সেই ১৯১৩ সালে দাদাসাহেব ফালকের প্রযোজিত চলচ্চিত্র রাজা হরিশ্চন্দ্র দিয়ে শুরু। বর্তমানে চলচ্চিত্র জগতে পৃথিবীর কাছে হলিউডের পর যে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে সেটি হচ্ছে বলিউড। হিন্দী ভাষার ছবির প্রভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে গোটা বিশ্বে। মানুষ খুব তাড়াতাড়ি আকড়ে ধরছে ভারতীয় চলচ্চিত্রকে। এর ধারাকে। শুধু প্রতিবেশী দেশগুলোতেই নয়, হিন্দী গান, নাচ, পোশাক, কাহিনি থেকে শুরু করে এর তারকারাও প্রচন্ড আবেদন তৈরি করে তুলছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
সালমান খান অভিনীত বাজরাঙ্গী ভাইজানের কথাই ধরুন না, পৃথিবীর পঞ্চাশটিরও বেশি দেশে দারুণ আড়োলন তুলল কয়দিন আগেই। ছবিটি ভারতীয় চলচ্চিত্রকে নতুন করে বলিউডের ছবিকে বর্হিবিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে। জয় করে নিয়েছে অসংখ্য মানুষের মন।
কেবল দেশের বক্স অফিসেই নয়, বিদেশেও ভালো ব্যবসা করেছে বলিউডের চলচ্চিত্রগুলো। তাদের ব্যবসা সফল সিনেমার সংখ্যা নেহায়েতেই কম নয়। পরিসংখ্যানের বিচারে যে সিনেমাগুলো দর্শক মাতিয়ে সেরা ব্যবসাসফল সিনেমার খেতাব জিতে নিয়েছে তেমনি সেরা দশ সিনেমা নিয়ে আজকের এ প্রতিবেদন।
১। পিকে
বলিউড খানদের ভেতরে পার্ফেকশনিস্ট খান আমির খান অভিনীত এই চলচ্চিত্রেটির শুরুটা হয় দুর্দান্তভাবে। এ চলচ্চিত্রে আমির ছাড়াও অভিনয় করেছেন আনুশকা শর্মা, সুশান্ত সিং রাজপুত, বোমান ইরানী, সঞ্জয় দত্তসহ অনেক জনপ্রিয় মুখ। কেবল এই তারকাদের জনপ্রিয়তাই নয়, ছবিটির অসাধারন কাহিনি একে এর তৃতীয় রবিবারেই নিয়ে যায় ৩০০ কোটির ক্লাবে। তবে এটা তো কেবলই শুরুর কথা। এরপর ধীরে ধীরে তিনশর দ্বিগুনকেও ছাড়িয়ে যায় পিকের ব্যবসা। ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি ভারতে ৪৮৯ এবং দেশের বাইরে ৩০৩ কোটি টাকা আয় করে নেয় খুব সহজেই। শেষ পর্যন্ত সব মিলে এর আয় দাড়ায় ৭৯২ কোটি। ২২টি আর্ন্তজাতিক স্থানে একসঙ্গে মুক্তি পায় চলচ্চিত্রটি। নিজের প্রথম সপ্তাহেই ঘরে তোলে ২৮.৭ মিলিয়ন টাকা। আর অর্জন করে নেয় সারা বিশ্বের সবচাইতে ব্যবসাসফল ছবিগুলোর তালিকার তৃতীয় অবস্থান। সে সপ্তাহে হলিউডের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র দ্যা হবিটের পরেই নিজের জায়গা করে নেয় সিনেমাটি।
২। বাজরাঙ্গী ভাইজান
বিশ্বজুড়ে মুক্তির পরপরই আলোড়ন তৈরি করে বলিউডের আরেক চলচ্চিত্র বাজরাঙ্গী ভাইজান। এ ছবিতে অভিনয় করেছেন বলিউডের আরেক জনপ্রিয় খান সালমান খান। ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সিনেমাটি। মুক্তির মাত্র ৯ দিনের ভেতরেই ২০০ কোটির ক্লাবে প্রবেশ করে ছবিটি। আয়ের পরিমাণের দিক থেকে হ্যাপি নিউ ইয়ার এবং থ্রি ইডিয়টসের পিছনে ফেলে এটি। সেই সঙ্গে অনেকগুলো রেকর্ড ভেঙে দিয়ে আয় করে নেয় সর্বমোট ৬২৬ কোটি টাকা।
৩। ধুম থ্রি: ব্যাক ইন এ্যাকশন
অন্য সব ছবির চাইতে খানিকটা বেশিই ছিল ধুম সিরিজের তৃতীয় এই ছবিটির নির্মান খরচ। এটি তৈরি করতে প্রযোজকের মোট খরচ হয় ১.৫ কোটি টাকা। এতেও অভিনয় করেন আমির খান। এতে তার সঙ্গে ছিলেন ক্যাটরিনা কাইফ, অভিষেক বচ্চনসহ আরো অনেক বিখ্যাত শিল্পীরা। মাত্র দুই সপ্তাহে ৫৩৩ কোটি টাকা আয় করে নিয়ে ভারতীয় চলচ্চেত্রের অনেকগুলো রেকর্ড নিজের করে নেয় এটি। এমনকি আরেক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র চেন্নাই এক্সপ্রেসের আয়কেও টপকে যায় এই চলচ্চিত্র। দেশ ও বিদেশে ছবিটির মোট আয় দাড়ায় ৫৪২ কোটি রুপি।
৪। চেন্নাই এক্সপ্রেস
অন্যান্য ভারতীয় ছবির রেকর্ডের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে ২০১৩ সালের সবচাইতে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র হিসেবে জায়গা করে নেয় শাহরুখ খান অভিনীত চেন্নাই এক্সপ্রেস। শাহরুখ খান অভিনীত সিনেমাটিতে তার সঙ্গে অভিনয় করেন দিপীকা পাড়ুকোন। রোহিত শেঠীর পরিচালনায় ও শাহরুখের নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রেড চিলিসের প্রযোজনা থেকে তৈরি হয় চেন্নাই এক্সপ্রেস। ছবিটি তৈরি করতে ৭৫ কোটি টাকা খরচ হলেও দেশে বিদেশে মোট আয় করে ৪২২ কোটি রুপি।
৫। থ্রি ইডিয়টস
২০১৩ সালে চেন্নাই এক্সপ্রেস মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্বে ভারতীয় চলচ্চিত্রের ভেতরে সবচাইতে ভালো ব্যবসা করা ছবি হিসেবে এক নাম্বারে ছিল থ্রি ইডিয়টস। আমির খান, মাধবন, সারমান যোশি, কারিনা কাপুর ও বোমান ইরানী অভিনীত এ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ২০০৯ সালে। এরপর থেকে একাধারে ২০১৩ সাল অব্দি সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমাগুলোর তালিকার প্রথমে ছিল এর অবস্থান। তবে এরপর চেন্নাই এক্সপ্রেস, ধুম এবং সর্বশেষ পিকে ভেঙে দেয় থ্রি ইডিয়টসের গড়া আয়ের রের্কড। বর্তমানে সেরা সফল সিনেমার তালিকার পাঁচে এর অবস্থান। ৩৫ কোটি খরচ করে নির্মিত চলচ্চিত্রটি মোট আয় ৩৯৫ কোটি রুপি।
৬। হ্যাপি নিউ ইয়ার
শাহরুখ খান ও দিপীকা পাড়ুকোন জুটি অভিনীত এই চলচ্চিত্রটি মুক্তির প্রথম দিনেই চমকে দেয় সবাইকে। এক ধাক্কায় আর সবাইকে কুপোকাত করে দিয়ে প্রথম দিনেই মোট ৪৫০ মিলিয়ন রুপি আয় করে। যা কিনা যে কোনো হিন্দী ছবির জন্য অবাক করার মতন। প্রধান দুই অভিনেতার পাশাপাশি ফারাহ খানের এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন বোমান ইরানি, সোনু সুদ ও অভিষেক বচ্চন। ১.৫ কোটির এই সিনেমা ব্যবসা করে পুরো বিশ্বে মোট ৩৮৩ কোটি রুপি।
৭। প্রেম রতন ধন পায়ো
