর্ত চূড়ান্ত করতে আগামী বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা (নেগোশিয়েশন) হওয়ার কথা রয়েছে। আলোচনা সফল হলে ঋণ প্রস্তাব বিশ্বব্যাংকের আসন্ন বোর্ড সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে এবং অনুমোদন মিললে জুনের মধ্যে চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আইএমএফের কিস্তি ছাড় আটকে যাওয়ায় বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে চলমান বাজেট সহায়তা ঋণও অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। কারণ, বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীরা বাজেট সহায়তার ক্ষেত্রে আইএমএফের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে।
ইআরডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে-কে বলেন, “বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলো কোনো ঋণ অনুমোদনের আগে আইএমএফের ওপর নির্ভর করে। সদস্য দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে ডায়াগনস্টিক প্রতিবেদন তৈরি করে আইএমএফ। সেখানে বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতি ও ঋণ পরিশোধ সক্ষমতার বিষয়গুলো উল্লেখ থাকে। এজন্য ঋণ অনুমোদনের জন্য আইএমএফের ডেট রিপোর্ট জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।”
তিনি আরও বলেন, “আইএমএফের চলমান ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির কোনো কিস্তির কোনো শর্ত বাস্তবায়ন না হওয়ার মনে এই নয় যে, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নেই। তাছাড়া, বাংলাদেশ কখনও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। এসব যুক্তি আমরা বিশ্বব্যাংকের সামনে উপস্থাপন করেছি এবং ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।”
সংশ্লিষ্টরা জানান, আইএমএফ দুটি শর্ত নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানে অসন্তুষ্ট। প্রথমটি হলো—ডলারের বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক রাজি নয়। দ্বিতীয়টি হলো—সরকার রাজস্ব-জিডিপি (ট্যাক্স-টু-জিডিপি রেশিও) অনুপাত বর্তমানের সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে অন্তত ১০ শতাংশে উন্নীত করার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ দেখিয়েছে। এই দুই কারণে আইএমএফ কিস্তির অর্থছাড় বিলম্ব করছে।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বব্যাংকের ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তার আলোচনা সফল হলে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গেও থেমে থাকা বাজেট সহায়তার আলোচনা আবার শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এরমধ্যে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে ‘ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্মস সাবপ্রোগ্রাম–১’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তার চুক্তি জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্য রয়েছে।
এছাড়া, বেশ কয়েকটি বাজেট সহায়তা কর্মসূচির আলোচনা নতুন করে গতি পেতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এডিবির ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ক্লাইমেট রেসপন্সিভ ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট (সিআরইডি) সাবপ্রোগ্রাম ২, জাপানের ৪১৮ মিলিয়ন ডলারের ডেভেলপমেন্ট পলিসি লোন ফর ইকোনমিক রিফর্ম অ্যান্ড স্ট্রেংথেনিং ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম এবং এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্রস্তাব।
চলতি অর্থবছরে সরকার ইতোমধ্যে ১.২ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা পেয়েছে।
এর মধ্যে গত ডিসেম্বর বিশ্বব্যাংকের সেকেন্ড বাংলাদেশ গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট কর্মসূচির আওতায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা এবং এডিবির সঙ্গে স্ট্রেংথেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স (সাব-প্রোগ্রাম-১) শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই হয়।
এছাড়া, এপ্রিল মাসে ওপেক ফান্ডের সঙ্গে স্ট্রেংথেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স প্রোগ্রাম শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তার চুক্তি সই হয়েছে।
খবর: টিবিএস