Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রবাসীর স্ত্রীসহ ৩ জনকে রশিতে বেঁধে নির্যাতন

Shatkheraলোকলজ্জায় নিজের মুখ লুকিয়ে রেখেছেন গৃহবধূ সুমাইয়া খাতুন। আর খালাতো বোন রুমা খুঁজছেন আত্মহননের পথ। তার স্বামী জাহিদও ঘরের বাইরে আসতে পারছেন না। ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরার কলারোয়ায়।

অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্ত্রী, তার খালাতো বোন ও বোন জামাইকে প্রকাশ্যে রশি দিয়ে বেঁধে, বাঁশের লাঠি ও কুঠালের আছাড় দিয়ে পিটিয়ে নির্যাতন করেছে একদল সন্ত্রাসী। কান ধরে ওঠবস করিয়ে তাদের গ্রামে আর ফিরে না আসার শর্তে তাড়িয়ে দিয়েছেন।

chardike-ad

এদিকে, বর্বরোচিত নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ সুমাইয়া লোকলজ্জা আর ভয়ে বাবার বাড়িতে নিজেকে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি করে রেখেছেন। অপরদিকে খালাতো বোন ও বোন জামাই সামাজিক দুর্নাম ও নির্যাতন মাথায় নিয়ে এখন আত্মহননের পথ খুঁজছেন।

নির্যাতনের ঘটনাটি বেশ কয়েক দিন আগের হলেও উভয়পক্ষ তা নিজ নিজ কারণে প্রকাশ করেনি। অবশেষে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সন্ত্রাসীরা বাঁচতে এখন পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের দ্বারস্থ হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, উভয় পক্ষকে ম্যানেজ করে এরই মধ্যে তারা বেশ সময় কাটিয়ে দিয়েছে। মামলায় নির্যাতনকারী কুদ্দুস নামের একজন গ্রেফতার হলেও এক প্রভাবশালীর বদৌলতে আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।

নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ডা. আবদুল আজিজের মেয়ে সুমাইয়া খাতুন জানান, প্রায় ১২ বছর আগে পার্শ্ববর্তী কেড়াগাছি ইউনিয়নের পাঁচপোতা গ্রামের হেজো মোড়লের ছেলে হাফিজুলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। হাফিজুল গত তিন বছর যাবত মালয়েশিয়া প্রবাসী।

সুমাইয়া আরো জানায়, স্বামীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে একই গ্রামের ইব্রাহীমের ছেলে ট্রলিচালক বিল্লাল হোসেন তাকে প্রায়ই উত্যক্ত করতো। তার মোবাইল ফোন নম্বর চেয়েও না পাওয়ায় সে আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সুমাইয়া সম্পর্কে বিল্লালের মামী। তার খারাপ প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে বিল্লাল তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অশোভন কথা বলে বেড়াতো।

এদিকে, কিছুদিন আগে মালয়েশিয়া থেকে বাড়ি ফিরে আসা তার ভাসুর মোস্তফা মোড়লের সঙ্গে তার স্বামীর জমির সীমানা নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। ভাগনে বিল্লাল এই সুযোগে তার মামা মোস্তফার পক্ষ নিয়ে সুমাইয়া সম্পর্কে আরো বেশি করে কটূক্তি করতে থাকে। এ ঘটনার পর মাস চারেক আগে ভাই ওমর শরিফ তার বোন সুমাইয়াকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

সুমাইয়া বলেন, গত ২৭ অগাস্ট মেয়ে ঈশিতা রুপা ও তার খালাতো বোন কলারোয়ার ব্রজবাকসা গ্রামের আকরাম সরদারের মেয়ে রুমা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যান। এরপর ২৯ আগস্ট রুমার স্বামী জাহিদুল ইসলামও আসেন তাদের বাড়িতে। দুপুরে তারা যখন একই ঘরে রান্নার কাজে ব্যস্ত সে সময় তার বাড়িতে ঢুকে পড়ে বিল্লাল, গোলাম মোস্তফার ছেলে রুহুল কুদ্দুস, ভাসুর মোস্তফা মোড়ল, জিয়া, জোহর, লাল্টু, ভোলা, ইসমাইল, ইমান মুহুরি, আশরাফুল, কওসারসহ বেশ কয়েকজন।

এ সময় তার বোন রুমা ও জাহিদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তাদের নিজের বোন ও বোন জামাই বলে পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় তারা তাদের বিয়ের কাগজপত্র দেখতে চায়।

রুমা জানান, দেড় বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছে। কাগজপত্র তো সব সময় সঙ্গে থাকে না।

সুমাইয়া জানায়, মুহূর্তেই তারা বলেন, ৫০ হাজার টাকা নগদ দিন, তাহলে আমরা কোনো ক্ষতি করবো না। এতে আপত্তি জানাতেই তারা ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করতে থাকে। এ সময় যে যার মতো নগদ টাকা, গলার চেইন, মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়।

কুদ্দুস সুমাইয়ার  মুখে কয়েকটি চড় বসিয়ে মজা করে। তারা গরু বাঁধার রশি এনে তিনজনকেই হাতে ও পিঠে বেঁধে টানতে টানতে ঘরের বাইরে এনে বাঁশের লাঠি ও কুঠালের আছাড় খুলে মারপিট শুরু করে। টানতে টানতে নিয়ে যায় প্রতিবেশি পুলিশিং কমিটির সদস্য ইসমাইলের বাড়িতে। একইভাবে সেখানেও মারধর করার পর তাদের একশ বার কান ধরে ওঠবস করার শাস্তি ঘোষণা করা হয়।

বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে আসা ইউপি সদস্য মো. ফারুক হোসেন জানান, তিনি তাদের লাঠি কেড়ে নিয়ে ওড়না ও রশির বাঁধন খুলে দেন। এরপরই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সুমাইয়া।

সুমাইয়ার ভাই ওমর শরিফ জানান, রাত ১২ টায় জানতে পারেন তার বোনের ওপর নির্যাতনের কথা। রাতেই তিনি ও তার কাকা মফিদুল ইসলাম তাকে কলারোয়া হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এদিকে, লোকলজ্জা এবং পরবর্তী বিপদের আশঙ্কায় সব নির্যাতনের কথা চেপে রেখে ঘটনার কয়েকদিন পর ৬ সেপ্টেম্বর সুমাইয়া বাদি হয়ে কলারোয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে সুমাইয়া বলেন, দারোগা মোয়াজ্জেম হোসেনকে যা বলেছি তা তিনি লেখেননি। মামলায় নাম দিয়েছিলাম ২০ জনের কিন্তু লেখা হয়েছে মাত্র ৩জনের নাম।

কলারোয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এফআইআরভুক্ত আসামি  হচ্ছে রুহুল কুদ্দুস, বিল্লাল ও ইসমাইল। এছাড়া অজ্ঞাত হিসেবে আরো ২/৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

কেড়াগাছি ইউপি চেয়ারম্যান ভুট্টোলাল গাইন জানান, তিনি ঘটনা জানার পর সেখানে গিয়ে সুমাইয়াকে মামলা করার পরামর্শ দেন।