টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে মা ও ছেলেকে বিবস্ত্র করে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনার মূলহোতা হাফিজ উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় এ পর্যন্ত দুজনকে গ্রেফতার করা হলো। আর নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। সেই মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে কয়েকজন আহত হন।
পরে লাঠিচার্জের প্রতিবাদে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক প্রায় এক ঘন্টা অবরোধ করে রাখে বিক্ষোভকারীরা। এলাকার মহিলারাও এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। এদিকে অপমান সইতে না পেরে নির্যাতিত মা বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
কালিহাতী থানার ওসি শহীদুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকালে কালিহাতী পৌর এলাকার সাতুটিয়া থেকে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি হাফিজ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে টাঙ্গাইল কোর্টে চালান করে দেয়া হয়।
এর আগে অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম রোমাকে ঘটনার দিনই গ্রেফতার করা হয়। পরে আদালতে তোলা হলে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ন্যাক্কারজনক এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ মিছিল করেন এলাকাবাসী। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কালিহাতী বাসস্ট্যান্ডে মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়।
এতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর এলাকাবাসী পুনারায় সংঘবদ্ধ হয়ে মিছিল শুরু করলে পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ করে। এতে কয়েকজন আহত হয়। এ ঘটনায় এলাকাবাসী আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।
পরে কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুলিশের লাঠিচার্জের বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা শান্ত হন। চেয়ারম্যান চলে যাওয়ার পর এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে স্থানীয় লোকজন আবার সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে মিছিল বের করেন। একপর্যায়ে তারা কালিহাতী বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়ে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এসয়ম গ্রেফতাকৃত হাফিজের কুষপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিষয়টির চুড়ান্ত সমাধানের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার টাঙ্গাইল (উত্তর) শরীফুল ইসলাম এবং গোপালপুর সার্কেলের এএসপি জমির উদ্দিন ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
অন্যদিকে অপমানের যন্ত্রণা সইতে না পেরে নির্যাতিতা মা বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
ওই মা মুঠোফোনে কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘এই জীবন রাইখা কী করমু? আমার এই জীবন থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। ওরা আমার ইজ্জত-সম্মান সব শেষ কইরা দিছে!’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুরে কালিহাতী পৌর এলাকার সাতুটিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম রোমা তার লোকজন নিয়ে ঘাটাইলের এক শ্রমজীবী ছেলে ও তার মাকে বাড়ির উঠোনে বিবস্ত্র করে অমানবিক নির্যাতন করে। এ ঘটনায় কালিহাতী থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার মূলহোতাসহ পুলিশ এ পর্যন্ত দুজনকে গ্রেফতার করেছে।