
কখনও কখনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে খবর বা বিষয়গুলো হঠাৎ ট্রেন্ড করতে শুরু করে, মনে হয় যেন সেগুলো হাওয়ায় থেকে এসে পড়েছে। আসলে এটাই অনলাইন সংবাদ জগতের স্বভাব – নতুন নতুন ঘটনা সবসময় ঘটছে এবং মানুষ জানতে ভালোবাসে কী হচ্ছে, বিশেষ করে জাতীয় সংকটের সময়ে। তবে অনলাইনে যা দেখছেন, সবকিছুই সত্য নয়।
কিছু খবর এতটাই চমকপ্রদ বা ভয়ঙ্কর মনে হয় যে সত্যি হতে পারে না, অথচ অনেকেই সেটি বিশ্বাস করে ফেলে। এর কারণ হলো, কিছু মানুষ খারাপ উদ্দেশ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। আর এই কাজে তারা যে যন্ত্রটি ব্যবহার করে, তার নাম হলো ‘বট’।
প্রযুক্তি বিষয়ক লেখক কার্ল মিলার প্রশ্ন তুলেছেন— আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা কিছু দেখি, সব কি আসল মানুষের কাছ থেকেই আসে?
আসলে বট কী এবং এগুলো কীভাবে কাজ করে?
ইন্টারনেটে ভালো এবং খারাপ – দুই ধরনের বটই আছে। এগুলো হলো এমন প্রোগ্রাম, যেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। আপনি হয়তো কোনো একসময় অনলাইনে কোনো বটের সঙ্গে ‘চ্যাট’ করেছেনও। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এগুলো ব্যবহার করে কেউ কেউ আসল মানুষের মতো ভান করতে পারে—স্বয়ংক্রিয়ভাবে পোস্ট লিখতে বা এমন কাজ করতে পারে, যেগুলো সাধারণ মানুষ করে থাকে।
একসাথে অনেক বট ব্যবহার করলে, নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি, ইস্যু বা বিষয়কে ঘিরে আলোড়ন তৈরি করা সম্ভব। এভাবে তারা কোনো মতামত বা এজেন্ডাকে সামনে ঠেলে দিতে পারে। কেউ কেউ আবার নিজের পণ্য বা পোস্ট ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য টাকা দিয়ে বট ভাড়া করে।

সোশাল মিডিয়া বটদের প্রতীকী ছবি, চিত্রশিল্পী জেসন রেইশ, সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস
মানুষ কেন বট ব্যবহার করে?
বট নিজে থেকে খারাপ বা ভয়ঙ্কর কিছু নয়। অনেক ‘ভালো’ বট ইতিবাচক কাজেও ব্যবহৃত হয়। যেমন—কানাডিয়ান সম্প্রচার মাধ্যম CBC একবার এমন একটি ইনস্ট্যান্ট চ্যাট সার্ভিস চালু করেছিল, যা বট ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভুয়া খবর নিয়ে মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতো, যাতে তারা ২০১৯ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের আগে সচেতন হতে পারে। টুইটারও তাদের নির্দেশনায় বলেছে, “সব বট খারাপ নয়… উচ্চমানের বট সবার অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।”
তাহলে ‘খারাপ’ বট কী ধরনের ভুয়া খবর ছড়ায়?
করোনাভাইরাস সংকটের সময়ে যুক্তরাজ্যের প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ভুয়া খবরের মুখোমুখি হয়েছেন। অর্থাৎ, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোভিড-১৯ সম্পর্কিত মিথ ও গুজব ছড়িয়ে পড়ছিল ব্যাপকভাবে। প্রমাণ পাওয়া গেছে, এসব পোস্টের অনেকগুলোই বট ছড়াচ্ছিল।
বট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট আর সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো #coronavirus এবং #covid19 হ্যাশট্যাগ বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক টুইট আসছে, যেগুলো খুব সম্ভবত বট তৈরি করেছে। সাইবার সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান র্যাডওয়্যার জানিয়েছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘খারাপ’ বট ট্রাফিক ২৭% বেড়েছিল, কারণ বটগুলো মানুষের করোনা ভয়কে কাজে লাগিয়ে ভুয়া ব্যক্তিগত গল্প ছড়িয়ে দিচ্ছিল।
আরেকটি ক্ষেত্র যেটি বট-স্প্যামের শিকার হয়েছে, তা হলো পরিবেশ। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা “বটোমিটার” নামের একটি টুল ব্যবহার করে দেখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত এক-চতুর্থাংশ টুইট আসলে বট থেকে এসেছে। এর বেশিরভাগই জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকার করার জন্য প্রোগ্রাম করা ছিল। এমনকি “ভুয়া বিজ্ঞান” উল্লেখ করা টুইটগুলোর ৩৮%–এর উৎসও ছিল বট।

কিন্তু আসলে কীভাবে বুঝবেন কোনটি বট?
বটগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের আড়াল করে রাখতে পারে। তবে কিছু বিষয় খেয়াল করলে সন্দেহজনক পোস্ট বা অ্যাকাউন্ট চিনতে পারবেন—
প্রোফাইল– তাদের অ্যাকাউন্টটা একটু ভালোভাবে দেখুন; কি বাস্তব মনে হয়? ছবি নেই, বায়োতে বানান ভুল আছে, কোনো অনুসারী নেই—এগুলো সতর্ক সংকেত। আবার যদি দেখেন অ্যাকাউন্টটি একেবারেই নতুন, তাহলে সেটি হয়তো অন্যদের পোস্ট ছড়ানোর জন্যই খোলা হয়েছে।
পোস্ট– তারা কত ঘন ঘন পোস্ট, মন্তব্য বা টুইট করছে? খুব অল্প সময়ে অনেকগুলো পোস্ট দিলে বোঝা যেতে পারে অ্যাকাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়।
দৃষ্টিভঙ্গি– তারা সাধারণত কী নিয়ে কথা বলে? যদি দেখেন, একই বিষয় নিয়ে দিন-কে-দিন কথা বলছে এবং একই হ্যাশট্যাগ বারবার ব্যবহার করছে, তাহলে সেটি হয়তো প্রোগ্রাম করা বট।
অবশ্য, কিছু মানুষও দেখতে অনেকটা বটের মতো হতে পারে, আর অনেক বটও আবার এতটাই দক্ষ যে আসল মানুষের মতোই মনে হয়! সব বট চিহ্নিত করা সম্ভব নয়, তবে এগুলো যে আছে সেটা জানাটাই সচেতনতার প্রথম ধাপ।





































