Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

৬০ লাখ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরে আসতে হবে !

maching-readable-passportসময় সীমা বেঁধে দেয়া আছে ২০১৫ সালের নভেম্বর। এসময়ের মধ্যে যদি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট হাতে না পান তাহলে বিভিন্ন দেশে কর্মরত অন্তত ৬০ লাখ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরে আসতে হবে।

এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কারণ মেশিন রেডিবল পাসপোর্ট প্রকল্প এতটাই ধীর গতিতে চলছে যে তা গতি না পেলে অধিকাংশ প্রবাসি তাদের হাতে মেশিন রেডিবল পাসপোর্ট পাবেন না। এবং তা হলে জনশক্তি রফতানির ওপর চরম এক আঘাত পড়বে। প্রতিমাসে বিলিয়ন ডলার আয় করে প্রবাসিরা দেশে পাঠান এবং তারা মেশিন রেডিবল পাসপোর্ট না পেলে তা পাঠানো দূরে থাক তল্পিতল্পা নিয়ে দেশে ফিরে আসতে হবে। আশঙ্কা তা হলে বড় ধরনের আর্থসামাজিক সমস্যা তৈরি হবে।

chardike-ad

চার বছর আগে মেশিন রেডিবল পাসপোর্ট তৈরির উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু এ পর্যন্ত ৭০ লাখ প্রবাসির মধ্যে মাত্র সাড়ে ১১ লাখ প্রবাসির হাতে মেশিন রেডিবল পাসপোর্ট দেয়া সম্ভব হয়েছে। যেভাবে এ প্রকল্প চলছে তাতে বড় জোর আগামী বছর বেঁধে দেয়া তারিখের মধ্যে আরো ৪ লাখ প্রবাসির হাতে মেশিন রেডিবল পাসপোর্ট তুলে দেয়া যাবে। কিন্তু বেঁধে দেয়া সময় পার হলে কোনো দেশের সরকারই আর পুরাতন পাসপোর্ট কিংবা মেশিন রেডিবল পাসপোর্ট ছাড়া অন্য কোনো পাসপোর্ট গ্রহণ করবে না।

সরকার যদি বিশেষ মনোযোগ না দেয় তাহলে মেশিন রেডিবল পাসপোর্ট সময়মত কোনো ভাবেই প্রবাসিদের হাতে পৌঁছে দেয়া যাবে না। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের চাহিদা অনুযায়ী দেশেই যারা এ জন্যে আবেদন করেছেন এবং প্রবাসিদের চাহিদা মিলিয়ে প্রতিদিন ১৩ হাজার মেশিন রেডিবল পাসপোর্ট ইস্যু করা সম্ভব হচ্ছে কিন্তু তা করতে হবে অন্তত ২২ হাজার। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আরো কমপক্ষে ২ বছর সময় বাড়াতে হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা বলেন, মালেশিয়ার কোম্পানি আইরিশ বিরহাদ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রদানে বিলম্ব করছে। আইরিশ’এর নতুন পাসপোর্ট ছাপানো থেকে শুরু করে প্রযুক্তিগত সবকিছু প্রদান করার কথা। আর এ কাজে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটর করার কথা ছিল কিন্তু মন্ত্রণালয় তা না করায় এমআরপি পাসপোর্টের জন্য বড় বিপর্যয়ের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ২০১০ সালে শুরু হওয়া এই মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু করতে ২ বছর কোন সমস্যাই হয়নি ।

মালোয়শিয়ার ইমিগ্রেশন এন্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সূত্র মতে, মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের সংখ্যা আকস্মিক বৃদ্ধি পাওয়ায় আইরিশ কর্পোরেশনই সরকারকে জটিলতার মুখোমুখি করছে। সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালনের চুক্তি থাকার পরও সফ্টওয়্যারজনিত সমস্যার কারণে এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করছে আইরিশ। তারা আরও দাবি করছে প্রতিযোগী সংস্থাগুলোর সুনাম ক্ষুণœ করার জন্য মালয়েশিয়ার একটি সংস্থা এর পিছনে কাজ করছে।

মালোয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন এন্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তর এ সমস্যাটি তদন্ত করে এবং এর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এ বিষয় কয়েক দফা বৈঠকও করে বুঝতে পারে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে যথেষ্ট যান্ত্রিক জটিলতা আছে। যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ কিন্তু কর্তৃপক্ষ এটি নিশ্চিত করতে পারেনি কিভাবে এবং কেন এই ত্রুটি হচ্ছে। অন্যদিকে সিকিউর লিং নামে একটি প্রাইভেট কোম্পানি ধারণা করছে এ ত্রুটির একাধিক কারণ থাকতে পারে।

মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের প্রকল্পের ডেপুটি ডিরেকটর লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ইমরান আহমেদ চৌধুরী মে মাসের ১৪ তারিখে সেন্ট্রাল সিষ্টেম বন্ধের কারণ জানতে চেয়ে আইরিশের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। অন্যদিকে গত ১৫ অক্টোবরে এমআরপি প্রজেক্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি একটি নির্দেশনা দিয়ে আইরিশের সফটওয়ারসহ সব তথ্য দিতে বলেন।

এর আগের দিন ডিআইপি ব্যবস্থাপনা কমিটি এপিআইয়ের কাছে তথ্য না দিতে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হয় দেশে ও মালয়েশিয়ায় এমআরপির ৩৩ কেন্দ্র থাকা সত্বেও কেন বিলম্ব হচ্ছে। আবেদনকারীদের হয়রানির ফলে ডিআইপি ও আইরিশের মধ্যে মত পার্থক্য দেখা দেয়। আইরিশ এপিআইকে তথ্য দিতে নারাজ এমন একটি চিঠি ২৭ অক্টোবর অতিরিক্ত মহাপরিচালক রফিকুল ইসলাম হাতে আসে।

চিঠিতে আইরিশকে বলা হয়েছিল প্রয়োজনীয় সব তথ্য এপিআই ও ডকুমেন্ট ৩০ অক্টোবরের মধ্যে দিতে যাতে এটা অন্য কোম্পানির সাথে যুক্ত করা যায়। এ নির্দেশনা মোতাবেক আইরিশ কাজ না করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নেয়া হয় এ কারণে পাসপোর্ট ছাপাতে বিলম্ব হয়। ডিআইপি কর্মকর্তা বলেন আইরিশ এপিআইকে তথ্য না দেয়ার জন্য পাসপোর্ট সংকট দেখা দেয়। আর এ সমস্যা ৭ মাস যাবৎ চললেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইরিশের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

মালেশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিক তুহিন বলেন, এমআরপি পাসপোর্ট যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না পাই তবে আমাকে দেশে ফিরে যেতে হবে নতুবা গ্রেফতার হতে হবে। আমাকে আরো আয় করতে হবে কারণ বাংলাদেশ থেকে মালেশিয়ার আসার পরে এখনো খরচের টাকা ওঠাতে পারিনি। নির্দিষ্ট সময়ে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট না পেলে তুহিনের মত এমন আরো ৫ লাখ প্রবাসি বাংলাদেশির কপাল পুড়বে।

শুধু মালেশিয়া নয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী সৌদি আরবে ৩০ লাখ বালাদেশি এখনো মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট পায়নি। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, জর্দান, লেবানন, বাহরাইন ও লিবিয়ায় আরো ১০ লাখ বাংলাদেশি রয়েছে যারা এখনো এ পাসপোর্ট পায়নি।

চলতি বছরের জুলাইয়ের ২২ তারিথ থেকে সৌদি আরবে কাউকে এমআরপি পাসপোর্ট দিতে সক্ষম হয়নি আইরিশ। অন্যদিকে শুধু মাত্র আরব আমিরাতে ৯’শ ২৮টি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দিতে সক্ষম হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সভাপতিত্বে এ সমস্যা সমাধানে চলতি বছরের মে মাসে একটি মিটিং হয়েছিল সেখানে বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্তটিকে বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালযের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, এ সমস্যা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি কিন্তু আইরিশ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেননি তিনি। আন্তর্জাতিক প্রয়োজনীয়তা মেটাতে আমাদের এমআরপি ব্যবহার করা উচিৎ কিন্তু বিভিন্ন পর্যায়ে এটি বিতরণে আমাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমরা যদি কার্যকরী ব্যবস্থা না নেই তবে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বিতরণের এ অচল অবস্থা থেকে উত্তরণ হওয়া সম্ভব হবে না।

এমআরপি প্রজেক্ট পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেদওয়ান বলেন, প্রবাসীদের এমআরপি বিতরণ করা আইরিশের দায়িত্ব এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবনা। এ সমস্যা সমাধানে মহাপরিচালক কাজ করছেন তা ছাড়া এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সাথে কথা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। তবে ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে মাসুদ রেদওয়ান বলেন মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের জন্য ইমিগ্রেশনে কোন সমস্যা হবে না। আন্তর্জাতিক প্রয়োজনীয়তা মেটাতে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে ভীতিতে আছে দেশের বাইরে থাকা অন্তত ৬০ লাখ বাংলাদেশি।