Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্যারিস থেকে জীবন ফিরে পেলেন বাংলাদেশি যুবক

paris-bangladeshiঘড়ির কাটায় কাঁটায় রাত তখন ৯টা ৪৯ মিনিট। প্রতিদিনের মত বিকেলের শিফটে কাজ করেছিলাম প্যারিসের বাতাক্লঁ কনসার্ট হলের কাফি বারের পিছনে। সাথে কাজে করছিলো সেফ ক্রিস্তফো, প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বেখতন, সার্ভিসম্যান মাকু ও ইবন। পাশের বাতাক্লঁ থিয়েটারে তখন চলছিলো ব্যান্ড সু। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে ভড়কে যাই আমি। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুরো থিয়েটার গুলির শব্দে একাকার হয়ে উঠে। উকি মেরে দেখতে পাই সন্ত্রাসীদের তান্ডব।

প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বেখতন আমাদেরকে নিরাপদে স্টোর রুমে ডুকার নির্দেশ দেন। আমরা সাথে সাথে স্টোর রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দেই। সেই সাথে আল্লাহকে ডাকতে থাকি। এ সময় আমরা মানুষের গগনবিধারী চিৎকার আর সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলির শব্দ শুনতে পাই। জীবনের প্রথম এ রকম পরিস্থিতির রোষানলে পড়ি। স্টোর রুমের ভিতরে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি।

chardike-ad

আমাদেরকে তখন সাহস যোগান বেখতন। তিনি পুলিশের কাচে আমাদের অবস্থানের কথা মোবাইলে জানান। পুলিশ বেখতনকে পরামর্শ প্রদান করে। এক পর্যায়ে সবকিছু নিরব নিস্তব্দ হয়ে যায়। পরে প্রায় দেড় ঘন্টার পর মা বাবা, দেশবাসীর দোয়ায় পুলিশী সহায়তায় আমরা মুক্ত হই।

এই ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন নির্ঘাত মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাঘা এলাকার গোলাপনগর বড়বাড়ির মুক্তিযোদ্ধা তুতা মিয়া ও ফাতেমা বেগমের একমাত্র ছেলে তারেক আহমদ (৪০) । এ ঘটনায় শুধু বাতাক্লঁ থিয়েটারে নিহত হয়েছে ৮৯ জন।

তারেক আহমদ ৯৩ সালে এসএসসি পাশ করেন এমসি একাডেমি থেকে। সিলেট মদন মোহন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরবর্তিতে এইচএসসি ও ডিগ্রী পাশকরেন। ১ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তারেক সবার বড়। জীবন জীবিকার তাগিদে ২০০৩ সালে ফ্রান্স আসেন। ২০০৭ সালে প্যারিসে স্থায়ী ভাবে বসবাস করার সুযোগ পান। দেশে রয়েছেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী শারমিন আক্তার।

এই লোমহর্ষক ঘটনার যখন বর্ণনা দিচ্ছিলেন তারেক আহমদ তখন বার বার এক অজানা আতংক তার চোখে মুখে ফুটে উঠেছিল। তারেক জানান, বাতাক্লঁ থিয়েটারের বারে আমি ৭ বছর ধরে একাধারে কাজ করে চলেছি। বিকেলের শিফটে প্রতিদিন ৫টা থেকে রাত ১২/১ টা পর্যন্ত কাজ করতাম। এখানে কাজের সুবাদে অনেকের সাথে একটা হৃদিক সম্পর্ক হয়ে গেছিলো।

বিভিন্ন দেশের লোকজন এখানে কাজ করতো। একমাত্র বাংলাদেশি ছিলাম আমি। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা গেছে। অনেকে আহত হয়েছে। বিশেষ করে থিয়েটারে কাজ করতো নাতালির মৃত্যুটা আমাকে বেশি কষ্ট দিয়েছে। মেয়েটি খুব ভালো ছিলো। ওকে গুলি করতে দেখেছি আমি। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই ঝাঝরা হয়ে গেছিল তার শরীর। সার্ভিসম্যান লুইও গুলি খেয়েছে। তবে মারা যায়নি সে। গুরুতর আহত হয়ে ভাগ্য চক্রে বেঁচে গেছে ।

প্যারিসের লা প্লেইনের রুই লান্দির ১২নং বাসায় কথা হলে তারেক জানান, আমি বেঁচে আছি এটা বিশ্বাস করতে পারছিনা, কি ভাবে বেঁচে গেলাম! ডাক্তার বলেছে রেস্ট নেয়ার জন্য। পুলিশ এসে গাড়িতে করে নিয়ে গেছিলো থানায়। ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসবাদ করে বাসায় রেখে গেছে। প্রয়োজনীয় পরামর্শ অনুযায়ী চলতে বলেছে। এরূপ পরিস্থিতির স্বীকার যাতে আর কেউ না পড়ে সেই দোয়া করি। তারেক দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন।