Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

১৪ লাখ সরকারি চাকুরের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ হচ্ছে

governmen-job

প্রায় ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর বেতন-ভাতা শতভাগ বাড়ানোর সুপারিশ করে প্রতিবেদন ছাপানোর কাজ সম্পন্ন করেছে জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন। এতে সর্বনিম্ন মূল বেতন (চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের) বর্তমানের ৪১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮২০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ বেতন (মন্ত্রি পরিষদসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের) বর্তমানের ৪৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

chardike-ad

বিদ্যমান ২০টি গ্রেডকে ১৬টি গ্রেডে নামিয়ে এনে প্রতিটিতেই কমবেশি ১০০ শতাংশ বেতন বাড়ানোর সুপারিশ রেখেছে কমিশন। বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ধরা হয়েছে মূল বেতনের ৫ শতাংশ। এখনকার মতোই নগদ টাকায় শিক্ষা ও চিকিৎসা ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা ও বাস্তবায়ন না করে প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে নির্দিষ্ট হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন।

কমিশনের প্রতিবেদনে বেতন-ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশাসনিক সংস্কারের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে মেধাবী কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ নামে একটি কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন। প্রস্তাব মতে, প্রশাসনিক সংস্কার কমিটির কাজ হবে মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিশ্চিত করা।

কমিশনের এসব সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার পর তাঁর কাছে জমা দেওয়া হবে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন। সুপারিশ হাতে পাওয়ার পর বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে আগামী বছরের জুলাই থেকে তা কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

বিদ্যমান বেতন কাঠামোতে ইনক্রিমেন্টের আর্থিক মূল্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে। তবে কমিশন এ প্রথা ভেঙে প্রতি ইনক্রিমেন্টের আর্থিক মূল্য প্রত্যেক চাকরিজীবীর মূল বেতনের ৫ শতাংশ পরিমাণ নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। অর্থাৎ ইনক্রিমেন্টের আর্থিক মূল্য চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে। এটি হলে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কখনো পদোন্নতি না পেলেও ১৫ বছর পর তাঁর বেতন দ্বিগুণ হবে। একজন চাকরিজীবী সর্বোচ্চ ২০টি ইনক্রিমেন্ট পেতে পারবেন।

শতভাগ বেতন বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি : ২০০৯ সালের কমিশনের সুপারিশে শতকরা ৬০ ভাগ বেতন বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। এ বছর শতভাগ বেতন বাড়ানোর সুপারিশের পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেছে কমিশন। তাতে বলা হয়েছে, ২০০৫ সালে বেতন স্কেল বাস্তবায়নের পর চার বছরের মাথায় ২০০৯ সালের বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। এবার দুই বেতন স্কেলের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান প্রায় ছয় বছর। এ ছাড়া ২০০৯ সালের বেতন স্কেল প্রণয়নের সময় পরিবারের সদস্যসংখ্যা চার বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। এবার স্বামী-স্ত্রী, দুই সন্তানের পাশাপাশি মা-বাবাকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ছয়জনের পরিবার বিবেচনা করা হয়েছে। এসব বিবেচনায়ই এবার শতভাগ বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করা যৌক্তিক বলে মনে করছেন কমিশনের সদস্যরা।

প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো : বেতন ও চাকরি কমিশন, ২০১৪-এর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, প্রায় ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা চার লাখেরও বেশি। বিদ্যমান বেতন কাঠামোতে তাঁদের গ্রেড ২০ নম্বর। কমিশনের সুপারিশে তাঁদের মূল বেতন দ্বিগুণ করার পাশাপাশি গ্রেড ১৬ নম্বরে নামিয়ে আনা হয়েছে। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের প্রারম্ভিক মূল বেতন বর্তমানে ১১ হাজার টাকা। বিদ্যমান কাঠামোর ৯ নম্বর গ্রেডের এ কর্মকর্তাদের প্রস্তাবিত কাঠামোতে ৮ নম্বর গ্রেডে এনে তাঁদের মূল বেতন দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রশাসনের উপসচিব বা সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের এখন মূল বেতন ২২ হাজার ২৫০ টাকা। প্রস্তাবিত কাঠামোতে তাঁদের মূল বেতন ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। উপসচিবরা আগের মতো ৫ নম্বর গ্রেডেই থাকছেন। ৪ নম্বর গ্রেড অপরিবর্তিত রেখে যুগ্ম সচিব ও একই পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের বর্তমানের মূল বেতন ২৫ হাজার ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে। এ ছাড়া ১ নম্বর গ্রেডের অর্থাৎ প্রশাসনের শীর্ষ নির্বাহী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব বা সমমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মূল বেতন ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৮০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সিনিয়র সচিবদের মূল বেতন ৪২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৯০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদসচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ও তাঁদের সমমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মূল বেতন ৪৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব রয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।

ভবিষ্যতে নতুন বেতন স্কেল নয়, মহার্ঘ ভাতা : সরকার সাধারণত কয়েক বছর পর পর জাতীয় বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করে। ফলে বাজারে একসঙ্গে অর্থের সরবরাহ অনেক বেড়ে যায়। এতে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অল্প আয়ের মানুষের ওপর। এ অসুবিধা দূর করতে ভবিষ্যতে এভাবে বেতন স্কেল ঘোষণা ও বাস্তবায়ন না করে প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে নির্দিষ্ট হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। পাঁচ বছর ধরে ভারত সরকার এ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে বলে কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

শিক্ষা ও চিকিৎসা ভাতা নগদেই : কমিশন গঠন করার পর এর চেয়ারম্যান ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতির কথা বিবেচনায় নিয়ে নগদ টাকায় শিক্ষা ভাতার বদলে চাকরিজীবীর সন্তানদের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ এবং চিকিৎসা ভাতার বদলে স্বাস্থ্য বীমার প্রচলন করার পক্ষে তিনি। তবে কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এখনকার মতোই নগদ টাকায় শিক্ষা ও চিকিৎসা ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে চিকিৎসা ভাতার পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে সব সরকারি চাকরিজীবী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য চিকিৎসা বীমা চালু করার সুপারিশও রয়েছে।

১ জুলাই থেকে কার্যকর : অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কমিশনের প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সচিব কমিটিতে পাঠানো হবে। সেখানে প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন করার পর অনুমোদন নেওয়া হবে মন্ত্রিসভার। এরপর চলতি অর্থবছরের শেষ দিকে এটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হতে পারে। আগামী বছরের ১ জুলাই থেকেই নতুন বেতন স্কেল কার্যকর করা হবে। এ জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন খাতে অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। বাড়তি ওই অর্থ দিয়ে চাকরিজীবীদের বর্ধিত মূল বেতন পরিশোধ করা হবে। তবে অন্যান্য ভাতা বকেয়াসহ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেওয়া হবে।

এ বছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
জিনিসপত্রের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই : সরকারি চাকুরেদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ হলেও বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার আশঙ্কা তেমন নেই বলে দাবি করেছেন কমিশনের এক সদস্য। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা পাঁচ কোটি ১০ লাখ। তাদের মধ্যে মাত্র ২.৫ শতাংশ সরকারি চাকরিজীবী। তা ছাড়া কমিশন শতভাগ বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করলেও চূড়ান্ত বিচারে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন যে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, তার তুলনায় বাড়বে শতকরা ৬০ ভাগ। কারণ নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়নের সময় বিদ্যমান ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট কমে যাবে।