ভারতের মুম্বাই এর সংগঠিত অপরাধ চক্রের প্রধান দাউদ ইব্রাহিম কাসকার। যিনি দাউদ ইব্রাহিম নামেই বেশি পরিচিত। তার সিন্ডিকেটের নাম হলো ডি কম্পানি। তিনি সংগঠিত অপরাধের জন্য ইনাটারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় এবং মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস-এর বিশ্বের শীর্ষ পলাতক অপরাধীদের ২০১১ এর তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। ২০০৮ সালেও তিনি ফোর্বস-এর তালিকায় চতুর্থ স্থানে ছিলেন।এছাড়া ভারতীয় পুলিশের পলাতক অপরাধীদের তালিকায়ও তার নাম শীর্ষে।
দাউদ ইব্রাহিমের দলে প্রায় ৫ হাজার সদস্য রয়েছে যারা মাদক চোরাচালান থেকে শুরু করে খুন, অপহরন এর মত কাজ করে থাকে। ছোটা শাকিলকে দাউদ ইব্রাহিম এর ডান হাত হিসেবে ধরা হয়। তাদের কর্মক্ষেত্র ভারত, পাকিস্তান ও সংযুক্ত অরব অমিরাত।
১৯৯৩ সালে ১২ মার্চ মুম্বাই স্টক এঙ্চেঞ্জে এক সিরিজ বোমা বিস্ফোরণে ৩১৫ জন (সরকারি হিসেবে ২৫৭ জন) লোক নিহত হয়। এর জন্যও দাউদ ইব্রাহিমকে অভিযুক্ত করা হয়। ২১ মার্চ ২০১৩ সালে ইন্ডিয়ান সুপ্রীম কোর্ট এক নিরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারে এই বোমা হামলায় দাউদ ইব্রাহিম সরাসরি জরিত ও তিনি পাকিস্তানে আত্মোগোপন করে আছেন যাদিও পাকিস্তান সরকার ভারতের এই দাবি বারবার অস্বীকার করে আসছে।
পুলিশের প্রধান কন্সটেবল ইব্রাহিম কাসকারের পুত্র দাউদ ১৯৫৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভারতের মহারাষ্ট্রের কনকান অঞ্চলের রত্নগিরি জেলার মামকা গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি মূলত কনকানি মুসলমান সম্প্রদায় থেকে এসেছেন। তিনি প্রথমে মুম্বাই এর করিম লালা গ্যাং এ কাজ করতেন এবং পরে সংযুক্ত অরব আমিরাতের দুবাই চলে যান এবং সেখান থেকেই তার অপরাধের সম্রাজ্য বিস্তৃত করতে থাকেন। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৭.৫ হাজার কোটি রুপী। শিপিং, এয়ারলাইন্স ও অন্যান্য ক্ষেত্রে তাঁর বিনিয়োগ আছে এবং ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে তাঁর ব্যবসার স্বার্থ
দাউদের মেয়ে, মাহরুখ ইব্রাহিম পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াদাদ এর ছেলেকে বিয়ে করেন। যুক্তরাজ্যে লেখাপড়ার সময় তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। ২০০৯ সালের ৩০ মার্চ দাউদের ভাই নোরা ঘুমের মধ্যে মারা যায়। এছাড়া আরেক ভাই আনিস ইব্রাহিমও মুম্বাই হামলার অন্যতম আসামী।
দাউদের থেকে ১০ বছরের ছোট ভাই ইকবাল কাসকার মুম্বাইয়ে দাউদের ব্যবসা দেখাশোনা করেন। ইকবাল ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত একটা হত্যা মামলায় চার বছর জেল খেটেছেন। মীরা রোড, ভাইয়ান্দার ও মধ্য মুম্বাইয়ের রিয়েল এস্টেটে তাঁর বিনিয়োগ আছে বলে শোনা যায়। দাউদের বোন ৫২ বছর বয়স্কা হাসিনা পারকার ২০০৩ সালে আমিরাত থেকে ইকবালের প্রত্যাবর্তনের আগ পর্যন্ত দাউদের সাম্রাজ্য চালিয়েছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদীর আসন পাকা হতেই ঠিকানা বদল করে ১৯৯৩ সালের মুম্বাই বিস্ফোরণের মাস্টারমাইন্ড আন্তর্জাতিক ডন দাউদ ইব্রাহীম।
মঙ্গলবার এমন তথ্য উঠে এসেছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে। আর এ সংবাদটি ফলাও ভাবে প্রচার করেছে ভারতীয় একটি সংবাদ মাধ্যম।
গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিজেকে বাঁচাতে কুখ্যাত অপরাধী দাউদ ইব্রাহীম বর্তমানে পাক-আফগান সীমান্তের কোনও অখ্যাত জায়গায় ঘাঁটি গড়েছে।
শুধু দাউদ নয়, মুম্বাইয়ে অন্ধকার জগতের আরেক ডন পাণ্ডারাও আস্তানা বদল করছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।
সোমবার ভাবী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনা করেন আইবি’র প্রাক্তন ডিরেক্টর অজিত দোভাল। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর সামনে বর্তমান সন্ত্রাসবাদী চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, নির্বাচনের আগে হাই ভোল্টেজ প্রচার চালানোর সময় এক গুজরাটি সংবাদমাধ্যমে দাউদ দমনের হুঁশিয়ারি দিয়ে ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ক্ষমতায় আসার পর মোদী সেই হুশিয়ারিকেই বাস্তবে কার্যকর করতে পিছ পা হবে না বলেই গোয়েন্দা মহলের অভিমত। তার বিরুদ্ধে কমান্ডো অপারেশন চালানো হবে বলে মনে করছে খোদ আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন ও।