বৃহস্পতিবার । ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮:৫৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২২০০ ছাড়াল


afghan-earthquake

আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আবারও শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকালেই দেশটির নাঙ্গারহার প্রদেশের সীমান্তবর্তী শিওয়া জেলায় ৬ দশমিক ২ মাত্রার কম্পন রেকর্ড করেছে জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস।

এটি রোববার থেকে টানা তৃতীয় দফা ভূমিকম্প। প্রথম আঘাতেই প্রাণহানি চরমে পৌঁছায়। তালেবান প্রশাসন জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২ হাজার ২০৫ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩ হাজার ৬৪০ জন। জাতিসংঘ বলছে, প্রায় ৮৪ হাজার মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কয়েক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।

ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ
কুনার ও নাঙ্গারহারে হাজারো বাড়িঘর মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা ইসলামিক রিলিফ জানিয়েছে, কুনারের কিছু গ্রামে প্রায় ৯৮ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়রা ধ্বংসস্তূপে শাবল হাতে লাশ তুলছেন, বাঁশের খাটিয়ায় বহন করছেন এবং মাটিতে কবর খুঁড়ে প্রিয়জনদের দাফন করছেন। নিয়মিত আফটারশক ও বৃষ্টিতে দুর্বল হয়ে পড়া মাটির কারণে অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে।

মানবিক বিপর্যয়
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক কার্যালয় জানিয়েছে, খাদ্য, চিকিৎসা ও আশ্রয়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৭০০টিরও বেশি ঘরবাড়ি পুরোপুরি ধসে পড়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করেছে, তাদের বর্তমান মজুদ চার সপ্তাহের বেশি চলবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, অন্তত ৩০ লাখ ডলারের জরুরি তহবিল ঘাটতি রয়েছে।

ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ
তালেবান প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে সেনা হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে অনেক জায়গায় হেলিকপ্টার নামতে না পারায় কমান্ডো সদস্যদের প্যারাশুটের মাধ্যমে নামানো হয়েছে। তবুও দুর্গম অঞ্চলগুলোতে সহায়তা পৌঁছানো এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।

আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে আসায় জটিলতা
মানবিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা ক্রমেই কমে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈদেশিক সহায়তা খাতে কাটছাঁটের প্রভাব, এর সঙ্গে তালেবানের নারীবিষয়ক নীতি ও ত্রাণকর্মীদের ওপর নানা বিধিনিষেধ মিলিয়ে আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রতিনিধি জাকোপো কারিদি সতর্ক করে বলেছেন, “জরুরি সহায়তার বাইরেও দাতাদের এগিয়ে আসতে হবে। নইলে আফগানিস্তান এক সংকট থেকে আরেক সংকটে ঠেলে দেওয়া হবে। এই ভূমিকম্প স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—আফগানিস্তানকে একা ফেলে রাখা যাবে না।”

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানে চলমান এই ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মানবিক বিপর্যয়ের প্রকৃত চিত্র স্পষ্ট হবে না।