‘মশা’ শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে বিরক্তিকর ও ভয়ংকর এক পতঙ্গের ছবি। কিন্তু আপনি কি জানেন, পৃথিবীতে এমন এক মশা আছে যা সৌন্দর্যে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়? হ্যাঁ, বাস্তবেই এমন এক মশার অস্তিত্ব রয়েছে যার নাম স্যাবেথেস সায়ানিয়াস। এটি শুধু দেখতে নয়, রঙের বাহারেও অনন্য।
স্যাবেথেস সায়ানিয়াস হলো এক ধরনের ক্রান্তীয় মশা, যা মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জঙ্গলে দেখা যায়। এই মশার দেহে থাকে নীল, বেগুনি ও কালো রঙের মিশ্রণ। এর শরীরের দুই পাশে আছে পাখির পালকের মতো দেখতে প্যাডেল, যা একে অন্য সব মশা থেকে আলাদা করে তোলে। সে কারণেই একে বলা হয় ‘বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মশা’। এর সৌন্দর্য এতটাই রাজকীয় যে, একে প্রথম দেখাতেই মনে হয় যেন কোনো শিল্পকর্ম! কিন্তু এ মশাকে দেখা পাওয়া সহজ নয়। কারণ এটি অত্যন্ত ছদ্মবেশী ও সচেতন। ফলে ছবি তোলাও চ্যালেঞ্জিং।
বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফার গিল উইজেন জানিয়েছেন, এই মশার ছবি তুলতে হলে দীর্ঘ সময় এক জায়গায় স্থির থাকতে হয়। কারণ মশা দ্রুত জায়গা বদলায় এবং ফ্ল্যাশ ব্যবহার করলেই স্থান ত্যাগ করে। তাই এদের ছবি তোলা সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি।
স্যাবেথেস সায়ানিয়াস প্রজাতির সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো—তার পালকসদৃশ পাখনার কাজ বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারেননি। এই পালক কীভাবে কাজ করে, বা আদৌ কোনো কার্যকর উদ্দেশ্য পূরণ করে কি না—তা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।
বিশ্বে মশার ৩,৩০০টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। তবে সব মশা আমাদের ক্ষতি করে না। কেবল স্ত্রী মশারাই রক্ত খায়, আর সেটাও কেবল ডিম উৎপাদনের জন্য। কিন্তু মশার মাধ্যমেই ছড়ায় ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া, পীতজ্বর, জিকা ভাইরাস ইত্যাদি ভয়াবহ রোগ। তবে সেই চিরচেনা ভয়ংকর মশার ধারণা ভেঙে দিয়ে স্যাবেথেস সায়ানিয়াস প্রমাণ করেছে, মশাও হতে পারে অনিন্দ্য সুন্দর।