দূষণের দায়ে নিজ প্রতিষ্ঠানকে করা পরিবেশ অধিদফতরের জরিমানা মওকুফের আবেদন করেছেন চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল। পরিবেশ সচিবের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে ২০ লাখ টাকা মওকুফের আবেদন করা হয়। গত ১৬ আগস্ট ওই চিঠি লেখেন পোলো কম্পোজিট নিট ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল (এমএ জলিল অনন্ত)।
জানা গেছে, বর্জ্য শোধনাগার (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টস, ইটিপি) বন্ধ রেখে কারখানা চালু রাখা ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না নিয়ে কারখানার অভ্যন্তরে নতুন ভবন স্থাপন করায় ৬৫ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬০ টাকা জরিমানা করা হয় অনন্তর প্রতিষ্ঠান পোলো কম্পোজিট নিট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে।
গত ২৭ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদফতরের ঢাকা গবেষণাগার ও ২ ফেব্রুয়ারি এনফোর্সমেন্ট দল পোলো কম্পোজিট নিট ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা পরিদর্শন করে। ওই সময় কারখানার ইটিপি বন্ধ দেখতে পান পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এছাড়া পরিদর্শক দল ছাড়পত্র ছাড়া কারখানার অভ্যন্তরে প্রায় ৪০ শতাংশ জমিতে নতুন ভবন দেখতে পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশের প্রাথমিক ক্ষতি নির্ধারণ করে অনন্তর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে ৬৫ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬০ টাকা জরিমানা করা হয় গত ৪ মার্চ।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট) মো. আলমগীর বলেন, পরিদর্শনে দেখা গেছে, কারখানাটিতে ইটিপি বন্ধ রেখে উত্পাদন প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া কারখানার অভ্যন্তরে ভবন সম্প্রসারণ করে ডায়িং কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। কারখানায় যে ইটিপি রয়েছে, তাও প্রয়োজনের চেয়ে আকারে ছোট। মুখ দেখে নয়, আইন অনুযায়ীই জরিমানা করা হয়েছে পোলো কম্পোজিটকে।
জরিমানা মওকুফ চেয়ে পরিবেশ ও বন সচিবকে গত আগস্টে দেয়া চিঠিতে (আপিল) প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনন্ত জলিল দূষণের বিষয়টি স্বীকার করে নেন। অনন্ত লেখেন, ‘পাঁচটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এরই মধ্যে মোট ৪৫ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬১ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি টাকা মওকুফের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘বিদ্যমান রফতানির সার্বিক অবস্থায় আর্থিক ক্ষতিপূরণ বহন করা অত্যন্ত কষ্টকর। এ দুঃখজনক ঘটনার (ইটিপি বন্ধ রাখা, ছাড়পত্র না নেয়া) পুনরাবৃত্তি হবে না— এ অঙ্গীকার করছি। পাশাপাশি বলা হয়, এ ধরনের কার্যক্রম তার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিচালন রীতিবিরুদ্ধ।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অনন্ত জলিল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রোববার সাভার এলাকায় গ্যাস সরবরাহ থাকে না বলে এখানকার সব কারখানা বন্ধ থাকে। পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বন্ধের দিনে পরিদর্শনে এসেছেন বলে ইটিপি বন্ধ দেখতে পেয়েছেন। কারখানা বন্ধ থাকার পরও জরিমানা করেছে। এর একটা বড় অংশ আমি পরিশোধও করেছি। তবে এখন মনে হচ্ছে, বাকি টাকা পরিশোধ করা ঠিক হবে না। শুধু টাকার জন্য নয়; যেহেতু বন্ধের দিনে পরিদর্শন করা হয়েছে, তাই এ টাকা দেয়া যুক্তিযুক্ত হবে না বলেই আপিল করেছি। ৪৫ লাখ দিতে পেরেছি, বাকি ২০ লাখ টাকাও পরিশোধ করার সামর্থ্য আমার আছে।’
পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না নিয়ে কারখানা সম্প্রসারণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে আমার ডায়িং কারখানার কথা বলা হয়েছে। বর্জ্য পরিশোধনে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এ ডায়িং কারখানায়। এর সব নথি আমরা পরিবেশ অধিদফতর এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি।’
উল্লেখ্য, সাভারে অবস্থিত পোলো কম্পোজিট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। এ কারখানায় উত্পাদিত নিটিং পণ্য ইউরোপীয় দেশগুলোয় রফতানি হয়। ২০১২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানির টার্নওভার ছিল ২ হাজার ৪৫৭ মিলিয়ন টাকা। একই বছর প্রতিষ্ঠানটি ১৩৪ মিলিয়ন টাকা মুনাফা করে। একই সময়ে সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯৪৩ মিলিয়ন টাকা। পোলো কম্পোজিট এজেআই গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। অনন্ত জলিল এজেআই গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।