সালমান খান বাজরাঙ্গী ভাইজানের পর এ বছরই আবার নিজের প্রেম রতন ধন পায়ো ছবিটির মাধ্যমে আবার চলে এসেছেন রেকর্ড ভেঙে দেওয়া ব্যবসাসফল ভারতীয় চলচ্চিত্রের তালিকায়। এ ছবিতে তার সঙ্গে আরো অভিনয় করেছেন সোনম কাপুর। চলচ্চিত্রটিতে সালমানকে দ্বৈত চরিত্রে দেখা যায়। যেখানে একটিতে রাজকুমার আর অন্যটিতে সাধারন এক বাজনাদার হিসেবে অভিনয় করেছেন সল্লু। মুক্তির আগেই ছবিটির গানগুলো জয় করে দর্শক মন। খুব বেশিদিন হয়নি মুক্তির। এখন পর্যন্ত ভারতসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে প্রদর্শিত হচ্ছে ছবিটি। এরই মধ্যে এর আয় দাড়িয়েছেন ভারতে প্রায় চারশ কোটি রুপি। ছবিটির নির্মাণ ব্যয় ৮০ কোটি।
৮। কিক
সেরা ব্যবসা সফল সিনেমার এই সিরিয়ালেও রয়েছেন সালমান! ২০১৪ সালের সবচাইতে প্রতিক্ষীত চলচ্চিত্র ছিল সালমান খানের কিক। এতে তার সঙ্গে অভিনয় করেন জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ। সবার হিসেব ছিল এ ছবিটি দারুণ ব্যবসা করবে বক্স অফিসে। মুক্তির পর এই ধারণাটির প্রমাণ করেছে। শুরুর প্রথম দুই সপ্তাহেই আর সব ছবিকে ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যায় চলচ্চিত্রটি। ছবিটি সর্বোমোট ব্যবসা করে ৩৯০ কোটি রুপি। যার মধ্যে বিদেশে আয় ছিল ৬৮ কোটি এবং দেশের আয় করে ৩২২ কোটি রুপি।
৯। ক্রিশ ৩
অনেক তো হল খানদের গল্প। এবারের গল্পটা অন্য একজনের। আর সে অন্য একজন হচ্ছেন বলিউডের হার্টথ্রব হৃত্বিক রোশন। কেবল চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই নয়, নিজের নাচ আর অসাধারন ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে অনেক আগেই বলিউডকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন হৃত্বিক। আর এ সিনেমাটিতে সুপারহিরো হৃত্বিকের দেখা মেলে। এতে আরো দেখা মেলে কুইনখ্যাত অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত আর হলিউড ও বলিউডকে সমানভাবে মাতিয়ে রাখা গায়িকা ও নায়িকা প্রিয়াংকা চোপড়ার। চলচ্চিত্রে বাবা ও ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেন হৃত্বিক। এর আগে ক্রিশ সিরিজের ছবিগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখে সিরিজের তৃতীয় চলচ্চিত্রটিও। ১১৫ কোটি রুপি বাজেটের এ চলচ্চিত্রটি দেশ ও বিদেশ মিলে মোট আয় করে নেয় ৩৭৪ কোটি। যেটি কিনা যেকোন চলচিত্রের জন্যেই ঈর্ষনীয়।
১০। ব্যাং ব্যাং
এবারের গল্পটাও হৃত্বিকের চলচ্চিত্র ব্যাং ব্যাং-এর। এতে তার সঙ্গে অভিনয় করেন আরেক পর্দা কাঁপানো অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফ। চলচ্চিত্রটি নির্মাণে ১৪৫ কোটি খরচ হয় আর এটি মোট আয় করে নেয় ৩৪১ কোটি টাকা।
এ তো গেল বলিউডেরে সেরা দশ ব্যবসা সফল সিনেমার কথা। তবে বলিউডের সিনেমাগুলো যে বরাবরই ভালো ব্যবসা করে তার প্রমাণ হচ্ছে এর লম্বা তালিকা। ভালো ব্যবসা করেছে এ তালিকায় রয়েছে বেশ কিছু ছবি। যেমন- এক থা টাইগার (৩২০ কোটি), ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি (৩১১ কোটি) ও দাবাং টু (২৬৫ কোটি) প্রভৃতি।