সব আয়োজন সম্পন্ন হওয়ার পরও বুধবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করা যায়নি।
বুধবার সন্ধ্যায় ফাঁসির রায়ের কপি ট্রাইব্যুনাল থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী জানান, ট্রাইব্যুনাল পাঠানো রায়ের কপি কারা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ (রিসিভ) করেছে। রায়ের কপি পাওয়ার পর আসামিকে পড়িয়ে শোনানো হয়েছে। আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কি না, এ জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
কারা অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, রায়ের কপি পাওয়ার পর কারাগারের ৮ নম্বর সেলে বন্দী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পড়িয়ে শোনানো হয়। এ রায় শোনার পর কামারুজ্জামানের কাছ থেকে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি না-জানতে চায় কারাকর্তৃপক্ষ। প্রত্যুত্তরে কামারুজ্জামান বলেন যে, এর কোনো সময় আছে কি না, নাকি এখনই জানাতে হবে? যদি সময় থাকে তাহলে তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
বুধবার রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কামারুজ্জামানের সঙ্গে তার আইনজীবীদের সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছে। এই অনুমতির কারণে বুধবার কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করতে পারেনি কারাকর্তৃপক্ষ। কামারুজ্জামানের আইনজীবী শিশির মো. মনিরও সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নেছার আলী সাংবাদিকদের জানান, রায়ের কপি পাওয়ার পর মার্সি পিটিশন (প্রাণভিক্ষার আবেদন) কামারুজ্জামানকে দেয়া হয়েছে। কামারুজ্জামান যদি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান তাহলে তিনি তাতে স্বাক্ষর করবেন। আর না করলে তিনি তা অবহিত করবেন।
এর আগে বুধবার দুপুরে ৩৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতিসহ চার বিচারপতি। বুধবার সন্ধ্যা ৫ টা ৫০ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আফতাবউজ্জামান রায়ের কপিটি কারাগারে নিয়ে যান। সেখানে তিনি সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলীর কাছে রায়ের কপিটি হস্তান্তর করেন।
কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বুধবার দুপুরে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ প্রদত্ত রায়টি অদ্যই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাওয়া যায়। উক্ত রায়ে আসামি মুহাম্মদ কামরুজ্জামানকে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গত (এর আগের) রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এমতাবস্থায় কারাবিধি এবং International Crimes Tribunal আইন ১৯৭৩ এর ২০(৩) উপধারা অনুযায়ী উক্ত মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার ক্ষমতা সরকারকে দিয়েছে। সেহেতু উক্ত দণ্ডাদেশ কার্যকর করণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।’
এর আগে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মুস্তাফিজুর রহমান মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে কারা অধিদপ্তরের আইজি (প্রিজন্স), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠান।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।
তথ্য সূত্রঃ বাংলামেইল২৪ডটকম